ফনসেকার গ্রেপ্তারকে চ্যালেঞ্জ করবে শ্রীলঙ্কার বিরোধী দল

শ্রীলঙ্কার সাবেক সেনাপ্রধান ও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী জেনারেল শরত্ ফনসেকার গ্রেপ্তারকে আইনি চ্যালেঞ্জ জানানোর ঘোষণা দিয়েছে বিরোধী দলগুলো। গতকাল ফনসেকার গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে তাঁর হাজার হাজার সমর্থক রাজধানীতে বিক্ষোভ করে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে তাঁদের সংঘর্ষ বেঁধে যায়। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে দাঙ্গা পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছোঁড়ে ও জলকামান ব্যবহার করে। এতে অনেকে আহত হয়।
দেশের সেনাবাহিনী গত সোমবার ফনসেকাকে তাঁর কলম্বোর অফিস থেকে গ্রেপ্তার করে গোপন সামরিক স্থাপনায় নিয়ে যায়। তাঁকে এখন সামরিক আইনে বিচারের কথা বলছে প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপক্ষের সরকার।
ফনসেকার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি সরকারবিরোধী গোষ্ঠীর সঙ্গে মিলে সেনা অভ্যুত্থান ঘটানো ও রাজাপক্ষেকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিলেন। তবে ওই অভিযোগ ভিত্তিহীন ও বানোয়াট দাবি করেছে ফনসেকার পরিবার। তাঁর পরিবার ফনসেকার জীবন নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছে। এরই মধ্যে মঙ্গলবার রাতে স্বামীর সঙ্গে দেখা করেন জেনারেল ফনসেকার স্ত্রী অ্যানোমা ফনসেকা। একই দিন প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপক্ষে পার্লামেন্ট বিলুপ্ত ঘোষণা করেন। আগেভাগে দেশের পার্লামেন্ট নির্বাচন করতেই রাজাপক্ষে ওই পদক্ষেপ নিয়েছেন। আগামী ৮ এপ্রিল ওই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।
জেনারেল ফনসেকার গ্রেপ্তার ও চলমান পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে দেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো একটি যৌথ বিবৃতি দিয়েছে। তারা এতে বলেছে, সামরিক গোপন স্থাপনায়ই জেনারেল শরত্ ফনসেকাকে হত্যা করা হতে পারে। কারণ এটা বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে যে আদালতের এখতিয়ারবহির্ভূতভাবে যেভাবে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হলো, তাতে ওই গ্রেপ্তার অবস্থায় তাঁকে এখন মেরেও ফেলা হতে পারে।
বিরোধী রাজনীতিকেরা ফনসেকার গ্রেপ্তারের তীব্র প্রতিবাদ জানান। বিরোধী রাজনীতিকদের পক্ষে দেওয়া বিবৃতিতে বিরোধী দলের আইনপ্রণেতা রউফ হাকীম বলেন, ‘আমরা জেনারেল ফনসেকার বিষয়টি আদালতে তুলব। বিষয়টি আমরা দেশের জনগণ, এমনকি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছেও তুলে ধরব।’
মঙ্গলবার রাতে স্বামীর সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পান ফনসেকার স্ত্রী অ্যানোমা। সরকারের পক্ষে সেনা মুখপাত্র মেজর জেনারেল প্রাসাদ সমরসিঙ্গে বলেন, জেনারেল ফনসেকাকে কোনো কারাকক্ষে রাখা হয়নি। তাঁর জন্য থাকার ভালো ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাঁর সঙ্গে স্ত্রী ও আইনজীবীও দেখা করেছেন।
অ্যানোমা সেখানে স্বামীর সঙ্গে তিন ঘণ্টা সময় কাটান। তিনি স্বামীর জন্য বাড়ি থেকে খাবারও নিয়ে গিয়েছিলেন।
ফনসেকার বিরুদ্ধে বেশ কিছু প্রতারণা ও অন্যান্য সামরিক অপরাধের অভিযোগ আনার পরিকল্পনা করছে সেনাবাহিনী। তাঁর বিরুদ্ধে সামরিক বিধি লঙ্ঘনেরও অভিযোগ আনা হতে পারে। একই অভিযোগে ফনসেকার প্রচার ব্যবস্থাপক সেনাকা ডি সিলভাকেও ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
গ্রেপ্তারের আগে ফনসেকা তাঁর কার্যালয়ে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, গত বছরের যুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘন বিষয়ে যেকোনো আন্তর্জাতিক তদন্তের মুখোমুখি হতে রাজি তিনি। ফনসেকার গ্রেপ্তারের ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
গত বছরের মে মাসে তামিল বিদ্রোহীদের যুদ্ধে পরাজিত করে শ্রীলঙ্কার সেনাবাহিনী। এর মাধ্যমে দেশটিতে দীর্ঘ তিন দশকের গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটে। ওই যুদ্ধে রণাঙ্গনে সরকারি বাহিনীর নেতৃত্ব দেন ফনসেকা। কিন্তু যুদ্ধ শেষে এর সাফল্যের দাবি নিয়ে বর্তমান প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপক্ষের সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে থাকে তাঁর। ওই যুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও যুদ্ধাপরাধ হয়েছে বলে অভিযোগ তোলে জাতিসংঘ। একপর্যায়ে ফনসেকা সেনাবাহিনী থেকে পদত্যাগ করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দেন।

No comments

Powered by Blogger.