বিশ্বকাপ জমে উঠল বলে

বরাবরই আমি হল্যান্ডের ভক্ত। কাল প্রথম হল্যান্ডকে দেখলাম। কেমন দেখলাম, সেটি বলার আগে জানিয়ে দিই—বিশ্বকাপের আসল উত্তাপটা এখনো পাওয়া যাচ্ছে না। হল্যান্ড-ডেনমার্ক ম্যাচের আগ পর্যন্ত কোনো খেলাই আকর্ষণীয় ছিল না। তবে এখন ইউরোপের বড় দলগুলো নামছে, খেলায়ও উপভোগ করার অনেক কিছু আপনি পাবেন। তিন-চার দিন পর থেকে হয়তো আমরা বুঁদ হয়ে খেলা দেখব।
এখন পর্যন্ত হল্যান্ড-ডেনমার্ক ম্যাচটাই আমার কাছে সেরা ম্যাচ। উঁচুমানের ফুটবল ছিল এই ম্যাচে। ম্যান টু ম্যান মার্কিং থেকে শুরু থেকে মাঠে কেউ কাউকে এক ইঞ্চি জায়গাও ছাড়তে চায়নি। একটা থ্রোর সময় দেখলাম, প্রত্যেক খেলোয়াড় বলের ওপর হুড়মুড়িয়ে পড়ছে। একজন হেড নিতে উঠেছে তো তার সঙ্গে প্রতিপক্ষের দু-তিনজন উঠেছে।
হল্যান্ড ম্যাচটা দুই গোলে জিতলেও এখনো গুছিয়ে উঠতে পারেনি। তাই এই ম্যাচ দেখেই তাদের ভালো-খারাপ খুঁজতে যাওয়া ঠিক হবে না। আগের ম্যাচগুলোয় তো আমরা দেখেছি, শক্তিশালী দলের সঙ্গে দুর্বল দলের লড়াই। এ ম্যাচটি কিন্তু সেদিক থেকে আলাদা। ডেনমার্ক সম্পর্কে আমরা হয়তো অনেকেই তেমন খোঁজ রাখি না। ওরা কিন্তু ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। দুটোই ইউরোপিয়ান দল তো, এক দল আরেক দল সম্পর্কে ভালোই জানে। এটা সহজ ম্যাচ ছিল না হল্যান্ডের জন্য। সেই হিসেবে প্রথম ম্যাচে ওরা ভালো করেছে বলব।
আজেন্টিনা সম্পর্কে আগে যেটা ধারণা করেছিলাম, সেটাই হবে মনে হচ্ছে। নাইজেরিয়ার বিপক্ষে আর্জেন্টিনার খেলা দেখে অনেকেই উচ্ছ্বসিত। কিন্তু আমি সেই দলে নেই। হ্যাঁ, ছোট দলের বিপক্ষে আর্জেন্টিনা আক্রমণাত্মক খেলবে। খুব সুন্দর ফুটবল খেলে আপনাকে মুগ্ধ করবে। কিন্তু আর্জেন্টিনা চ্যাম্পিয়ন হবে—এটা আমি বিশ্বাস করতে পারছি না। ওরা চ্যাম্পিয়ন হলে সেটিকে আমি অলৌকিক বলব। চ্যাম্পিয়ন হতে গেলে বাড়তি যে ধারটা লাগে, সেটা নেই এই আর্জেন্টিনার। আর্জেন্টিনার সমর্থকেরা মন খারাপ করবে জেনেও কথাটা বললাম।
বিশ্বকাপে কোচ ম্যারাডোনার শুরুটা ভালোই। তাঁকে নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না। মেসি ভালো খেলেছে এবং আরও ভালো খেলবে। তবে আর্জেন্টিনা কীভাবে তাকে ব্যবহার করে সেটা গুরুত্বপূর্ণ। সামনের ম্যাচগুলোয় মেসিকে আটকাতে প্রতিপক্ষের দু-তিনজন থাকবে, তখন খালি জায়গাটা অন্যরা কীভাবে কাজে লাগায়, সেটা হবে দেখার। যদি ওই জায়গাটা মেসির সতীর্থরা ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারে তাহলে আর্জেন্টিনাকে ভালো জায়গায় দেখব আশা করি।
জার্মানিকে দেখলাম পরশু। আমি আগেই বলেছি, ১১ জন জার্মানকে দাঁড় করালেই একটা ফুটবল দল হয়ে যায়। সত্যিই ওরা অসাধারণ। কোচ জোয়াকিম লোকে ধন্যবাদ দিচ্ছি; পোডলস্কি ও ক্লোসার খুব খারাপ একটা মৌসুম যাওয়ার পর তিনি তাদের ওপর আস্থা রেখেছেন। এর ফল তো লো প্রথম ম্যাচেই পেয়ে গেছেন।
ক্লোসা দলের দ্বিতীয় যে গোলটা করল, তা পরিপূর্ণ স্ট্রাইকারের গোল। গোলরক্ষক আসবে...বলে ঘুষি মারবে...। কিন্তু ক্লোসা কোনো দিকে তাকায়নি। ওর চোখ রয়ে গেছে বলের ওপর। এটাই একজন পরিপূর্ণ স্ট্রাইকারের প্রথম গুণ।
জার্মানরা হারে না, তাদের হারাতে হয়। আমার কাছে এদের একটা যন্ত্র মনে হয়। এই যন্ত্রের গাড়িটাকে ভালোভাবে তেল দেওয়া হয়, সময়মতো সার্ভিসিং করা হয়।
ইংল্যান্ডকে কাগুজে বাঘই মনে হচ্ছে। ওদের গোলরক্ষক গ্রিনের জন্য দুঃখ লাগছে। যে গোলটা ও খেলো, অমন গোল হতেই পারে। ভুল তো মানুষই করে। কিন্তু ওর সতীর্থরা ওর সাহায্যে এগিয়ে এল না! ম্যাচটা ইংল্যান্ড ২-১-এ জিতলে তো গ্রিনকে নিয়ে আর এত কথা হয় না! সতীর্থরা ওর বিপদে কিছুই করল না, যেটা হতাশ এবং ব্যথিত করেছে আমাকে। অথচ দেখুন, ওই ১০ জনের সবাই নামী-দামি খেলোয়াড়!
আজকের ম্যাচে আশা করছি, ব্রাজিল-উত্তর কোরিয়া ভালো খেলা হবে। দক্ষিণ কোরিয়া জেতায় উত্তর কোরিয়া প্রেরণা পাবে। তা থেকে অনুপ্রেরণা খুঁজে তারা ভালো কিছু করতে চাইবে।

No comments

Powered by Blogger.