মেক্সিকো উপসাগরে দুর্ঘটনাকবলিত তেলক্ষেত্রটি সম্পূর্ণ বন্ধ করা হয়েছে

মেক্সিকো উপসাগরে ব্রিটিশ পেট্রোলিয়ামের (বিপি) নিয়ন্ত্রণাধীন তেলক্ষেত্রটিকে ‘মৃত’ তেলকূপ হিসেবে ঘোষণা করেছে মার্কিন কর্তৃপক্ষ। এই দুর্ঘটনা মোকাবিলা কার্যক্রমে মার্কিন সরকারের পক্ষে দায়িত্বে থাকা প্রধান কর্মকর্তা অবসরপ্রাপ্ত অ্যাডমিরাল থাড অ্যালেন গত রোববার এই ঘোষণা দেন।
থাড অ্যালেন বলেন, ‘তেলক্ষেত্রটিকে পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়ার কাজ সফলভাবে শেষ হয়েছে। এর মাধ্যমে আমরা ঘোষণা করছি, ম্যাকোন্ডো টুফাইভটু তেলকূপটি এখন কার্যত মৃত। পরবর্তী আনুষঙ্গিক কাজ শেষ করার উদ্যোগ অব্যাহত রয়েছে। এই তেলকূপটি এখন আর এ অঞ্চলের পরিবেশের জন্য কোনো হুমকি নয়।’ এই ঘোষণার পর আন্তর্জাতিক পুঁজিবাজারে বিপির শেয়ারের দাম বেড়ে যায়।
গত এপ্রিল মাসের শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্রের লুইজিয়ানা অঙ্গরাজ্যের উপকূলে অবস্থিত ওই তেলক্ষেত্রে বিস্ফোরণ ঘটে এবং তেল উত্তোলন পাইপে বড় ছিদ্র সৃষ্টি হয়। ছিদ্র দিয়ে তেল বেরিয়ে সাগরে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। দুর্ঘটনায় সেখানে কর্মরত ১১ জন শ্রমিক নিহত হন। পাঁচ মাসে প্রায় ৪৯ লাখ ব্যারেল তেল সাগরে ছড়িয়ে পড়ার পর বিপি এই তেলকূপটি পুরোপুরি বন্ধ করে দিল। বিশ্বে সাগরে তেল ছড়িয়ে পড়ার সবচেয়ে বড় ঘটনা এটি।
তেলকূপ বন্ধের প্রতিক্রিয়ায় এক বিবৃতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেন, ‘বিপির তেল ছড়িয়ে পড়ার ঘটনা মোকাবিলার মাধ্যমে আজ আমরা একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক স্পর্শ করলাম। বিপর্যয়কবলিত ওই উপকূলীয় অঞ্চলকে আবার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সেখানকার জনগণ, ব্যবসায়ী ও স্পর্শকাতর প্রতিবেশের জন্য কঠিন এই সময়ে আমার প্রশাসন সব সময় পাশে থাকবে।’
বিপির পক্ষ থেকেও উপকূলীয় এলাকায় এই দুর্যোগ কাটিয়ে ওঠার ব্যাপারে সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে বিপির প্রধান নির্বাহী ল্যামার ম্যাককেই বলেন, এই দুর্ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধের চেষ্টা করা হবে।
সাগরে তেল ছড়িয়ে পড়ার কারণে সেখানকার মৎস্য ও পর্যটন খাতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। উপকূলীয় অঞ্চলের জীববৈচিত্র্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ওই দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মার্কিন প্রশাসন গভীর সমুদ্রে তেল অনুসন্ধান কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। গত ১৫ জুলাই তেল বেরিয়ে আসা নিয়ন্ত্রণ করা হয়। বিপি তেল বেরিয়ে আসার ছিদ্রে ছিপি এঁটে দেয়। দুর্ঘটনার কারণে বিপির ওই সময়ে দায়িত্বে থাকা প্রধান নির্বাহী টনি হেওয়ার্ডকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়।
রোববার বিপির এক বিবৃতিতে জানানো হয়, দুর্ঘটনা মোকাবিলায় কোম্পানিটি এ পর্যন্ত ৯৫০ কোটি ডলার খরচ করেছে। তেল ছড়িয়ে পড়া নিয়ন্ত্রণ, বিকল্প কূপ খনন, তেল বেরিয়ে আসা বন্ধে বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার, উপকূলীয় অঙ্গরাজ্যগুলোকে ক্ষতিপূরণ, ব্যক্তিপর্যায়ে ক্ষতিপূরণ এবং কেন্দ্রীয় সরকারের খরচ মেটাতে এই কোম্পানির তহবিল থেকে এই অর্থ বেরিয়ে গেছে।
এই দুর্ঘটনার কারণে পুঁজিবাজারে বিপির সাত হাজার কোটি ডলারের লোকসান হয়।

No comments

Powered by Blogger.