বদলে গেছে তাঁর চারপাশ

বছরের পর বছর ধরে গৃহবন্দী। কারও সঙ্গে দেখা নেই। নেই টেলিফোন, ইন্টারনেট সংযোগ। এভাবে দিনের পর দিন নিঃসঙ্গ থেকেছেন তিনি। দীর্ঘ এই সময়ে অং সান সু চি কতটা বদলেছেন, তা হয়তো সময়ই একদিন বলে দেবে। তবে এত দিনে তাঁর চারপাশের ছবিটা আর আগের মতো নেই। বদলে গেছে দূর থেকে দূরান্তর। ইয়াঙ্গুনে আকাশছোঁয়া অট্টালিকা, রাস্তার মোড়ে মোড়ে ওয়েব ক্যাফেটেরিয়া। বদলে গেছে রাজনৈতিক অঙ্গনও। তাই মুক্তির পর এক নতুন মিয়ানমারের সঙ্গেই যেন সাক্ষাৎ হবে গণতন্ত্রপন্থী এই নেত্রীর। সর্বশেষ টানা সাত বছর বন্দী থেকে মুক্তির পর সু চির প্রথম ইচ্ছাই হলো টুইটারে সমর্থকদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়া।
সিঙ্গাপুরভিত্তিক ইনস্টিটিউট অব সাউথ ইস্ট এশিয়া স্টাডিজের গবেষক পাভিন চাচাভালপংপুন বলেছেন, বন্দী জীবনই সু চিকে বিচ্ছিন্ন করেছে। তাঁকে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে দেওয়া হয় না। কারও সঙ্গে যোগাযোগও করতে দেওয়া হয় না।
গত রোববার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সু চির নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) অংশ নিতে পারেনি। তবে দলের একটি অংশ নির্বাচনে যেতে চেয়েছিল। এ নিয়ে এনএলডির মধ্যে বিরোধ দেখা দিয়েছে। মুক্তির পর সু চিকে প্রথমেই দলের অভ্যন্তরীণ এ বিরোধের অবসান ঘটাতে হবে।
পাভিন চাচাভালপংপুন বলেন, ‘নতুন সরকারের সঙ্গে লড়তে হলে সু চিকে প্রথমেই বিরোধী দলগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে। কর্মসূচি বাস্তবায়নে নতুন ও তরুণ প্রজন্মের সমন্বয়ে দল গঠন করতে হবে।’
দীর্ঘদিন ধরে সুবিধাবঞ্চিত দেশের আদিবাসী গোষ্ঠীগুলোর অধিকার ফিরিয়ে দেওয়াটাও সু চির সামনে বড় চ্যালেঞ্জ। সু চির ভালো করেই জানা, বিগত পাঁচ দশকে সামরিক শাসনামলে সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষিত হয়নি।
তাই সু চির মুক্তিকে ঘিরে দেশটির সব শ্রেণীর মানুষ স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছে। লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের মিয়ানমারবিষয়ক গবেষক মাউং জারনি বলেন, ‘মুক্তির পর সু চির মানবতার রানী হওয়ার সুযোগ নেই। তাঁকে সরাসরি রাজনীতিতে যুক্ত হতে হবে। আগে যেমন রাজনীতি করতেন, সেটাই চালিয়ে যেতে হবে।’
ষাটোর্ধ্ব একজন রত্ন খনির শ্রমিক বলেন, ‘আমি মনে করি, স্বয়ং ঈশ্বরও জান্তাকে ভয় পান। তবু কাউকে না কাউকে এই সেনাশাসনকে ঠেকাতে হবে। আমি মনে করি, সু চিই তা পারেন।’
ইয়াঙ্গুনের বাইরে বেরোনো যাবে না এই শর্তে সু চিকে সর্বশেষ মুক্তি দেওয়া হয়েছিল ২০০২ সালে। তাই এবারও সেই শঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এমনটি হলে সরকারের সঙ্গে তাঁর মুখোমুখি অবস্থানে চলে যাওয়ার পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। এবং সর্বোপরি আবারও তাঁকে বন্দী করা হতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.