বিতর্কিত রায়ের প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিক্ষোভ

ট্রেভন মার্টিন হত্যা মামলার বিতর্কিত রায়ের প্রতিবাদে গত শনিবার
শিকাগোর বিন ভাস্কর্যের সামনে বিক্ষোভ ষ ছবি: এএফপি
কৃষ্ণাঙ্গ তরুণ ট্রেভন মার্টিন (১৭) হত্যা মামলার বিতর্কিত রায়ের প্রতিবাদে শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের অন্তত ১০০টি শহরে বিক্ষোভ হয়েছে। মামলাটিতে বর্ণবাদ সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ এনে বিক্ষোভকারীরা মায়ামি, শিকাগো, লস অ্যাঞ্জেলেস ইত্যাদি বড় শহরে কেন্দ্রীয় বিচার বিভাগীয় দপ্তরের সামনে অবস্থান নেন। ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের স্যানফোর্ডে নাগরিক নিরাপত্তা সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবী জর্জ জিমারম্যান ২০১২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি নিরস্ত্র মার্টিনকে গুলি করে হত্যা করেন। জিমারম্যানের দাবি, তিনি আত্মরক্ষার্থে গুলি করেছিলেন। আদালতের গঠিত ছয় সদস্যের জুরি বোর্ড গত সপ্তাহে তাঁকে নির্দোষ ঘোষণা করে। এই রায়ের প্রতিবাদে দেশজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। নিউইয়র্ক শহরে প্রায় দুই হাজার মানুষ বিক্ষোভে অংশ নেয়। তাদের পরনে ছিল মার্টিনের ছবিসংবলিত টি-শার্ট। নিহত মার্টিনের মা সাইব্রিনা ফুলটনের উপস্থিতি ও নেত্বত্বে ওই বিক্ষোভ একপর্যায়ে আবেগঘন রূপ নেয়। সমাবেশে বক্তব্য দেওয়ার সময় তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। বর্ষীয়ান নাগরিক অধিকারকর্মী রেভারেন্ড অ্যাল শার্পটন এ সময় উপস্থিত ছিলেন। নিহত ট্রেভনের বাবা ট্রেসি মার্টিন সমাবেশে বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, আমার ছেলের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে এই সমাজে পরিবর্তন আসবে। যে আইন কাউকে কেবল সন্দেহের বশেই হত্যা করার সুযোগ করে দেয়, তা বাতিল করতে হবে।’ নিজের গুরুতর বিপদের ঝুঁকি থাকলে কাউকে হত্যা করা যাবে—এ মর্মে একটি আইনের কারণেই বেকসুর খালাস পেয়েছেন জিমারম্যান। জুরি সদস্যসহ অনেকে বলেছেন, অপব্যবহার রোধে এ আইন বাতিল বা সংস্কার করা প্রয়োজন। নিউইয়র্কের সমাবেশে আরও যোগ দেন মার্কিন সংগীত তারকা দম্পতি জে জি ও বিয়ন্স। তাঁদের উপস্থিতিতে বিক্ষোভকারীরা অনুপ্রাণিত হন। মায়ামির বিক্ষোভে অংশ নেন ৩০০ থেকে ৫০০ মানুষ। তবে সেখানে কৃষ্ণাঙ্গরা ছাড়া অন্যদের উপস্থিতি ছিল তুলনামূলক কম। পশ্চিম উপকূলে সিয়াটল, পোর্টল্যান্ড, সানফ্রান্সিসকো, লস অ্যাঞ্জেলেস ও ওকল্যান্ডে শত শত মানুষ বিক্ষোভে যোগ দেয়। বিতর্কিত রায়ের পর লস অ্যাঞ্জেলেস ও ওকল্যান্ডে সহিংসতা হলেও শনিবারের পরিস্থিতি ছিল শান্তিপূর্ণ। শিকাগোতে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে স্প্যানিশভাষী লাতিনোসহ বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মানুষ যোগ দেয়। তবে সেখানে আফ্রিকান আমেরিকানদের প্রাধান্য স্পষ্ট ছিল। সমালোচকেরা বলছেন, কিশোর মার্টিনকে নিয়ে ভুল সন্দেহ করেছিলেন শ্বেতাঙ্গ ও হিস্পানিক বংশোদ্ভূত জিমারম্যান। তিনি মূলত মার্টিনের গায়ের কালো রঙের কারণেই তাঁকে অপরাধী হিসেবে বিবেচনা করেছিলেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা মার্টিন হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে গত শুক্রবার গভীর হতাশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে বহু কৃষ্ণাঙ্গকে বর্ণবাদী আচরণের মুখোমুখি পড়তে হয়। তিনি নিজেও এমন পরিস্থিতির শিকার হতে পারতেন। আদালত যথাযথভাবে কাজ করেছে উল্লেখ করেও ওবামা আত্মরক্ষাসংক্রান্ত আইনটি পর্যালোচনার আহ্বান জানান। এটি যুক্তরাষ্ট্রের ৩০টি অঙ্গরাজ্যে প্রচলিত। এএফপি, রয়টার্স ও বিবিসি।

No comments

Powered by Blogger.