শেখ হাসিনার সংবিধান বাদ দিতে হবে

এখনো শেখ হাসিনার সংবিধান চালুর চেষ্টা চলছে, সেটি বাদ দিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন কবি, প্রাবন্ধিক ও রাজনৈতিক ভাষ্যকার ফরহাদ মজহার। তিনি বলেছেন, ড. ইউনূসকে জনগণের প্রধান হিসেবে প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। সবাই মিলে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে তাকে নির্বাচিত করা হয়েছে। যারা এ বিপ্লবে অংশ নিয়েছেন, তাদের একটি জাতীয় কাউন্সিল হবে। সেখানে বিএনপিও থাকবে। সেখানে নতুন গঠনতন্ত্র প্রণয়ন হবে। বিএনপি’র প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে গঠনতন্ত্র তৈরি হওয়া পর্যন্ত সর্বাত্মকভাবে সহায়তা করা। গতকাল রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে প্রতিবাদী নাগরিক সমাজের উদ্যোগে আয়োজিত ‘গণঅভ্যুত্থান ও আমাদের করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে এসব মন্তব্য করেন তিনি।

বিএনপি নেতাদের ধৈর্য ধরার পরামর্শ দিয়ে ফরহাদ মজহার বলেন, রাজনৈতিক দল কীভাবে নির্বাচনে আসবে, সেই গঠনতন্ত্র তৈরি হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনের দাবি তোলা যাবে না। বিএনপিকে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, তারা এই জনগণের মধ্যেই আছে। দলকে সামনে আনা যাবে না। আগে রাষ্ট্র গোছাতে হবে। শত্রুকে মোকাবিলা করতে হবে।

ফরহাদ মজহার বলেন, বর্তমান সংবিধানের জন্য লড়াই হয়নি। সংবিধান উৎখাত করার জন্য লড়াই হয়েছে। যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের মনের অভিপ্রায় লিখিত হওয়া পর্যন্ত সরকারকে সময় দিতে হবে। নতুন গঠনতন্ত্র তৈরি হওয়া পর্যন্ত মাঠে থাকতে হবে। গণঅভ্যুত্থানের পরপরই বিএনপি’র সমাবেশের সমালোচনা করে তিনি আরও বলেন, এতে ভুল বার্তা গেছে। তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন চাইলেন, কেন করলেন? উদ্দেশ্যটা কী? বিএনপি কিন্তু পারেনি এই ফ্যাসিস্ট সরকারকে ঠেকাতে। তারা ছাত্রদের পেছনে ছিল। ছাত্ররা সে কৃতজ্ঞতা প্রকাশও করে। কিন্তু লন্ডন থেকে বিভ্রান্তিকর বার্তা দিলে তরুণদের ক্ষতি হবে। প্রয়োজনে তারেক রহমান চাইলে আমি লন্ডনে গিয়ে কথা বলবো। লন্ডনে কার সঙ্গে কথা বলতে হবে, কোন আইনজীবীর কাছে যেতে হবে, প্রয়োজনে সে ব্যবস্থা করা হবে।

বিএনপি’র দলীয় বিভেদ বাইরে আসবে না- এমন আশা প্রকাশ করে ফরহাদ মজহার বলেন, দলের মধ্যে বিরোধ করা যাবে না। বিএনপি’র দুটি ধারা। একটি ধারা এ সরকারের পক্ষে। আরেকটি ধারা এরা বিরক্ত করছে। নানা ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে বিএনপিকে বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে উল্লেখ করে ফরহাদ মজহার বলেন, বিএনপিকে বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে। ভারত জানে যে বন্দিবিনিময় চুক্তির মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে যেকোনো সময় খুনি হিসেবে বাংলাদেশ চাইতে পারে। তারা দিতে বাধ্য। ১৫ ও ২১শে আগস্ট একটা গণহত্যার পরিকল্পনা ছিল। এসব রুখে দেয়া গেছে। যেকোনো মুহূর্তে ভারত কিন্তু এখানে গণহত্যা করতে পারে। নিজেদের মধ্যে বিভেদ তৈরি করা যাবে না।

সেমিনারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরী বর্তমান সরকারকে উদ্দেশ্য করে জনজীবনে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনা, জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচার করা, সামপ্রদায়িক সমপ্রীতি বজায় রাখা, গণমুখী শিক্ষানীতি তৈরি ও দুর্নীতি দূর করতে দায়িত্ব নেয়ার কথাও বলেন। সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আবদুল লতিফ মাসুম, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, পেশাজীবী পরিষদের মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী, সাংবাদিক আবদুল হাই শিকদার প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.