হাসিতে রইল প্রতিজ্ঞাও

পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে জুয়েল আহমেদ সতীর্থদের কাছে বায়না ধরলেন একটা বড়সড় জাতীয় পতাকা এনে দেওয়ার। ওটায় শরীর জড়িয়েই পদকটা নিতে চান। তাই হয় নাকি? আন্তর্জাতিক রীতিনীতি বলে তো একটা কথা আছে! পতাকাটা ফিরিয়ে দিতে হলো। ওটা বুকের ক্যানভাসে এঁকেই যে একের পর এক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করে সোনা জিতেছেন। এতে মন হয়তো দমে গেল। তবে রাজশাহীর শিরোইল কলোনির ছেলেটির আকাঙ্ক্ষাটা অদম্য। সেমিফাইনালে শ্রীলঙ্কার জয়াসুন্দারাকে হারানোর পরই তিনি বুঝে গিয়েছিলেন ফাইনালে নেপালের অজিত গুরুং কিছুতেই পারবে না।
জয়ের পর সতীর্থদের উল্লাস, দর্শকের বাঁধভাঙা আনন্দের মধ্যেও বাবা-মাকে ফোন করেছেন। খবরটা জানানোর ‘দায়িত্ব পর্ব’ সেরে নিয়েছেন রাজশাহীতে থাকা ‘খুব কাছের একজনকে’ ফোন করেও। তাঁর মুখের হাসিতে মিশেছে দেশকে গর্বের একটি মুহূর্ত উপহার দিতে পারার আনন্দ। রাজশাহীর মডার্ন বক্সিং ক্লাবের কোচ শফিউল আজমের হাত ধরে উঠে আসা জুয়েল তাই এক মুহূর্ত দেরি না করে সোনার পদকটি উত্সর্গ করলেন দেশবাসীকে। গরিব বাবা বাঁশের ব্যবসা করে সংসার চালান। বক্সিং দিয়েই আনসারে চাকরি পেয়েছেন, বেতন মাত্র হাজার পাঁচেক। এখন আশা, এই সাফল্য তাঁর চাকরিতেও উন্নতি আনবে। লেখাপড়া মাত্র অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত। এটা একটা বড় দুঃখ। তবে এখন আর দুঃখ নেই। দেশকে গর্বের হাসি উপহার দিতে পেরেছেন। আর যাঁদের অবদানে আজকের এই কীর্তি সেই কোচ কাজী শাহাদাত, আবদুল মান্নান, আতিয়ার রহমানের কাছে তাঁর কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। থাই কোচ খান তা ওয়ানের অবদানও অকুণ্ঠচিত্তে স্মরণ করেন ১৯ বছর বয়সী তরুণ।
যশোরের নওদা গ্রামের ২২ বছর বয়সী আবদুর রহিমও গরিব ঘরের সন্তান। বাবা লিয়াকত আলী স্বাস্থ্য বিভাগের সামান্য চাকরিজীবী, মা গৃহিণী। তাঁর প্রথম কোচ ঝিনাইদহের আহম্মেদ আল ফারুক বললেন, ‘ও ছিল প্রকৃতি দত্ত প্রতিভা। সেই ছোটবেলা থেকেই জানতাম, সুযোগ পেলে ও একদিন দেশের মুখ উজ্জ্বল করবে।’ পাশে দাঁড়ানো রহিমের মুখে তখন একটা অপার্থিব আলো। তাতে একটা চ্যালেঞ্জ জয়েরও আনন্দ, ‘গত জুলাইতে যখন ইতালিতে বিশ্ব বক্সিং শেষে দেশে ফিরে আসি, অনেক কথা শুনতে হয়েছে। কেন ফিরলাম, এ দেশে বক্সিং করে কী পাব...ইত্যাদি ইত্যাদি। তখনই প্রতিজ্ঞা করি এসএ গেমসে সোনা জিতে দেখাব ভুল করিনি। আমি দেখিয়ে দিয়েছি।’ ওই ইতালি-কাণ্ড বক্সিং ফেডারেশনের জন্যও ছিল লজ্জার। নাদিম হোসেন ‘পথ হারিয়ে ফেলায়’ বেশ কদিন দেরি করে ফিরেছিলেন। দুজন কর্মকর্তা আর ফিরলেনই না। ‘লজ্জা’ ঘুচিয়ে দিলেন জুয়েল ও রহিম। সেনাবাহিনীতে খুব ছোট পদে চাকরি করা রহিম তো করলেন প্রতিজ্ঞা পূরণ। এখন বিস্তৃত স্বপ্নের সীমানায় দাঁড়িয়ে ওঁরা তাই নিজেদের শাণিত করছেন নতুন প্রতিজ্ঞায়, ‘সামনে কমনওয়েলথ গেমস, এশিয়ান গেমসেও কিছু করতে চাই।’

No comments

Powered by Blogger.