ইয়েমেনি শিশুদের দুঃখগাথা

বালিকাটির বয়স মাত্র আট বছর। ২২ বছর বয়সী চাচাতো ভাইয়ের সঙ্গে তার বিয়ে ঠিক করা হয়। শেষ পর্যন্ত বিয়েও হয়ে যায়। বধূবেশে বাসরঘরে যায় বালিকাটি। যদিও বাসরঘর কী, সে সম্পর্কে বোঝার বয়সই হয়নি মেয়েটির। বাসররাতে স্ত্রীকে একান্তভাবে কাছে পেতে চাইলেন তার স্বামী। কিন্তু এ সম্পর্কে একেবারেই অজ্ঞ বালিকাবধূটি। একপর্যায়ে ভয়ে চিত্কার করে উঠল সে। দৌড়ে বাসরঘর থেকে পালানোর চেষ্টা করল নববধূটি। কিন্তু ওই সময় বাসরঘরে গিয়ে হাজির বালিকাবধূটির চাচি অর্থাত্ তার স্বামীর মা। তার বাধায় আর পালানো হয়নি মেয়েটির। মুখোমুখি হতে হয় এক ভয়ংকর অভিজ্ঞতার।
বালিকাবধূটি এখন বাবার বাড়িতে। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। বালিকাবধূটির মা চান তাঁর মেয়ে স্বামীর কাছে ফিরে যাক। বধূটি যদি স্বামীর ঘরে ফিরে না আসে, তাহলে বিয়ের সময় দেওয়া যৌতুক ফেরত দাবি করবে বরের পরিবার। সব মিলিয়ে নাজুক পরিস্থিতিতে বালিকাবধূ ও তার পরিবারের সদস্যরা। আতঙ্কজনক এ চিত্রটি ইয়েমেনের।
বড়দিনে যুক্তরাষ্ট্রগামী বিমান উড়িয়ে দেওয়ার ব্যর্থ চেষ্টার পর প্রতিদিনই কোনো না কোনোভাবে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে উঠে আসছে ইয়েমেনের নাম। শুধু আল-কায়েদার ক্রমবর্ধমান হুমকি নয়, আরও অনেক সমস্যায় জর্জরিত দেশটি। দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়তে হচ্ছে সানাকে।
ইয়েমেনের আয়ের প্রধান উত্স তেল নিয়েও রয়েছে উদ্বেগ। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে দেশটির তেলের মজুদ নিঃশেষ হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ইয়েমেনে তীব্র পানির সংকট দেখা দিতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। পানি নিয়ে ইতিমধ্যেই সেখানে অনেক দাঙ্গা হয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি শহরের পানির কলে পানি নেই দুই মাস ধরে। ট্রাকে করে সেখানে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে।
এমন নানা সংকটে ভুগছে ইয়েমেন। সরকার ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের চোখ ওসব সমস্যার দিকে। কিন্তু সেখানকার শিশুরা যে অনেক সংকটে ভুগছে, সেদিকে নজর নেই কারোরই। শিশুদের উদ্বেগজনক অবস্থা সেভাবে আলোচনায় উঠে আসছে না।
ইয়েমেনের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকের বয়স ১৫ বছরের নিচে। অর্থাত্ দেশটিতে শিশুর সংখ্যা এক কোটি।
রাজধানী সানার অলিগলি সব সময় মুখরিত থাকে শিশুদের কলকাকলিতে। তারা হাসছে, খেলছে। ইয়েমেনের আবহাওয়াও খুব চমত্কার। কখনোই তীব্র গরম কিংবা তীব্র শীত পড়ে না দেশটিতে। যেন এক স্বর্গপুরী।
সানার খুব কম বাড়িতেই শীতাতপ নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা আছে। কারণ এর দরকারই পড়ে না সেখানে। সানায় রয়েছে ছবির মতো সুন্দর অনেক টাওয়ার হাউস, যেগুলো চারতলা থেকে শুরু করে ১০ তলা পর্যন্ত উঁচু। ইট-পাথরের তৈরি কোনো কোনো টাওয়ার হাউস ৯০০ বছরের পুরোনো।
এসব সানার সৌন্দর্যের গল্প। আলোর নিচে রয়েছে অন্ধকার। সুন্দর এই ছবির পাশাপাশি সানার রয়েছে অন্ধকার দিকও।
এসব চমত্কার বাড়িতে বাস করে এমন অনেক শিশুই স্কুলে যেতে পারে না। তাদের স্কুলের বদলে যেতে হয় কাজে। কিংবা তাদের কাজ ও পড়াশোনা দুটোই চালাতে হয় একসঙ্গে। অনেক শিশু রাস্তায় সেদ্ধ ডিম বিক্রি করে। বাবাকে কাজে সাহায্য করতে হয় অনেক শিশুকে।
এ তো গেল শিশুদের কষ্টগাথা। নারীরাও কম দুঃখে নেই সেখানে। ২০০০ সালে নির্যাতনবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা পরিচালিত এক জরিপে দেখা যায়, ইয়েমেনের অর্ধেক নারীই পারিবারিক নির্যাতনের শিকার। বিবাহের পর যৌন নির্যাতনের শিকার হন ২০ শতাংশ নারী।

No comments

Powered by Blogger.