মেসে মেসে হানা: আদালতে স্বজনদের ভিড়

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সহিংস ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ গতকালও বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী, যুবককে আটক করে। যাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। কাউকে কাউকে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে।গ্রেপ্তারকৃতদের বেশির ভাগকে রাতে বাসাবাড়ি ও মেসে অভিযান চালিয়ে আটক করা হয়।  গতকাল ঢাকার সিএমএম আদালতের সামনে গ্রেপ্তারকৃতদের এমন অনেক স্বজনদের ভিড় দেখা গেছে।

সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে আদালতপাড়ায় গিয়ে দেখা গেছে, সকাল হতে না হতেই আন্দোলনে জড়িত সন্দেহে আটককৃতদের স্বজনরা সিএমএম আদালতের সামনে ভিড় করেন। স্বজনদের অভিযোগ, এলাকার সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের সহায়তায় বাসাবাড়ি ও মেস থেকে পুলিশ ধরে এনেছে। অনেকে দাবি করেন তাদের স্বজন কোনো আন্দোলন বা দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নন।

কী অপরাধে, কোন মামলায় আটক করা হচ্ছে, সেই তথ্যও দিচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এতে করে আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তায় মধ্যে কাটছে তাদের দিন। সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াতের রাজধানীর বিভিন্ন থানার নেতাকর্মীদের আটক করা হচ্ছে। এ বিষয়ে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতা এডভোকেট ওমর ফারুক ফারুকী  মানবজমিনকে বলেন, গতকালও পুলিশ ছাত্রদলের বিভিন্ন ইউনিটের কয়েকশত নেতাকর্মীকে বাসাবাড়ি ও মেসে অভিযান চালিয়ে  আটক করেছে। শুধু আটক করেই ক্ষান্ত হননি তাদেরকে বেধড়ক পেটানোও হচ্ছে। এটা সম্পূর্ণ আইনের পরিপন্থি। আমরা যাতে সহজে জামিনের আবেদন করতে না পারি সেজন্য নথিপত্রও প্রদান করছে না।   

সিএমএম আদালতের গারদখানা থেকে পুলিশের কাঁধে ভর করে সাদ্দাম হোসেনকে নেয়া হচ্ছিল আদালতে। তিনি জানান, ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সাদ্দাম হোসেনকে শনিবার একটি মেস থেকে ছাত্রলীগের নেতারা ধরে এনেছে। এরপর তাকে বেধড়ক পিটুনি দেয়। পরে পুলিশে সোপর্দ করে। ওরা আমার পায়ের পাতা, হাঁটুতে লাঠি দিয়ে পিটিয়েছে। একপর্যায়ে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। এরপর আর কিছু মনে নেই।     


পল্লবী থানার একটি মামলায় ১৭ বছরের শিশু মো. নাসিম হোসেন তালুকদার  কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে আছে বলে জানান শিশুটির আইনজীবী মাহফুজুর রহমান। তিনি মানবজমিনকে বলেন, বাসাবাড়ির সামনে থেকে পুলিশ শিশুটিকে আটক করেছে। আমরা তার জামিনের জন্য শিশু আদালতে আবেদন করেছি। আজ সোমবার ওই শিশুর জামিন আবেদনের শুনানি হবে।   
সরজমিন দেখা যায়, সকালে আদালতপাড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা সারি সারি প্রিজন ভ্যানের মধ্যে নিজের ভাইকে খুঁজছিলেন বড় ভাই। সাতদিন আগে, বন্ধুর কাছে পাওনা টাকা চাইতে নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় যান ছোট ভাই মাইন উদ্দিন। সেদিন যাত্রাবাড়ী ও সাইনবোর্ড এলাকায় চলছিল সংঘাত সহিংসতা। এরপর থেকেই তার ফোন বিচ্ছিন্ন। ভাই জাহাঙ্গীর জানান, পরে অনেক খোঁজাখুঁজির পর মাইন উদ্দিনের আটকের খবর জানতে পারেন তিনি। তাই ভাইকে জামিন মুক্ত করতে আদালতপাড়ায় ছুটে আসেন। বিভিন্ন থানা থেকে আটক শিক্ষার্থীদের হাত পেছনে দিয়ে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে সিএমএম-এর গারদখানায় আনতে দেখা গেছে। কারও কারও মাজায় রশি বাঁধাও দেখা গেছে।

রাজধানীর আজিমপুর কলোনির বাসাবাড়ি থেকে আটক এক স্বজন ছেলের খোঁজে আদালতের সামনে আইনজীবীর সঙ্গে শলাপরামর্শ করতে দেখা যায়। তিনি জানান, শনিবার দিবাগত রাতে আজিমপুর কলোনিতে তল্লাশি করা হয়েছে। আমার ছেলের মতো আরও কয়েকজন ছেলেকে পুলিশ আটক করেছে।

শনিবার ডেমরা থানা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মাসুদ রানাসহ সাত জনকে ৭ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেয় আদালত। ওই সাতজনের মধ্যে ১৭ বছরের ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী  হাসনাতুল ইসলাম ফাইয়াজের রিমান্ড বাতিল চেয়েছিলেন তার আইনজীবী।  ফাইয়াজের আইনজীবী মো. মুজাহিদুল ইসলাম শনিবার আদালতে রিমান্ডের বিরোধিতা করে জামিন চেয়েছিলেন। ফাইয়াজকে ‘শিশু’ দাবি করে রিমান্ডে না পাঠানোর আর্জি জানিয়েছিলেন। এরপরেও শুনানি শেষে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জামিন নাকচ করে ফাইয়াজকেও রিমান্ডে পাঠানোর আদেশ দেন। গতকাল আদালত তার রিমান্ড স্থগিত করেছেন এবং উক্ত অভিযুক্তের বয়স নির্ধারণ বিষয়ে শুনানি ও আদেশের জন্য সংশ্লিষ্ট শিশু আদালতে পাঠান। শিশু আদালত শুনানি শেষে অভিযুক্ত ফাইয়াজকে শিশু হিসেবে ঘোষণা করে তার রিমান্ড বাতিল করেন এবং তাকে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর আদেশ দেন।

No comments

Powered by Blogger.