হঠাৎ জিয়নকাঠির ছোঁয়া

না, একদমই চলে না। অ্যালেক্স ফার্গুসনের এই চুক্তিটা একেবারেই বাজে—গত মৌসুমেও দিমিতার বারবেতভকে নিয়ে এমনই বলাবলি করছিল সবাই। এই ‘অচল’ ফুটবলারটিই হঠাৎ করে দুর্দান্ত হয়ে উঠলেন এ মৌসুমে। গত পরশু যেন একটু বেশিই সচল হলেন বুলগেরিয়ান স্ট্রাইকার। দারুণ এক হ্যাটট্রিক করে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী লিভারপুলের বিপক্ষে ৩-২ গোলে জেতালেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে।
ফার্গুসন টটেনহাম হটস্পার থেকে বারবেতভকে ম্যানইউতে নিয়ে আসেন ২০০৮ সালে। বুলগেরিয়ান স্ট্রাইকারকে পেতে ৩০ মিলিয়ন পাউন্ড খরচ করেছিল ম্যানইউ। কিন্তু টটেনহামের পারফরম্যান্সটা ম্যানইউতে নিয়ে যেতে পারেননি বারবেতভ।
টটেনহামে ছিলেন প্রায় ৩ বছর। ১০২ ম্যাচে গোল করেছিলেন ৪৬টি। কিন্তু ম্যানইউতে বারবেতভকে পেয়ে বসে তীব্র গোল-খরা। ২০০৮-০৯ ও ২০০৯-১০—এই দুই মৌসুমে ৮৬টি ম্যাচ খেলে মাত্র ২৬ গোলই করেছেন তিনি। অন্য অনেকের মতো বারবেতভের পারফরম্যান্স দেখে হতাশ হয়ে পড়েছিলেন ফার্গুসনও।
নতুন মৌসুমে এই বারবেতভই আবার হাসি ফোটালেন ফার্গুসনের মুখে। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো রিয়াল মাদ্রিদে যাওয়ার পর ম্যানইউকে টানছিলেন ওয়েইন রুনি, আন্তনিও ভ্যালেন্সিয়া আর নানি। রুনি অনেক দিন ধরেই তাঁর সেরা ফর্মে নেই। ভ্যালেন্সিয়া চোট নিয়ে মাঠের বাইরে। এ সময় কাউকে না-কাউকে জ্বলে ওঠার প্রয়োজনই ছিল। সেই জ্বলে ওঠার কাজটা করলেন বারবেতভ।
গত দুই মৌসুমের নিষ্প্রভতাকে ছাপিয়ে এ মৌসুমে ৬ ম্যাচ খেলেই করে ফেলেছেন ৭ গোল। অনেক দামে কেনা ‘জিনিস’ এমন কাজ করছে দেখে মহা খুশি ফার্গুসন। ম্যানইউ কোচ বলেছেন, ‘বড় একটা মৌসুমই ওর জন্য অপেক্ষা করছে।’
কোনো এক জিয়নকাঠির ছোঁয়ায় এভাবে জেগে উঠতে পেরে খুশি বারবেতভও। এ মৌসুমে যা হচ্ছে তা নিয়ে উচ্ছ্বসিত তিনি। তবে পরশুর ব্যাপারটা যেন তাঁর নিজের প্রত্যাশাকেও ছাপিয়ে গেছে। ম্যাচ শেষে বারবেতভ বললেন, ‘যেন একটা জাদুকরি দিন। আমার জন্য তো বিশেষ দিন। কারণ আমি হ্যাটট্রিক করেছি এবং আমরা আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বীকে হারিয়েছি।’
জিয়নকাঠির ছোঁয়া যেন লেগেছে চেলসিতেও। তবে চেলসির জিয়নকাঠি যেন তাদের ইতালিয়ান কোচ কার্লো আনচেলত্তি। কী জাদু যে আছে তাঁর কাছে! আনচেলত্তির দল মাঠে নামলেই ৪টি-৫টি করে গোল করছে এই মৌসুমে। পরশু নবাগত ব্ল্যাকপুলকে হারাল ৪-০ গোলে।
৪ গোল করাটা যেন অভ্যাসেই পরিণত করে ফেলেছে আনচেলত্তির দল। পরশুর ম্যাচটির আগে চ্যাম্পিয়নস লিগে এমএসকে জিলিনাকে ৪-১ গোলে হারিয়েছে ‘ব্লু’রা। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে ৫ ম্যাচে পুরো ১৫ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে তো চেলসি আছেই, চারের চেয়ে বেশি গড়ে করেছে ২০ গোল।
পাঁচ ম্যাচ পর সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকার প্রথম ৫ জনের মধ্যে আছেন চেলসির ৩ জন। ৬ গোল করে বারবেতভের সঙ্গে যৌথভাবে শীর্ষে ফ্লোরেন্ত মালুদা। দিদিয়ের দ্রগবার ৫ গোল। এরপর আর্সেনালের ইংলিশ উইঙ্গার থিও ওয়ালকটের সঙ্গে যৌথভাবে তৃতীয় স্থানে আছেন ৪ গোল করা সলোমন কালু।
মালুদার কথা একটু আলাদা করেই বলতে হয়। একজন উইঙ্গার হিসেবে এত দিন গোল করানোর দিকেই বেশি খেয়াল ছিল তাঁর। এখনো সেটা আছে। তবে এবার গোল করাতেও সমান মনোযোগী ফরাসি উইঙ্গার। যেন বিশ্বকাপের লজ্জা ভুলতে চান চেলসিতে অসাধারণ খেলে। বিশ্বকাপে ফ্রান্সের আরেক ব্যর্থ ‘নায়ক’ আনেলকারও সাফল্যতৃষ্ণাটা চোখে পড়ছে। কিন্তু এই তৃষ্ণা বের করে আনছেন কে? কার্লো আনচেলত্তি।

No comments

Powered by Blogger.