অবশেষে ফেল করলো সাকিব

পরীক্ষার তিন মাস আগে থেকেই এলাকায় নেই। অংশ নেয়নি পরীক্ষায়। তারপরও জিপিএ-৫। হাস্যরসের এ ঘটনাটি ঘটেছিল লালমনিরহাটে হাতীবান্ধা উপজেলায়। এ ঘটনায় পুরো দেশে যখন আলোচনা-সমালোচনায় ঝড় ঠিক তখনই ফেল করলো ওই শিক্ষার্থী। পরীক্ষা অংশগ্রহণ না করেও প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়ার একদিন পর অবশেষে ফেল করানো হলো সাকিবকে। গতকাল প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে ওই ছাত্রকে অনুপস্থিত দেখিয়ে ২৪৩৫ রোল শিক্ষার্থীকে ফেল দেখিয়েছেন। এর আগে মঙ্গলবার প্রকাশিত ফলে লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার হাতিবান্ধা ১নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র সাজ্জাত হোসেন সাকিব জিপিএ-৫ দেখানো হয়। এরপর বিষয়টি নিয়ে লালমনিরহাটসহ সারা দেশে চলছে আলোচনা ও সমালোচনা। এই ফলে ওই ছাত্র নিজেও হতবাক। এ কেমন ডিজিটাল পরীক্ষা! সাকিবের পরিবার ও এলাকাবাসীর মাঝে সৃষ্টি হয়েছে চাঞ্চল্য। হতভাগ হয়েছে হাতীবান্ধা ১নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও। বিষয়টি নিয়ে জাতীয় গণমাধ্যমও ফলাও করে সংবাদ প্রচার করে। এ ঘটনায় হাতীবান্ধা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্বাস আলী ভূঁইয়াকে শোকজ করা হয়। ৩ দিনে মধ্যে জবাব দিতে বলা হলেও গতকালই জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নজিব উদ্দিন সরকারের কাছে জবাব দিয়েছে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আব্বাস উদ্দিন। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নবেজ উদ্দিন ভূঁইয়া মানবজমিনকে বলেন, ভুল ও অসাবধানশত এমন ঘটনা ঘটেছে। এজন্য সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে শোকজ করা হয়েছিল। সে গতকাল এর জবাব দিয়েছে। তার জবাব ঢাকায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠিয়ে দিয়েছি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার হাতীবান্ধা ১নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এ থেকে এ বছর ৯৯ জন পিএসসির পরীক্ষার্থী ফরম পূরণ করেছিল। এর মধ্যে ৯০ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে অনুপস্থিত ছিলেন ২৪৩৫নং রোল ধারী ছাত্র সাজ্জাত হোসেন সাকিব। সে হাতীবান্ধা সিন্দুরনা ইউনিয়নের হাসেন আলীর পুত্র। পরিবারের দরিদ্রতার সঙ্গি হয়ে তিন মাস আগে ঢাকার অদূরে আমিনবাজার এলাকায় ইটভাটায় কাজ শুরু করে। বর্তমানে সে ইটভাটায় করছেন বলে জানা গেছে। পরীক্ষা না দিয়ে জিপিএ-৫ পাওয়া ঘটনা লালমনিরহাট শহরজুড়ে ছিল ‘টপ অব দ্য বই’। বিষয়টি তার পরিবারের লোকজনেও হতবাক। এ থেকে বাদ যায়নি বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরাও। সহপাঠীর কৌতূহল ভাল পরীক্ষা দিয়েও এত ভাল রেজাল্ট  করতে পারলাম না, আর সাকিব বিনা পরীক্ষায় জিপিএ-৫। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুন নবী জানান, রেজাল্ট পেয়ে হতবাক হয়েছি। কারণ, সাকিব ৩ মাস থেকে এলাকায় নেই। অংশ নেয়নি পরীক্ষাও। তারপরও জিপিএ ৫। পুরো ঘটনাটিকে হাস্যকর দাবি করে তিনি বলেন, এই ঘটনাটি কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী জানালেন বিষয়টি তদন্ত করা প্রয়োজন। এ ঘটনায় উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে ৩ দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর জন্য শোকজ করা হয়েছে। তবে শোকজকৃত শিক্ষা কর্মকতা একটি রিপোর্ট গতকাল জেলা শিক্ষা অফিসে পাঠালে ঢাকায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, পুরো ঘটনাটি অদক্ষ কম্পিউটার অপারেটর ও বিদ্যুতের লোডশোডিংয়ের কারণে হয়েছে। তবে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকতা নবেজ উদ্দিন জানান, প্রতিবেদনটি উপরে পাঠানো হবে ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করা হবে। এদিকে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

No comments

Powered by Blogger.