মিয়ানমার সফর চলতি মাসেই-বাংলাদেশও আশাবাদী

আগামী ১৮ বা ১৯ নভেম্বর মিয়ানমার সফরে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। তাঁর সফরকে কেন্দ্র করে এরই মধ্যে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তাব্যবস্থাও নিশ্চিত করা হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে মিয়ানমার সরকারের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা গতকাল বৃহস্পতিবার এ কথা জানিয়েছেন। তবে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ এবং দেশটিতে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস- কোনো পক্ষই এই সফর সম্পর্কে কিছু জানায়নি।


ওই কর্মকর্তা বলেন, 'আমি যত দূর জানি, ১৯ নভেম্বর মিয়ানমার সফরে আসছেন ওবামা। সফরকালে তিনি প্রেসিডেন্ট থেইন সেইন ও বিরোধীদলীয় নেতা অং সান সুচির সঙ্গে পৃথক বৈঠক করবেন।' এর আগে গত সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে সু চির সঙ্গে বৈঠক করেন ওবামা। ওবামা যদি সত্যিই মিয়ানমারে যান, তবে তিনিই হবেন দেশটি সফরকারী প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
প্রসঙ্গত, চলতি মাসেই ওবামার কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ড সফর করার কথা রয়েছে। এরই অংশ হিসেবে তিনি মিয়ানমার ঘুরে যেতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে কালের কণ্ঠের কূটনৈতিক প্রতিবেদক জানান, ওবামা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পুনর্নির্বাচিত হওয়ার পর এবার তাঁর সফরের প্রত্যাশা করছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে প্রতিবেশী মিয়ানমারে তাঁর সফরের জোর সম্ভাবনা দেখা দেওয়ার পর বাংলাদেশও এ ব্যাপারে আশাবাদী হয়ে উঠেছে। মিয়ানমারের অন্যতম বড় সংকট রোহিঙ্গা ইস্যুর প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে। রোহিঙ্গা সমস্যার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। বারাক ওবামার সম্ভাব্য সফরের প্রস্তুতির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তাদল যখন নেপিদো সফরে যাচ্ছে, সে সময় ঢাকা সফরে আসছে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষপর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল। মানবাধিকার ও রোহিঙ্গা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও আলোচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের একজন আন্ডার সেক্রেটারির (পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও উপপররাষ্ট্রমন্ত্রীর পরের পদ) এ সফরকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো অবশ্য ওবামার মিয়ানমার সফরের পাশাপাশি বাংলাদেশ সফরের সম্ভাবনার ব্যাপারে গতকাল কোনো তথ্য দেয়নি। তবে বাংলাদেশি কূটনীতিকরা বলেছেন, ওবামা পুনর্নির্বাচিত না হলে বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়ত। বিশেষ করে ঢাকা ও ওয়াশিংটনের মধ্যে গত কয়েক বছর ধরে যে পর্যায়ের সহযোগিতা ও অংশীদারির সম্পর্ক গড়ে উঠেছে, তার পূর্ণতা দিতে সরকারপ্রধান পর্যায়ে সফরের প্রত্যাশা করছে বাংলাদেশ। তাঁদের মতে, ওবামা যদি ঢাকা সফরে নাও আসতে পারেন তাহলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী দ্বিপক্ষীয় সফরে নিউ ইয়র্ক যেতে পারেন।
ঢাকার কূটনৈতিক সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে, বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শনের জন্য আগামী বৃহস্পতিবার এ দেশ সফরে আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের দুই শীর্ষ কর্মকর্তা। তাঁরা হলেন আন্ডার সেক্রেটারি মারিয়া ওটেরো ও ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি (উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী) কেলি ক্লিমেন্টস। আগামী ১৫ ও ১৬ নভেম্বর বাংলাদেশ সফরকালে তাঁরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।
এদিকে মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় সহিংসতাপীড়িত রাখাইন রাজ্যে স্থিতিশীলতা আনতে সরকারের প্রতি সেখানে আরো সেনা পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছেন সু চি। একই সঙ্গে রোহিঙ্গা ইস্যুতে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপেরও তিনি সমালোচনা করেছেন।
রাখাইন রাজ্যে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ও মুসলমানদের মধ্যে গত জুন থেকে দাঙ্গা শুরু হয়। এতে এ পর্যন্ত ১৮০ জন নিহত এবং এক লাখ ১০ হাজারের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়। তবে এ দাঙ্গা থামাতে মিয়ানমার সরকার সেই অর্থে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। সরকারের সমালোচনা করে সু চি বলেন, 'সংখ্যালঘু বা সংখ্যাগুরু, নৃ-তাত্তি্বক বা ধর্মীয় দিক থেকে বিভেদ না এনে সবার মানবাধিকার রক্ষার প্রতি সম্মান দেখানো আমাদের দায়িত্ব।' সূত্র : এএফপি, গার্ডিয়ান।

No comments

Powered by Blogger.