চট্টগ্রাম ওয়াসা’র মাসে ক্ষতি সাড়ে ৩ কোটি টাকা by মহিউদ্দীন জুয়েল

পানি উৎপাদনে চট্টগ্রাম ওয়াসার ক্ষতি প্রতি মাসে সাড়ে ৩ কোটি টাকা! বর্তমানে চাহিদার বিপরীতে প্রতি ১০০০ লিটার পানি উৎপাদনে খরচ হচ্ছে ১৫ টাকা। কিন্তু সেই ব্যয়ের বিপরীতে তা বিক্রি হচ্ছে ৮ টাকা ১৬ পয়সায়। বিশাল এ ক্ষতি সরকারিভাবে মেটানো সম্ভব না হওয়ায় কর্তৃপক্ষ নিজস্ব অর্থায়ন থেকে তার যোগান দিচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে। চট্টগ্রাম ওয়াসা সূত্র জানায়, ৪০ লাখ লোকের বিশাল এ শহরে ৪০ শতাংশ মানুষ তাদের পানির আওতায় রয়েছে। এর ভেতর আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকায় প্রতিদিন ১৯০ মিলিয়ন (১০ লাখ) মিটার পানি তারা সরবরাহ করছে। এর বিপরীতে চাহিদা রয়েছে ৫০০ মিলিয়ন। আবাসিক এলাকায় ওয়াসার পানি বিক্রি হচ্ছে ৬ টাকা ৯০ পয়সা দরে। আর বাণিজ্যিক এলাকায় তা বিক্রি হচ্ছে ১৯ টাকা ৫৫ পয়সায়। গত কয়েক বছর ধরে ওয়াসার পানি উৎপাদনের ব্যয় অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে কর্তৃপক্ষকে যোগান দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এই ব্যাপারে সরকারিভাবে কোন ধরনের সহযোগিতা কিংবা উদ্যোগ দেখা না যাওয়ায় নিজেরাই ব্যয় মেটানোর চেষ্টা করছেন। এই ক্ষেত্রে শহরতলির বিভিন্ন এলাকায় গভীর নলকূপ স্থাপন ও সরঞ্জামাদি বিক্রি বাবদ কর্তৃপক্ষ ক্ষতি মিটিয়ে আসছে। ওয়াসার কয়েকজন কর্মকর্র্তা জানান, চাহিদার বিপরীতে পানির মূল উৎসস্থল গভীর নলকূপ। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী ২০১৫ সালে নগরীতে পানির চাহিদা হবে ৫৮০ মিলিয়ন লিটার। নগরীর হালিশহর, আগ্রাবাদ, সিডিএ, বহদ্দারহাট, বাকলিয়া, চকবাজার, কোতোয়ালিসহ একাধিক জায়গায় ওয়াসার সবচেয়ে বেশি পানি ব্যবহৃত হয় বলে জানান তারা। লোকসংখ্যার ঘনত্ব বেশি থাকায় সেখানে পানির ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। এ ক্ষেত্রে কর্মকর্তারা দাবি করেন সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান হওয়ায় পানির উৎপাদন খরচের চেয়ে কম মূল্যে সাধারণ মানুষকে তা দিতে হচ্ছে। কিন্তু সামনে যদি এ ব্যয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় তাহলে চরম আর্থিক সঙ্কটে পড়তে হবে ওয়াসাকে।  একটি সূত্র জানায়, বর্তমানে অর্থ সঙ্কটে থাকা ওয়াসার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দেয়া হচ্ছে এফডিআর ও চলমান প্রকল্পের টাকা থেকে। সেই সঙ্গে পানি উৎপাদনে মোটা অঙ্কের বিদ্যুৎ বিল পরিশোধেও হিমশিম খেতে হচ্ছে। বর্তমানে ওয়াসার গ্রাহক সংখ্যা ৫৮ হাজার। আগামী বছরের জানুয়ারি থেকে ওয়াসা পানির দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ওয়াসার নথিপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, বাণিজ্যিক এলাকার গ্রাহকদের জন্য তাদের উৎপাদন খরচের বিপরীতে পানির দাম পাওয়া যাচ্ছে ৪ লাখ ১০ হাজার ৫৫০ টাকার বেশি। অন্যদিকে আবাসিক এলাকা থেকে যা পাওয়া যাচ্ছে ১৩ লাখ চার হাজার ১০০ টাকা। প্রতিদিন ওয়াসাকে গুনতে হচ্ছে বিশাল পরিমাণ লোকসান। ওয়াসার ইঞ্জিনিয়াররা জানান, সরকারের কাছ থেকে ভর্তুকি মেটাতে কোন ধরনের অর্থ না পাওয়ায় নিজেরাই সঙ্কট মেটাতে চেষ্টা করছেন। মাঝে মধ্যে বিদ্যুতের বিল বেড়ে গেলে সে ক্ষেত্রে ব্যয় আরও বেড়ে যায়। গত কয়েক বছর ধরে এই সঙ্কট চলছে। আগে আর্থিক ক্ষতি কম হলেও এখন তা আরও বাড়ছে। সিনিয়র কর্মকর্তা জানে আলম বলেন, আমরা নানাভাবে অর্থ সঙ্কট মেটানোর চেষ্টা করছি। গভীর নলকূপ থেকে প্রাপ্ত অর্থ এ ক্ষেত্রে সঙ্কট মেটানোর কাজে ব্যয় হচ্ছে। সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হওয়াতে কিছুটা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.