সমাজসেবার নামে ব্যবসা বন্ধের উদ্যোগ গ্রহণ

সমাজসেবার নাম ভাঙিয়ে অন্য কিছু করার পথ বন্ধ হচ্ছে। সমাজসেবার কথা বললে সমাজসেবাই করতে হবে। অর্থাৎ সোসাইটির নাম নিয়ে ব্যবসা করা যাবে না। অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের কথা বলে নিবন্ধন নিয়ে গঠন করা যাবে না কোনো লাভজনক প্রতিষ্ঠানও।
শুধু তা-ই নয়, সোসাইটি হিসেবে নিবন্ধন পেতে হলে এর উদ্যোক্তাদের হতে হবে আয়কর প্রদানকারী ব্যক্তি। পেশাগত পরিচয়ও থাকতে হবে তাঁদের।
এসব বৈশিষ্ট্য সামনে রেখে নতুন করে সোসাইটি নিবন্ধন আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ১৫০ বছরের পুরোনো সোসাইটি রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্ট, ১৮৬০ যুগোপযোগী ও সংশোধিত হয়ে নতুন আইন হবে সোসাইটি রেজিস্ট্রেশন অ্যান্ড কন্ট্রোল অ্যাক্ট, ২০১০। তবে গত পাঁচ বছর এ আইন সংশোধনের খসড়া তৈরির কাজ চলছে বলে জানা গেছে।
আগে এই আইনের আওতায় নিবন্ধিত সমাজসেবামূলক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে নিয়ন্ত্রণের কোনো হাতিয়ার ছিল না, ছিল না জবাবদিহিও। এবার জবাবদিহির বিধান রেখে আইন তুলনামূলক কঠোর করা হচ্ছে।
গতকাল বুধবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে যৌথ মূলধনি কোম্পানিজ ও ফার্মসগুলোর পরিদপ্তরের (আরজেএসসি) তৈরি করা সংশোধিত আইনের খসড়ার ওপর আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এম মর্তুজা রেজা চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় যৌথ মূলধনি কোম্পানির নিবন্ধক আহমেদুর রহিম, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব তানকীন হক সিদ্দিকী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, বিদ্যমান সোসাইটি রেজিস্ট্রেশন আইনে বিভিন্ন সোসাইটির উদ্দেশ্যের সঙ্গে এদের কার্যক্রমের কোনো মিল নেই। অনেকে নিবন্ধন নিয়ে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা বা এনজিও কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। অনেকে আবার নিবন্ধন নিয়েই এখতিয়ার-বহির্ভূতভাবে নেমে পড়েছে ব্যবসায়।
বৈঠকে উপস্থিত থাকা একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানান, এসব কর্মকাণ্ডের খবর সরকার জানে। কিন্তু আইনে কঠোর শাস্তির বিধান না থাকায় লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। আবার দেশে এত বেশি সোসাইটি হয়ে গেছে যে এদের নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা এবং লোকবলও যৌথ মূলধনি কোম্পানিজের নেই।
কী পরিমাণ প্রতিষ্ঠান আইন লঙ্ঘন করছে বা সোসাইটি নাম নিয়ে এনজিও কার্যক্রম চালাচ্ছে—এ বিষয়ে কোনো তথ্য আরজেএসসির কাছে নেই। তথ্য সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা বা পদ্ধতিও নেই।
সূত্র জানায়, সোসাইটি রেজিস্ট্রেশন আইনের সংশোধনের ব্যাপারে প্রথম উদ্যোগ নেওয়া হয় ২০০৫ সালে। আইনটির বিভিন্ন অপব্যবহার রোধে অর্থ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয় ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং যৌথ মূলধনি কোম্পানি ও ফার্মসগুলোর পরিদপ্তরের প্রতিনিধিদের নিয়ে একাধিক আন্তমন্ত্রণালয়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। তৈরি হয়েছে খসড়াও। কিন্তু প্রভাবশালী ব্যক্তিদের চাপে এই খসড়া মন্ত্রিসভার বৈঠকেই তোলা যায়নি।
বিদ্যমান সোসাইটি রেজিস্ট্রেশন আইনের ব্যাপক অপব্যবহার হওয়ার কথা প্রথম আলোর কাছে স্বীকার করেন নিবন্ধক আহমেদুর রহিম। তিনি জানান, আইনটির সংশোধনীর খসড়া নিয়ে কিছুদিনের মধ্যে আরও একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। তার পরই বিষয়টি যাবে মন্ত্রিসভার বৈঠকে। নতুন আইন পাস হলে দেশের সোসাইটি-সম্পর্কিত কার্যক্রমে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
সোসাইটি নিবন্ধন প্রদানকারী সংস্থা আরজেএসসি এখন বেছে বেছেই নিবন্ধন দিচ্ছে বলে জানা গেছে। অর্থাৎ নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা যেসব প্রতিষ্ঠানের কাগজপত্রে ব্যবসা বা এনজিও কার্যক্রমের আভাস পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলোকেই আটকে দেওয়া হচ্ছে। নিবন্ধনের ক্ষেত্রে বিজ্ঞান, কলা, দাতব্য, সাহিত্য, ইতিহাস ও গ্রন্থাগারকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বেশি।
জানা গেছে, সমাজসেবা অধিদপ্তরের অন্তর্ভুক্ত ভলান্টারি অর্গানাইজেশন রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্টের মাধ্যমেও সোসাইটির নিবন্ধন নেওয়া যায়। অনেকে আবার সোসাইটির নিবন্ধন নিয়ে থাকেন ১৮৮২ সালের ট্রাস্ট আইনের আওতায়। কিন্তু সহজলভ্যতার কারণে বেশির ভাগ সোসাইটিরই নিবন্ধন হয়ে থাকে আরজেএসসিতে।

No comments

Powered by Blogger.