অথচ তারা খেলে শূন্য মাঠে

২৩ জুলাই, ২০১১। ঘরের মাঠে দুই বছর পর প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছে লেবানন। প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ। অথচ বৈরুতের স্টেডিয়াম ছিল ফাঁকা। বাংলাদেশি সমর্থকেরা বিশেষ ছাড় পেলেও স্থানীয় দর্শকেরা ভেতরে ঢুকতে পারেননি। তাহলে কি লেবানিজদের ফুটবল টানে না?
কারণ কী? লেবানন কোচ এমিলি রুস্তম মেটালেন কৌতূহল ‘রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কারণে আমাদের ফুটবল বড় একটা সমস্যার ভেতর দিয়ে চলছে। আমরা দুই বছর ধরে জাতীয় দলকে বিদেশে পাঠাইনি। এমনকি আমাদের ফুটবলে দুই বছর ধরে দর্শকবিহীন অবস্থায় হচ্ছে। সাধারণ দর্শকের স্টেডিয়ামে প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে সরকার। দাঙ্গা-হাঙ্গামাই বড় কারণ।’
সন্ত্রাস আর রাজনৈতিক অস্থিরতায় জেরবার লেবাননে ফুটবল আলাদা থাকতে পারে না। সেই লেবাননের হাতে ৪-০ গোলে নাকাল বাংলাদেশ। বিশ্বকাপের মূল বাছাইপর্বে এক পা দিয়েই রাখল লেবানন। ১৯৯৮ সালে ফিফা র‌্যাঙ্কিং ৮৫ ছিল যে দেশটির, বিদেশের মাটিতে না খেলার কারণে গত পরশু পর্যন্ত তাদের র‌্যাঙ্কিং কিনা বাংলাদেশের ১৪ ধাপ পেছনে ছিল! কাল ঘোষিত নতুন র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশ ১৪৭ লেবানন ১৫৯। সেই লেবানন মাঠের শৌর্যটা ঠিকই দেখাল বাংলাদেশের বিপক্ষে।
ঘরোয়া ফুটবল কাঠামোটা এখনো সে অর্থে অপেশাদার, যদিও কোচ বলছেন আধা পেশাদার। প্রথম বিভাগে ১২টি, দ্বিতীয় বিভাগে ১৪টি দল খেলে। লেবানিজ প্রথম সারির খেলোয়াড়ের আয় বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের চেয়ে অনেক কম। রুস্তম জানাচ্ছেন, ‘ক্লাব থেকে মাসে এক থেকে এক দেড় হাজার ডলার পায় একজন খেলোয়াড়।’ তবে অঙ্কটা এর চেয়ে অনেক কম। কোচ একটু বাড়িয়েই বলেছেন।
নড়বড়ে কাঠামো। কিন্তু জাতীয় দলের জন্য লেবানন ফুটবল ফেডারেশন ঠিকই একটা পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে, যেটা বাংলাদেশের নেই। বিশ্বকাপ বাছাইয়ের জন্য বাংলাদেশ অনুশীলন ম্যাচ খেলা দূরে থাক, এটা নিয়ে ভাবেইনি। লেবানন তিনটি ম্যাচ খেলেছে শক্তিশালী দলের সঙ্গে। ওমানের কাছে ১-০, গালফ চ্যাম্পিয়ন কুয়েতের কাছে ৬-০, আরব আমিরাতের বিপক্ষে ৬-২-তে হার।
রুস্তম বলছিলেন, ‘আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে আমরা আস্তে আস্তে উঠে আসতে চাইছি। ওই তিনটি ম্যাচে আমি সব খেলোয়াড়ের কাছে বার্তা দিয়েছি, সুযোগটা কাজে লাগাও এবং তোমরা দেখাও, তোমরা কী করতে পারো। ৬ সপ্তাহের এই প্রস্তুতিতে ফলটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল না।’
দেশের গণ্ডি পেরিয়ে লেবাননের দুজন খেলোয়াড় বাইরে খেলেন। তাঁদেরই একজন রেদা চীনে খেলেন, প্রথমটি না খেললেও আজকের ম্যাচে তাঁর খেলার কথা। কোচের বিশ্বাস, ভবিষ্যতে আরও বেশি খেলোয়াড় বিদেশে সুযোগ পাবেন। আশায় আছেন, মাঠে দর্শক-নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবে সরকার। এত প্রতিকূলতার মধ্যে এগিয়ে চলা লেবাননকে দেখে কি শিখবে বাফুফে?

No comments

Powered by Blogger.