গ্রামীণফোনের ব্যাখ্যা চেয়েছে এসইসি

চতুর্থ প্রান্তিকের আর্থিক বিবরণী প্রকাশ করা নিয়ে পুঁজিবাজারের আইন ভঙ্গের অভিযোগ উঠেছে গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে। আর এ অভিযোগ সম্পর্কে কোম্পানিটির অবস্থান জানতে চেয়ে গত মঙ্গলবার চিঠি দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি)।
গ্রামীণফোন গত মঙ্গলবার ২০০৯ সালের ৩১ ডিসেম্বরে সমাপ্ত চতুর্থ প্রান্তিক বা শেষ তিন মাসের (অক্টোবর-ডিসেম্বর) অনিরীক্ষিত হিসাব প্রকাশ করে, যা দুই স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটে উপস্থাপন করা হয়।
প্রকাশিত এ হিসাব অনুযায়ী, উল্লিখিত সময়ে কোম্পানিটি ৮৪৪ কোটি ৪৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা মুনাফা করেছে। এ হিসেবে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী বার্ষিক (জানুয়ারি-ডিসেম্বর) প্রকৃত আয় দেখানো হয়েছে এক হাজার ৪৯৬ কোটি ৮১ লাখ ৭০ হাজার টাকা এবং শেয়ার-প্রতি আয় বা ইপিএস দেখানো হয়েছে ১২ টাকা আট পয়সা।
আর আগের বছরের একই সময়ে কোম্পানিটির প্রকৃত মুনাফা ও ইপিএস ছিল যথাক্রমে ২৯৮ কোটি ৩৮ লাখ ৭০ হাজার টাকা ও দুই টাকা ৪৬ পয়সা।
কিন্তু এসইসি বলছে, এভাবে পুরো বছরের অনিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী প্রকাশ করা ১৯৮৭ সালের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বিধির ১২(৩এ) ধারার লঙ্ঘন।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে এসইসির সদস্য মনসুর আলম বলেন, পুঁজিবাজারের নিয়মানুযায়ী প্রথম প্রান্তিক, অর্ধবার্ষিক ও তৃতীয় প্রান্তিকে অনিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী প্রকাশ করার বিধান রাখা হয়েছে। কিন্তু চতুর্থ বা শেষ প্রান্তিক বলে কোনো বিধান নেই। গ্রামীণফোন চতুর্থ প্রান্তিক বলে যেভাবে বছরের মোট মুনাফা প্রকাশ করেছে, তা কেবল বার্ষিক আর্থিক বিবরণীতে প্রকাশ করা হয়। আর আইনানুযায়ী বার্ষিক আর্থিক বিবরণীকে অবশ্যই নিরীক্ষিত হতে হবে। কিন্তু গ্রামীণফোন তা না করে অনিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী প্রকাশ করে আইন ভঙ্গ করেছে।
বিষয়টি সম্পর্কে গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ওডভার হেশজেডাল ই-মেইলে জানান, গ্রামীণফোনের কাছে চতুর্থ প্রান্তিকের আর্থিক বিবরণী প্রকাশ করার জন্য ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। আজ (বুধবার) চিঠির মাধ্যমে এবং এসইসির শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করে আমাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছি।
তিনি বলেন, আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আর্থিক বিবরণী প্রকাশের আগে গ্রামীণফোন এসইসির যে বিধিবিধান ও দিকনির্দেশনা পেয়েছিল, এ ক্ষেত্রে তা পরিপালন করা হয়েছে।
জানা গেছে, এসইসির চিঠি পাওয়ার পর গতকাল গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ওডভার হেশজেডাল এসইসির চেয়ারম্যান জিয়াউল হক খোন্দকারের সঙ্গে দেখা করেন। এ সময় চিঠির প্রসঙ্গসহ সাম্প্রতিক সময়ে গ্রামীণফোনের প্রকাশিত বিভিন্ন মূল্য সংবেদনশীল তথ্য ও শেয়ারের লেনদেনের ধরন নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে।
এসইসি গ্রামীণফোনের আর্থিক বিবরণী ওয়েবসাইটে প্রকাশ করায় দুই স্টক এক্সচেঞ্জকেও চিঠি দিয়েছে। পুঁজিবাজারের নিয়ম জানা থাকা সত্ত্বেও গ্রামীণফোনের অনিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী কেন ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হলো, তার কারণ জানতেই এ চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে এসইসি সূত্র জানিয়েছে।
এদিকে গতকাল থেকে গ্রামীণফোনের শেয়ারের বিপরীতে আর্থিক সমন্বয় সুবিধা বা নেটিং-সুবিধা বন্ধ করার নির্দেশ কার্যকর হয়েছে। ফলে কোনো বিনিয়োগকারী অন্য কোম্পানির শেয়ার বিক্রি করে সমপরিমাণ টাকায় গ্রামীণফোনের শেয়ার কেনার সুযোগ পায়নি।
গতকাল যেসব বিনিয়োগকারী কোম্পানির শেয়ার কিনেছেন, তাঁদের নগদ টাকায় তা কিনতে হয়েছে। আর এ কারণে গতকাল কোম্পানিটির শেয়ারের কিছুটা দরপতন ঘটেছে। দিন শেষে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম আগের দিনের চেয়ে তিন টাকা ৫০ পয়সার মতো কমে দাঁড়িয়েছে ৩১০ টাকা ১০ পয়সায়। তবে লেনদেনের পরিমাণ কমে ৫১ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। এর আগের দিনেও গ্রামীণফোনের শেয়ার লেনদেন হয়েছিল ১৮৩ কোটি টাকার।

No comments

Powered by Blogger.