ব্রাজিলের সামনে অচেনা কোরিয়া

যেখানেই থাকুন, আজ নিশ্চয়ই ব্রাজিলের খেলায় চোখ রাখবেন পেলে। তাঁর দল যে আজ মাঠে নামছে প্রথম ম্যাচ খেলতে! কিন্তু পাক দু-ইক! কোথায় তিনি? এখনো কি ফুটবল টানে তাঁকে? খেলা-টেলা দেখেন?...অজস্র প্রশ্ন। উত্তরও তো অজানা। জানার উপায় কী? সমাজতান্ত্রিক রক্ষণশীলতার খোলসে উত্তর কোরিয়া এমনভাবে আড়াল করে রেখেছে নিজেদের, বাইরের পৃথিবীর কাছে তারা অচেনা।
অচেনা পাকও। অথচ তাঁর জায়গায় অন্য কেউ হলে এত দিন হয়তো সেই মানুষটির পোষা কুকুরের নামও জেনে ফেলত সবাই! পাক যে বিশ্বকাপের ইতিহাসে করেছিলেন স্মরণীয় গোলগুলোর একটি। মিডলসবোরোতে তাঁর গোলে ইতালিকে হারিয়ে দিয়েছিল উত্তর কোরিয়া। এশিয়ার প্রথম দল হিসেবে উঠে গিয়েছিল কোয়ার্টার ফাইনালে। সেখানেও পর্তুগালকে চমক। এর পর ইউসেবিওর অতিমানবীয় কীর্তি।
উত্তর কোরিয়ার রূপকথা লেখা হচ্ছে যখন, তারও অনেক আগেই ব্রাজিল লিখে ফেলেছে তাদের ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে বিস্মরণযোগ্য অধ্যায়টি। ১৯৫৮ আর ১৯৬২—টানা দুই আসরের চ্যাম্পিয়নরা বিদায় নিয়েছে প্রথম রাউন্ডেই!
১৯৬৬ বিশ্বকাপটাকে আজও প্রতীক ধরে নিতে পারেন দুই দলের জন্য। আজও এই দুই দল দুই মেরুতে। ব্রাজিল এই বিশ্বকাপে আগ্রহের কেন্দ্রে থাকা দল। আর উত্তর কোরিয়া...নিজেই হিসাব কষে দেখুন, ঠিক কটা খবর পড়েছেন তাদের সম্পর্কে।
এ জন্য মিডিয়ার অনাগ্রহকে দায়ী করা যাবে না। সাংবাদিকদের অপার কৌতূহলকে সব সময় পাশ কাটিয়ে চলেছেন পাক দু-ইক। তিনি পেশায় জিমন্যাস্ট প্রশিক্ষক ছিলেন নাকি ডেন্টিস্ট—সেটিই আজও ঠাওরাতে পারেনি সাংবাদিকেরা। পাকের উত্তরসূরিরা মিডিয়ার ব্যাপারে আজও সমান নিরুর‌্যাসাহী। এখন পর্যন্ত সাংবাদিকদের মুখোমুখি তাঁরা হচ্ছেন এক কি দুবার। সেটাও হয়তো ফিফা চাপটাপ দিয়েছিল বলেই।
দুই মেরুর দুই দল, র‌্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর আর ১০৫ নম্বরের (৩২ দলের মধ্যে তারাই সবার নিচে) লড়াই আজ। প্রতিযোগিতামূলক ফুটবলে দুই দলের প্রথম মুখোমুখি হওয়ার ম্যাচও। বিশ্বকাপের সবচেয়ে অপেক্ষার ম্যাচও নয় কি? বিশ্বকাপের ১৩ ম্যাচ পেরিয়ে আজ যে প্রথম মাঠে নামছে ইতিহাসের সবচেয়ে সফল দলটি। কার্লোস দুঙ্গার চার বছরের শ্রম-সাধনার প্রথম পরীক্ষাও হয়ে যাবে আজ। যে দুঙ্গার দল নাকি ‘জোগো বনিতো’কে মেরে ফেলেছে গলা টিপে।
ব্রাজিলের প্রথম ম্যাচের আগেও এই সেদিন ১৯৭০ বিশ্বকাপজয়ী ‘ক্যাপ্টেন’ কার্লোস আলবার্তো তোরেসও বললেন, ‘খেয়াল করলে দেখবেন, এই দলটা বেশির ভাগ গোল করছে কর্নার-ফ্রিকিকের মতো সেটপিস থেকে। এই কারণে দলটাকে আমি ব্রাজিল দল বলি না।’ কিন্তু বিশ্বকাপের ছোঁয়া পেলেই ব্রাজিল যে বদলে যায়! অনেকে তাই বলছেন, দুঙ্গার ব্রাজিল শুধু শিরোপা জেতার জন্যই খেলবে না, ঠিক সময়ে জেগে উঠবে ব্রাজিলীয় শৈল্পিক সত্তা। লোহার বদখত কাঠামোর ওপর থাকবে মখমলের কোমল আবরণ।
নিকট অতীত বলছে, বিশ্বকাপের শুরুটা একটু নড়বড়ে হচ্ছে ব্রাজিলের। তার ওপর প্রতিপক্ষ আবার অচেনা উত্তর কোরিয়া। যারা বিশ্বকাপই খেলতে এসেছে ৪৪ বছর পর। বিশ্বকাপ তো বিশ্বকাপ, এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপই খেলেছে মাত্র দুবার, সর্বশেষ ১৯৯২-এর আসরে।
আন্তর্জাতিক ফুটবলেও তাই বড্ড অচেনা তারা। ব্রাজিলও তাকাচ্ছে সমীহের চোখেই। প্যারাগুয়ে কোচ কদিন আগেই প্রীতি ম্যাচের পর বলেছিলেন, ‘ওরা রক্ষণে বেশ ভালো। পাল্টা আক্রমণেও দ্রুতগতির।’
গ্রুপ প্রতিপক্ষ আইভরিকোস্টের কোচ সভেন গোরান এরিকসনের মূল্যায়ন, ‘কেউ ওদের নিয়ে কথা বলছে না। কিন্তু ওরা দুর্দান্ত ফুটবল খেলে, শারীরিকভাবেও খুবই শক্তিশালী। ওদের কখনোই ক্লান্ত দেখায় না।’

ব্রাজিল-উত্তর কোরিয়া
রবিনহো
লা লিগা, প্রিমিয়ার লিগের ফুটবলের সঙ্গে তাল মেলাতে না পেরে ফিরে গেছেন নিজের শেকড় সান্তোসে। তাই আলোটা ঠিক তাঁর ওপর নেই, কাকা-ফ্যাবিয়ানোদের তুলনায় আলোচনাতেও আছেন কম। সবাই যেন ভুলে গেছে পেলে নিজে রবিনহোকে বলেছিলেন তাঁর উত্তরসূরি। আলোটা নিজের দিকে ফেরাতে বেছে নিতে পারেন এই বিশ্বকাপকেই।

জং তায়-সে
১৯৬৬ বিশ্বকাপের মতো এবারও বিশ্ব ফুটবলকে নাড়া দেওয়ার স্বপ্ন দেখছে উত্তর কোরিয়া, স্বপ্নপূরণে তাদের ভরসা একজন ‘রুনি!’ ওয়েইন রুনির মতোই গাট্টাগোট্টা শরীর আর আক্রমণাত্মক মনোভাবের জন্য জং তায়-সেকে ডাকা হয় ‘এশিয়ার রুনি’। নিজ দেশে তুমুল জনপ্রিয় এই স্ট্রাইকার এবার নিজেকে চেনাতে পারেন বিশ্বমঞ্চেও।

No comments

Powered by Blogger.