বিদেশি বিনিয়োগ না আসার মূল কারণ ইউনূস

নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ না হওয়ার প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেন, 'বাংলাদেশে এত ভালো কাজ হচ্ছে, অথচ এটা পৃথিবীর কোথাও প্রাধান্য পায় না। আর এর একমাত্র কারণ হচ্ছেন ড. ইউনূস। তিনি বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক প্রচার চালাচ্ছেন।'


গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর শেরে বাংলানগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার প্রথম বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন পর্যালোচনা সভা শেষে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। ইউনূসের সততা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন মন্ত্রী।
বিনিয়োগ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, 'দেশে এখনো বিনিয়োগ এত বাড়েনি। সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হচ্ছে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) হচ্ছে না। বিনিয়োগের অভাবে মরে যাচ্ছি।' কেন বিনিয়োগ হচ্ছে না জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, 'এর জন্য কিছুটা গভর্ন্যান্স (শাসন ব্যবস্থা) দায়ী। এখনো ঘুষ লেনদেন হয়। অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়। এ ছাড়া ব্রিটেনের প্রভাবশালী সাময়িকী ইকোনমিস্ট গত চার বছর সরকারের বিরুদ্ধে লেগে ছিল। তবে ইকোনমিস্ট তার অবস্থানের বিরাট পরিবর্তন করেছে।
তারা বাংলাদেশ প্রসঙ্গে আর নেতিবাচক কোনো সংবাদ করতে পারেনি। গত সপ্তাহে ইকোনমিস্টে বাংলাদেশ সম্পর্কে অনেক ইতিবাচক সংবাদ পরিবেশন করা হয়েছে। কিন্তু বিদেশি বিনিয়োগ না হওয়ার পেছনে প্রধান সমস্যা হচ্ছেন ড. ইউনূস। বহির্বিশ্বে তিনি যেসব কথা বলেন, তা সততার সঙ্গে বলেন না।'
একজন ব্যক্তি কিভাবে সরকারের বিরুদ্ধে এমন প্রচারণা চালাচ্ছেন সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, 'হি (ইউনূস) হ্যাজ অ্যা ওয়ান্ডারফুল পাবলিসিটি মেশিনারি। তিনি যেসব কথা বলেন, তার মধ্যে পুরোপুরি সততা নেই।'
অর্থমন্ত্রী বলেন, 'গ্রামীণ ব্যাংক তাঁর (ইউনূস) প্রতিষ্ঠান। তিনি কোনোমতেই গ্রামীণ ব্যাংক ছাড়বেন না। এটাই হলো তাঁর সমস্যা। আর এজন্যই তাঁর এত কারসাজি।'
নোবেল পুরস্কার জয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের কথা উদ্ধৃত করে অর্থমন্ত্রী বলেন, 'অমর্ত্য সেন বলেছেন, এখানে এত কিছু হচ্ছে, কিন্তু কোথাও ভালো কিছু প্রাধান্য পায় না।'
কয়েক মাস আগে টিআইবির এক অনুষ্ঠান শেষেও অর্থমন্ত্রী এ ধরনের অভিযোগ তুলেছিলেন ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে। ওই সময় মন্ত্রী বলেছিলেন, সরকার গ্রামীণ ব্যাংক ধ্বংস করতে চাইছে বলে ড. ইউনূস বহির্বিশ্বে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
ইকোনমিস্ট হলুদ সাংবাদিকতা করেছে : গতকাল রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আন্তর্জাতিক ডেইরি, মৎস্য ও পোষা প্রাণী মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী বলেন, 'ইকোনমিস্ট হলুদ সাংবাদিকতা করেছে। তারা বাংলাদেশের ভালো কিছু দেখে না। অথচ অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে চীনের পরে বাংলাদেশই সবচেয়ে ভালো করেছে। ভারতও তা পারেনি।' পত্রিকাটি দুষ্টু ব্যবস্থাপনার কবলে পড়ে নষ্ট হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন অর্থমন্ত্রী।
বাংলাদেশ এনিম্যাল হেলথ অ্যাসোসিয়েশন (আহকাব) এ মেলার আয়োজন করেছে। এটি চলবে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী আবদুল হাই, এফবিসিসিআই সভাপতি এ কে আজাদ, আহকাব সভাপতি মোমিন উদ দৌলা উপস্থিত ছিলেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, '৫০ বছর ধরে আমি ইকোনমিস্ট পত্রিকাটি পড়ি। এখন এটি হাতে নিলে ছুড়ে ফেলতে মন চায়।' তিনি বলেন, বিশ্বমন্দার মধ্যে বাংলাদেশের জাতীয় আয় চার ভাগের এক ভাগ বেড়েছে। চীন ছাড়া পৃথিবীর অন্য কোনো দেশ এটা পারেনি।
মেলায় দেশি-বিদেশি বিভিন্ন কম্পানি তাদের পশুস্বাস্থ্যের বিভিন্ন পণ্য, উপকরণ ও যন্ত্রপাতি প্রদর্শন করছে। এ ছাড়া মেলা উপলক্ষে কয়েকটি আন্তর্জাতিক সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে এ কে আজাদ বলেন, 'সরকারের অনেক অর্জন থাকলেও ব্যাংক খাত ঠিকমতো নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। হলমার্কের ঘটনায় সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা শাখার কর্মকর্তাদের ধরা হয়েছে। পরিচালক, এমডি, জিএম তাঁরা কি ঘটনা জানতেন না? তাঁরা কোথায় গেলেন?'
ডেসটিনি ও হলমার্কের ঘটনার হোতাদের ধরার পরামর্শ দিয়ে এ কে আজাদ বলেন, 'ওদের ধরলে জনগণ আপনাদের আবার ক্ষমতায় আনবে।'

No comments

Powered by Blogger.