ন্যায়বিচার না পাওয়ার আশংকা বিএনপির

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ন্যায়বিচার পাওয়া নিয়ে আশংকা প্রকাশ করেছে দলটি। এ দুটি মামলা প্রত্যাহার না করা হলে এ ইস্যুতে আন্দোলনে যাওয়ার হুমকিও দিয়েছেন তারা।
মঙ্গলবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দুই মামলায় খালেদা জিয়ার ন্যায়বিচার পাওয়া নিয়ে আশংকা আছে। মামলা দুটি মোকাবেলায় আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি রাজপথে আন্দোলনও অব্যাহত রাখা হবে।
দুই মামলায় হাজিরা দিতে আজ রাজধানীর বকশিবাজারে স্থাপিত বিশেষ আদালতে যাচ্ছেন খালেদা জিয়া। এ উপলক্ষে ব্যাপক শোডাউনের প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। গত কয়েকদিন ধরে ঢাকা মহানগর বিএনপিসহ দলের অন্য অঙ্গসংগঠনগুলো লোকসমাগমে আলাদা প্রস্তুতি সভা করেছে।
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলায় বিশেষ আদালতের বিচারক পরিবর্তনের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিশেষ আদালতের বিচারক বাসু দেবের পরিবর্তনের বিষয়ে ইতিমধ্যে আমাদের আইনজীবীদের দায়ের করা একটি আবেদন হাইকোর্টে বিচারাধীন রয়েছে। বিষয়টি নিষ্পত্তির আগেই সরকার বিচারক পরিবর্তনে প্রমাণ হয়, তারা এটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে করেছে।
তার দাবি, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে চলমান দুটি দুর্নীতি মামলার একটিও আইনসম্মতভাবে চলতে পারে না। হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এ মামলা চালানো হচ্ছে। এর উদ্দেশ্য খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখা। যদি ন্যায়বিচার থাকত, তবে খালেদা জিয়া এ দুটি মামলায় আইনি প্রক্রিয়ায় অব্যাহতি পেতেন। এখন যে পদ্ধতিতে মামলা চালানো হচ্ছে, তাতে ন্যায়বিচার পাওয়ার প্রত্যাশা সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও তার মন্ত্রীরা বিচারাধীন মামলা সম্পর্কে যে ভাষায় কথা বলছেন, তাতে বিচার বিভাগ প্রভাবান্বিত না হয়ে পারে না। আইনমন্ত্রী সম্প্রতি বলেছেন, খালেদা জিয়া যে এখনও বাইরে আছেন, তা সরকারের বদান্যতা। মামলা চলছে আদালতে, এটা সরকারের বদান্যতা হবে কেন? আইনমন্ত্রীর এহেন বক্তব্য প্রমাণ করে যে, তারা বিচার বিভাগকে প্রভাবিত করছে।
ফখরুল বলেন, ন্যায়বিচার না পাওয়ার সুযোগ নেই জেনেও আইনমান্যকারী নেত্রী হিসেবে খালেদা জিয়া আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। এক্ষেত্রে উচ্চ আদালতেও প্রতিকার লাভের সুযোগ ক্রমেই কমে আসছে। সেখানকার ভূমিকায় তারা হতাশ হয়ে পড়ছেন। জনগণের গণতান্ত্রিক ও ভোটের অধিকার এবং ন্যায়বিচারের সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে এনে সরকারের হীন ষড়যন্ত্রের দাঁতভাঙ্গা জবাব দেয়া হবে বলেও হুশিয়ারি দেন তিনি।
বিএনপি চেয়ারপারসন সম্পর্কে দুর্নীতি দমন কমিশনের সদস্য সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, তিনি রাজনৈতিক নেতার মতো কথা বলছেন। তিনি একটি বিশেষ দলের হয়ে কাজ করছেন। তিনি গতকাল রংপুরে একই ভাষায় কথা বলেছেন। দেশনেত্রীর বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা দুটি প্রাইভেট ট্রাস্ট সংক্রান্ত। এ সংক্রান্ত বিষয়ে মামলা করার এখতিয়ার দুর্নীতি দমন কমিশনের নেই। প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ১৫ মামলা প্রত্যাহার করা হলে তার বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে দুদক গিয়েছিল কিনা তা জানতে চান তিনি।
দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ২১ আগস্টসহ বিভিন্ন মামলাও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক দাবি করে ফখরুল বলেন, তিনি লন্ডনে একটি বক্তব্য রেখেছেন, তার বিরুদ্ধে ২০টি মামলা হয়েছে। এভাবে তাকেও রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রাখার জন্য এসব মিথ্যা মামলা দেয়া হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য এমকে আনোয়ার, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল হালিম, কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, শামীমুর রহমান শামীম, আসাদুল করীম শাহিন, রফিক শিকদার প মুখ উপস্থিত ছিলেন।
আদালতে যাওয়া প্রসঙ্গে অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া জানান, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে দুপুর ১২টার দিকে বিএনপি চেয়ারপারসন বকশিবাজারের বিশেষ আদালতে হাজির হবেন। আমরা দুটি মামলায় আইনিভাবে লড়াই করতে প্রস্তুত।
ঢাকায় বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের আজ আদালতে যাওয়ার ব্যাপারে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকেও সতর্ক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

No comments

Powered by Blogger.