‘সম্মানজনক’ বিদায়ের পথ খুঁজছেন গাদ্দাফি

লিবীয় নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফি তাঁর দেশের ওপর ন্যাটো বাহিনীর বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বন্ধের উপায় হিসেবে ক্ষমতা থেকে সরে যেতে চান এবং এ লক্ষ্যে তিনি ‘সম্মানজনক’ বিদায়ের পথ খুঁজছেন বলে খবর বেরিয়েছে। ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ান লিবিয়া সরকারের উচ্চপদস্থ চার কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে গত শনিবার এ কথা জানিয়েছে। অন্যদিকে সানডে টেলিগ্রাফ বলেছে, ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল স্যার ডেভিড রিচার্ডস বলেছেন, গাদ্দাফির পতন ত্বরান্বিত করতে ন্যাটোকে অবশ্যই হামলার নিশানাস্থল ‘সম্প্রসারিত’ করতে হবে। একই সঙ্গে আঘাত হানার ব্যাপকতা আরও বাড়াতে হবে।
গার্ডিয়ান বলেছে, লিবিয়া সরকারের চারজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তাদের বলেছেন, গাদ্দাফি ‘সম্মানজনক’ বিদায় নিশ্চিত করতে প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছেন। তিনি নিজেই এখন দেশকে স্বৈরশাসন থেকে গণতন্ত্রের দিকে এগিয়ে নিতে চাইছেন। গাদ্দাফি আশা করছেন, এর মাধ্যমে ন্যাটো লিবিয়ায় উপর্যুপরি বোমা হামলা চালানো বন্ধ করবে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) যখন তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির প্রক্রিয়া চালাচ্ছে, ঠিক এমন সময় গাদ্দাফির এই পরিকল্পনার কথা জানা গেল।
লিবিয়া সরকারের ওই চার কর্মকর্তা বলেন, গাদ্দাফি জানেন তাঁর সময় শেষ হয়েছে। তবে তিনি ক্ষমতা হস্তান্তর করে দেশ ছেড়ে পালাতে চান না। এর আগে খবর বেরিয়েছিল গাদ্দাফি ভেনেজুয়েলায় আশ্রয় নিতে পারেন। তবে এক কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে গার্ডিয়ান জানায়, তিনি ভেনেজুয়েলায় যাচ্ছেন না। তিনি সম্মানের সঙ্গে দেশে থাকতে চান। ওই কর্মকর্তা বলেছেন, গাদ্দাফি জাপানের সম্রাট বা কিউবার নেতা ফিদেল কাস্ত্রোর মতো সম্মান নিয়ে লিবিয়ার মাটিতেই জীবনের শেষ দিনগুলো কাটাতে চান। “
আরেক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা জানি, বিশ্ব ও দেশের মানুষের কাছে তাঁর সম্মানহানি করে লিবিয়ার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়া সম্ভব নয়। আবার এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে দেশে সংস্কার আনার প্রয়োজন।’
কর্মকর্তাদের বক্তব্য অনুযায়ী ক্ষমতা মসৃণভাবে হস্তান্তরের লক্ষ্যে ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছেন গাদ্দাফি। ১৯৬৯ সালে ক্ষমতা দখলের পর এবারই প্রথম তিনি অন্যদের ক্ষমতা গ্রহণের সুযোগ দিতে চাইছেন।
এদিকে, ব্রিটিশ সেনাপ্রধান ডেভিড রিচার্ডস বলেছেন, গাদ্দাফি যাতে আর ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার সুযোগ না পান সে জন্য ন্যাটোকে অবশ্যই হামলার ব্যাপকতা এবং লক্ষ্যস্থলের সীমা সম্প্রসারিত করতে হবে। তিনি বলেন, গাদ্দাফি ও তাঁর সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহার্য অবকাঠামোগুলোতে সরাসরি হামলা বাড়াতে হবে। ব্রিটিশ সেনাপ্রধানের এ বক্তব্যে ন্যাটোর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সমর্থন রয়েছে বলেও সানডে টেলিগ্রাফ দাবি করেছে।
গত ১৭ মার্চ লিবিয়ায় উড্ডয়ন-নিষিদ্ধ এলাকা প্রতিষ্ঠায় এবং গাদ্দাফির বাহিনীর হাত থেকে বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষায় ‘প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ গ্রহণের’ সিদ্ধান্ত নেয় জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ। ওই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে ১৯ মার্চ থেকে লিবিয়ায় বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় পশ্চিমা যৌথ বাহিনী। পরবর্তী সময়ে অভিযানের দায়িত্ব নেয় ন্যাটো জোট। ত্রিপোলিতে গাদ্দাফির বাসভবন বাব আল-আজিজিয়া চত্বরে ইতিমধ্যে কয়েক দফা বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ন্যাটো। এতে গাদ্দাফির এক ছেলেসহ তাঁর কয়েকজন নিকটাত্মীয় নিহত হয়েছেন। গাদ্দাফি বর্তমানে অজ্ঞাত স্থানে আত্মগোপন করেছেন।

No comments

Powered by Blogger.