চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে রাজস্ব আদায়ে নয়টি ঝুঁকি শনাক্ত

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে নয়টি ঝুঁকি চিহ্নিত করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের গঠন করা একটি কমিটি। এই নয়টি ঝুঁকি কমানো গেলে রাজস্ব আদায়ের হার বাড়ার পাশাপাশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য গতিশীল হবে বলে মনে করছেন কমিটির সদস্যরা।
প্রায় এক মাস তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে ছয় সদস্যের একটি কমিটি ২১ পাতার এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের তথ্য অনুযায়ী, দেশে আমদানি পর্যায়ে আদায় করা রাজস্বের ৬৫ শতাংশ আসে এ কাস্টম হাউস থেকে। এ ছাড়া দেশের মোট আমদানির প্রায় ৫০ শতাংশ এবং রপ্তানির প্রায় ৮০ শতাংশ চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়ে থাকে।
আর গত ২০০৯-১০ অর্থবছরে এই কাস্টম হাউস ১৬ হাজার ৮০৩ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছে।
কমিটির প্রতিবেদনে রাজস্ব ঝুঁকির মধ্যে আমদানি পণ্যের সঠিক শুল্কায়নযোগ্য মূল্য নির্ধারণের ব্যবস্থা না থাকা; সঠিক ঝুঁকিব্যবস্থাপনা পদ্ধতির অভাব; ভোজ্যতেলের ট্যাংক টার্মিনালে পরিমাপের রাডার কার্যকর না থাকায় সঠিক হিসাবে অনিশ্চয়তা; আমদানি নীতি আদেশ পালনে দীর্ঘসূত্রতা; স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে শুল্কায়নব্যবস্থায় নিরাপত্তা ঝুঁকি এবং শুল্কায়ন কর্মকর্তার সংকটে অপ্রতুল নজরদারিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া সরাসরি কর্মকর্তা নিয়োগ না দেওয়ায় আদালতে শুল্ক-সংক্রান্ত মামলায় নজরদারির অভাব; শুল্কায়ন-পরবর্তী নিরীক্ষাব্যবস্থা না থাকা এবং বন্দর কর্তৃপক্ষের পদ্ধতির সঙ্গে নিলাম মডিউলের সংযোগ না থাকাকেও অন্যতম ঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৩ জুলাই রাজস্ব বোর্ডের এক অফিস আদেশে ছয় সদস্যের এই কমিটি গঠন করা হয়। প্রায় এক মাস নানান পর্যালোচনা করে কমিটি এসব ঝুঁকি চিহ্নিত করে। এসব ঝুঁকি নিরসনে ১৫ দফা সুপারিশও তুলে ধরা হয় এ প্রতিবেদনে।
কমিটির প্রধান হলেন কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট ট্রেনিং একাডেমির মহাপরিচালক প্রকাশ দেওয়ান। কমিটির অপর সদস্যরা হলেন রাজস্ব বোর্ডের প্রথম সচিব মো. খায়রুজ্জামান মজুমদার, কাস্টম হাউসের অতিরিক্ত কমিশনার (রপ্তানি) মো. মাহবুবুজ্জামান, যুগ্ম কমিশনার (আমদানি) মো. মোয়াজ্জেম হোসেন, উপকমিশনার ফাইজুর রহমান এবং শামসুল ইসলাম।
কমিটির অন্যতম সদস্য রাজস্ব বোর্ডের প্রথম সচিব মো. খায়রুজ্জামান মজুমদার গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এসব ঝুঁকির মাত্রা কমানো গেলে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য আরও গতিশীল হবে। রাজস্ব আদায়ের হারও বাড়বে। এ জন্য ঝুঁকি নিরসনের লক্ষ্যে ১৫ দফা সুপারিশও করা হয়েছে।’
কমিটি সূত্রে জানা গেছে, এসব ঝুঁকির কারণে মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি করা চালান কায়িক পরীক্ষা ছাড়া খালাসের আশঙ্কা রয়েছে। যেমন, দৈবচয়ন ভিত্তিতে পাঁচ শতাংশ এবং কমিশনারের নির্দেশনামতো পাঁচ শতাংশ আমদানি পণ্য চালান হাতেনাতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার কথা থাকলেও তা হচ্ছে না।
আবার প্রাক-জাহাজিকরণ পরিদর্শনব্যবস্থা ছাড়া যেসব পণ্য আমদানি হয় সেগুলোর ক্ষেত্রে কত শতাংশ কায়িক পরীক্ষা হবে তার কোনো নির্দেশনা নেই রাজস্ব বোর্ড থেকে।
কমিটির সুপারিশের মধ্যে রয়েছে ভোজ্যতেল পরিমাপের রাডার কার্যকর করা; রপ্তানি পণ্যের ক্ষেত্রে কনটেইনার স্ক্যানার ব্যবহার; নতুন সফটওয়্যার অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড স্থাপন; কাস্টম হাউসে একটি আইনি সেল গঠন; ঝুঁকিব্যবস্থাপনা পদ্ধতির ভিত্তিতে ১০ শতাংশ চালান সরেজমিনে পরীক্ষার জন্য নির্বাচন; কর্মকর্তা নিয়োগ ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ ইত্যাদি।
বন্দর ব্যবহারকারী চট্টগ্রাম চেম্বারের পরিচালক এস এম আবু তৈয়ব প্রথম আলোকে বলেন, রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে যেসব ব্যবসায়ী, সরকারি কর্মকর্তা এবং পণ্য খালাসে নিয়োজিত সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ঝুঁকিপূর্ণ তা শনাক্ত করা জরুরি। যেসব পণ্য আমদানিতে বেশি কারসাজি হয় সেগুলোও শনাক্ত করা দরকার। তাহলে সমস্যার অনেকখানি লাঘব হবে বলে মনে করেন তিনি।

No comments

Powered by Blogger.