আনল বয়ে কোন বারতা! by আবেদ খান

টেন্‌টট্ বলে একটা পাখি আছে। সে চিৎ হয়ে পা আকাশের দিকে তুলে ঘুমোয়। এ নিয়ে প্রচলিত গল্পটি হচ্ছে-পাখিটি ভাবে, ঘুমিয়ে পড়ার সময় যদি আকাশ ভেঙে পড়ে তাহলে সে পা দিয়ে সেই পতন ঠেকাতে পারবে এবং নিজেও বেঁচে যেতে পারবে। এই হটেন্‌টট্ পাখির কথা মনে পড়ল সরকারি দলের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির কথা ভেবে। মনে হয়, এখন সময় এসেছে পুরো পরিস্থিতি নিয়ে গভীরভাবে ভাবনাচিন্তা
করার এবং এই ভাবনাটি ভাবতে হবে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীকেই। কারণ তিনি কেবল সরকারপ্রধানই নন, সরকারি দলের প্রধানও বটে। আর সবচেয়ে বড় ব্যাপার, বিগত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের যে অবিশ্বাস্য বিজয় ঘটেছিল, তা সম্ভব হয়েছিল দুটি কারণে-এক. জোট সরকারের দুর্নীতি, জঙ্গি লালন, প্রতিপক্ষ দলন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির ফলে অতিষ্ঠ মানুষ পরিবর্তন চেয়েছিল এবং দুই. মানুষ শেখ হাসিনাকে বিশ্বাস করেছিল, তাঁর প্রতিশ্রুতিতে আস্থা রেখেছিল। তাই সাফল্যের জন্য যেমন তিনি নন্দিত হবেন, ঠিক তেমনি ব্যর্থতার বোঝাটিও তাঁর কাঁধেই বর্তাবে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করব, কী হচ্ছে চারদিকে, কী বলছে মানুষ-সেটা বোধ হয় অধিকতর গুরুত্বের সঙ্গে বিশ্লেষণ করবেন তিনি। সরকারের দুই বছর পূর্তি উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেছিলেন ধৈর্য ধারণ করার জন্য। বলেছিলেন, প্রতিশ্রুতি তিনি পালন করবেনই। যাঁরা ক্ষমতার বলয়ের বাইরে থেকে গত দুই বছরের ঘটনাবলি অবলোকন করছেন, পর্যালোচনা করছেন পরিস্থিতি এবং বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রচারমাধ্যমে নানাবিধ পরামর্শ দিয়ে চলেছেন কিংবা সতর্কবাণী উচ্চারণ করে যাচ্ছেন, তাঁদের সেই পরামর্শ ও সতর্কবার্তা আমলে নিতে হবে। সরকার এবং দলের যদি কোথাও কোনো ভুল হয়ে থাকে, সেটা তুলে ধরার অর্থ যে সরকার-বিরোধিতা নয় বরং সরকারকে সহযোগিতা করে তার ভ্রম সংশোধনের ক্ষেত্র প্রস্তুত করা-এই অমোঘ সত্যটি বিশাল রাজনৈতিক ঐতিহ্যের অধিকারী শেখ হাসিনার না বোঝার কথা নয়। পৌরসভা নির্বাচনে যে ফল হয়েছে, সেই ফল তো দল কিংবা মহজোটের কারো কাছেই প্রত্যাশিত ছিল না। তাহলে কেন হলো এমনটি? অত্যন্ত ঠাণ্ডা মাথায় আবেগতাড়িত না হয়ে আত্মবিশ্লেষণের মাধ্যমে পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে :
শুরু করা যাক পৌর নির্বাচন থেকেই। ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় মাত্র দুই বছরের মধ্যেই নির্বাচনের রায় শাসক মহাজোট কিংবা বলা যায় আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধেই গেছে। অবশ্য সরকারকে এই সাধুবাদ দেওয়া যায় যে ক্ষমতাসীন থাকা অবস্থায়ও নির্বাচনকে প্রভাবিত করার কোন প্রয়াস তেমনভাবে পরিলক্ষিত হয়নি। এবং নির্বাচন কমিশন প্রভাবমুক্ত হয়ে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করেছে। ফলে নির্বাচন কমিশন নামক প্রতিষ্ঠানটির মর্যাদাপ্রাপ্তি ঘটেছে, যা অতীতে আমরা কখনো পাইনি এবং গণতন্ত্র নামক ব্যবস্থাটি বাংলাদেশে শক্ত ঘাঁটির ওপরে দাঁড়ানোর সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু এই পৌর নির্বাচনের ফল যে বার্তাটি আমাদের কাছে পৌঁছে দেয় তা হলো, আওয়ামী লীগই আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বিপজ্জনক প্রতিপক্ষ। আর এই প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ও আদর্শিক প্রতিপক্ষকে ছাপিয়ে অনেক বেশি আলোচনার বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব বিভিন্ন সময়ে বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলছে বটে, কিন্তু তাতে তো ঠগ বাছতে গাঁ উজাড়ই হবে। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজন বিদ্রোহী প্রার্থী সৃষ্টির উৎস উদ্ঘাটন করা। এ থেকে বোঝা যায়, দলের সাংগঠনিক কাঠামোটি প্রচণ্ডভাবে নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। আওয়ামী লীগের সবচেয়ে উজ্জ্বল দিকটি ছিল এর সাংগঠনিক শক্তি। একসময়, সেই পঞ্চাশের দশকে স্বয়ং বঙ্গবন্ধু ছিলেন এই সাংগঠনিক কাঠামো নির্মাণের রূপকার। তাঁর সঙ্গে ছিলেন তাজউদ্দীন আহমদের মতো একজন মেধাবী, পরিশ্রমী সংগঠক। পরবর্তী সময়ে ষাটের দশকে একঝাঁক উদ্যমী রাজনৈতিক সংগঠক এই আওয়ামী লীগকে বলিষ্ঠ প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছিলেন। শেখ ফজলুল হক মণি, ওবায়দুর রহমান, শাহ্ মোয়াজ্জেম, সিরাজুল আলম খান, আবদুর রাজ্জাক, আমীর হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মযহারুল হক বাকী, খালেদ মোহাম্মদ আলী এ সংগঠনটিকে পৌঁছে দিয়েছিলেন গ্রামবাংলার প্রত্যন্ত কন্দরে। তাঁদের মধ্যে অনেকে পরবর্তী সময়ে দল থেকে ছিটকে গিয়ে ভ্রান্তির পঙ্কে নিমজ্জিত হয়েছেন আর অনেকে অমূল্যায়িত হয়ে নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছেন অথব অবমূল্যায়িত অবস্থায় অভিমানাহত হয়ে আছেন। দলকে তার অতীত গৌরবে ফিরিয়ে আনতে হলে দরকার পুনর্মূল্যায়ন এবং পুনর্গঠনের।
বিদ্রোহী প্রার্থী তখনই হয় যখন ক্ষুদ্র স্বার্থ বৃহৎ স্বার্থকে গ্রাস করে। আমরা যদি ইতিহাসের দিকে তাকাই তাহলে দেখব, খ্রিস্টপূর্ব ৩২৭ অব্দে গ্রিক বীর আলেকজান্ডার সুদূর ম্যাসিডোনিয়া থেকে ভারতবর্ষে এসে ভারত বিজয় করতে পেরেছিলেন কেবল এ কারণে যে সে সময় ভারতের ছোট ছোট রাজ্যগুলো অন্তর্কলহে নিমগ্ন ছিল। তাদের ভেতরকার আত্মঘাতী অন্তর্কলহ এত তীব্র ছিল যে রাজা অম্ভি তাঁর বিশাল হস্তীবাহিনী দিয়ে আলেকজান্ডারকে রাজা পুরুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে সাহায্য করেছিলেন। আমরা যদি এই পৌর নির্বাচনের দিকে তাকাই তাহলে তো প্রায় একই চিত্র দেখব। রাজনৈতিক এবং আদর্শিক প্রতিপক্ষের বিজয় নিশ্চিত করার এক অস্বাভাবিক মহোৎসব শুরু হয়েছিল যেন। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন শুধু বিদ্রোহী প্রার্থীদের ওপর দোষ দিলে হবে না, নিজেদের ত্রুটিও দেখতে হবে। কাদের কোন বিবেচনা থেকে এ কথা বলেছিলেন জানি না, তবে আড়ালে-আবডালে যেসব দুর্বলতার ঘুণপোকা বাসা বেঁধেছে, তার প্রতিই অঙ্গুলি নির্দেশ করেছেন সম্ভবত। দলের এই বিপন্ন সময়ে নিজেদের মধ্যে অশ্রদ্ধা ও অবিশ্বাসের প্রাচীর না তুলে আস্থা ও ঐক্যের সেতু প্রতিষ্ঠা করার কথাই তিনি প্রকারান্তরে বলেছেন হয়তো বা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উচিত হবে এসব বিষয় মমতার সঙ্গে একান্তভাবে বিবেচনা করা। একটা কথা তো বুঝতে হবে যে প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে প্রদত্ত ভাষণে দুই বছরের সাফল্য তুলে ধরার পরও পৌর ভোটে এ রেজাল্ট হয়েছে। এর অর্থ দাঁড়ায় এই যে হয়তো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বর্ণিত সাফল্যগাথা মানুষকে প্রভাবিত করতে পারেনি, কারণ তারা বাস্তব জীবনে এর কোনো প্রতিচ্ছাপ খুঁজে পায়নি অথবা প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের মর্মবাণী সাধারণ মানুষের কাছে সঠিকভাবে পৌঁছতে পারেনি। ষাটের দশকে শেখ মুজিব-তাজউদ্দীনের বক্তব্য অতিদ্রুত বাংলার আনাচকানাচে ছড়িয়ে যেত এবং সেগুলোর বাহন হতেন দলের মধ্যবর্তী সারির অসংখ্য নেতা-কর্মী। তখন তো এত আধুনিক প্রযুক্তি ছিল না, যোগাযোগব্যবস্থা এত চমৎকার ছিল না। অথচ এখন এত সর্বাধুনিক যোগাযোগব্যবস্থা সত্ত্বেও দলের সাফল্য, দলের সিদ্ধান্ত কিংবা চিন্তাভাবনা কেবল টেলিভিশনের ম্যাজিকবাক্সের মধ্যেই আটকে থাকে! এর অর্থই তো হচ্ছে দলের সাংগঠনিক কাঠামো বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। দলের প্রার্থী নির্বাচনজনিত দুর্বলতা তো অবশ্যই খতিয়ে দেখা উচিত।
চট্টগ্রামের মেয়র নির্বাচনের কথাও এ প্রসঙ্গে বিবেচনায় নেওয়া দরকার। কেন এবং কোন বিবেচনার কারণে নিবেদিতপ্রাণ দলীয় কর্মী বৈরী হয়ে যায় সেটা বিশ্লেষণ করা এবং তদনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা তো অত্যাবশ্যকীয় ছিল। যখন পরকে আপন করার আয়োজন করা প্রয়োজন, তখন তো আপনকে পর করার পরিণাম আত্মহননেরই সমার্থক হবে। আমরা দেখেছি, চট্টগ্রামে মেয়র প্রার্থী নির্বাচনে দলীয় নেতৃত্বকে কতখানি দ্বিধাগ্রস্ত হতে হয়েছে, দেখেছি দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণার ব্যাপারে কতখানি কুণ্ঠা কাজ করেছে। সাংগঠনিক কাঠামো যদি শক্তিশালী হতো তাহলে প্রার্থী নির্বাচন কিংবা প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার ক্ষেত্রে কোনো দোদুল্যচিত্ততা পরিলক্ষিত হতো না।
বিপর্যয় ঘটেছে সুপ্রিম কোর্ট বার কাউন্সিল নির্বাচনের ক্ষেত্রেও। সঠিক ও যোগ্য প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে একই ক্ষুদ্র এবং মায়োপিক দৃষ্টিভঙ্গি কাজ করেছে। এর ফলে প্রথমেই প্রমাণিত হয়েছে, আওয়ামী লীগ আত্মহনন শিল্পে কতখানি নিপুণ।
দল ও সরকারের কাছ থেকে মানুষের প্রত্যাশা সম্পর্কে দল এবং সরকার কতখানি মূল্যায়ন করেছে জানি না, তবে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের একজন নিবিড় পর্যবেক্ষক হিসেবে মনে করি, সরকারের উচিত সমস্যা নিরসনে স্বল্পমেয়াদি যা দ্রুত দৃশ্যমান এবং দীর্ঘমেয়াদি যা ভবিষ্যতে ফলপ্রদ-এ দুই ধরনের পদক্ষেপই গ্রহণ করা। এই স্বল্পমেয়াদি এবং দ্রুত দৃশ্যমান ব্যবস্থাপনার মধ্যে থাকা উচিত দ্রব্যমূল্যকে মানুষের ক্রয়সীমার মধ্যে রাখা এবং সে জন্য সাময়িকভাবে ভর্তুকি প্রদানেরও ব্যবস্থা করা, যানজট নিরসনে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া, নগরজীবনে সুশৃঙ্খল ও স্বস্তিদায়ক কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা-যা থেকে নাগরিকরা অতীতের সঙ্গে বর্তমানের সুস্পষ্ট ব্যবধান নির্ণয় করতে পারবে। এর বদলে মানুষের সামনে কেবল ২০১৪ সাল, ২০১৮ সাল, ২০২১ সালের বিশাল বিশাল কল্পকাহিনী তুলে ধরা হয়েছে এবং স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনাকে নানা প্রকার আমলাতান্ত্রিক জটিলতার জালে জড়িয়ে দুঃসাধ্য এবং দুর্গম করে ফেলা হয়েছে। এর ফলে মানুষের হতাশা বেড়েছে, সরকার ও দলের ওপর মানুষের আস্থা হ্রাস পেয়েছে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ যখন সরকার গঠন করে, তখন সেই সরকারের সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব ছিল গুড গভর্ন্যান্স। সেই সরকারের সুব্যবস্থাপনা এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসা অর্জন করেছিল। কিন্তু এবারে এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ঘাটতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। উচিত হবে, ওই সময়কার ব্যবস্থাপনার অন্তর্নিহিত সত্যটি তুলে এনে বর্তমানের প্রেক্ষাপটে এর যথাসাধ্য প্রয়োগ ঘটানো। এই মুহূর্তে আরো প্রয়োজক মন্ত্রিপরিষদ ও দলীয় কাঠামোর ব্যাপক পরিবর্তন সাধন করে গতিশীল এবং জনগণ ও দলীয় কর্মীদের আস্থাভাজন সরকার ও দল পুনর্বিন্যাস করা।
ছিয়ানব্বইয়ের আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ দুটি বছর ছিল অন্ধ আত্মবিশ্বাসের কারণে বাস্তব পরিণতি সম্পর্কে অবজ্ঞা প্রদর্শনের কাল। এর ফলে এক ভ্রান্তির নাগপাশ থেকে আরেক ভ্রান্তির জালে জড়িয়ে পড়ার ঘটনা ঘটেছে একের পর এক। তখন আমরা দেখেছি, কিভাবে দল এবং দলের অঙ্গপ্রতিষ্ঠানগুলো বেপরোয়া আচরণ করেছে। বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ করা যায়, এই সরকারের প্রথম দুটি বছর ছিল বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ দুই বছরেরই পুনরাবৃত্তি। ওই সময় দলীয় শৃঙ্খলা দুর্বল হয়ে পড়ার কারণে জঙ্গিদের উপর্যুপরি ভয়াবহ হামলা চলতে থাকে। এ দুই বছর জঙ্গিবিরোধী অভিযান জোরদার হলেও দলের বিভিন্ন স্তরে অন্তর্বিরোধ ও প্রতিহিংসাপরায়ণতা থেকে এ কথা মনে করাও অমূলক হবে না যে কোনো এক অদৃশ্য ইঙ্গিতেই হয়তো ঘটছে অনেক ঘটনা এবং আত্মগোপনকারী জঙ্গিদের নিরাপদ গোপন কুটির নির্মিত হয়ে গেছে সরকার এবং দলের কোনো কোনো স্তরে। কে জানে কোনো দুর্বল মুহূর্তে ওরা বেরিয়ে আসবে কি না বাইরে। ছিয়ানব্বইয়ের সরকারের শেষ দুই বছরে সরকার ও আওয়ামী লীগ ক্রমান্বয়ে ব্যবসায়ীমহলের কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছিল। আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক ভিত্তির একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা দীর্ঘকাল পর্যন্ত নির্ভর করছিল ক্ষুদ্র-মাঝারি ব্যবসায়ী এবং জাতীয় ধনীদের ওপর। শেষ দুই বছর আমরা সে ক্ষেত্রে একটা বিচ্ছিন্নতা লক্ষ করেছিলাম। এবার এই মহাজোট সরকারের প্রথম দুই বছরে আমরা লক্ষ করছি এমন সব অর্থনৈতিক পদক্ষেপ এবং শ্লথ নীতিমালা-যা ব্যবসায়বান্ধব হওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি করেও কার্যকর হতে পারছে না। মন্ত্রীদের কারো কারো অতিকথন কিংবা অবান্তর বাক্যচয়ন অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। মনে হয় পরিস্থিতি বিশ্লেষণের সময় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উচিত হবে এমন বিষয়ও ভেবে দেখা।
বলেছিলাম স্বল্পমেয়াদি এবং দৃশ্যমান পরিকল্পনার কথা। বাঙালি চরিত্রের মধ্যে তাৎক্ষণিক প্রাপ্তির একটি প্রবণতা আছে। স্বয়ং কবিগুরুও বলেছেন-
‘যত বড় হোক ইন্দ্রধনু সে,/সুদূর আকাশে আঁকা
আমি ভালবাসি মোর ধরণীর/প্রজাপতিটির পাখা।’
পৌরসভা নির্বাচনের ফল সরকার ও দলকে যে সুস্পষ্ট সতর্কবার্তা প্রেরণ করেছে, তা থেকে অবশ্যই শিক্ষা নিতে হবে।
কারণ এই সরকারের বিপর্যয় কিন্তু সর্বশেষ বিচারে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তিরই বিপর্যয়। আওয়ামী লীগ জিতলে একাই জেতে কিন্তু হারলে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তি হারে-এ প্রবাদপ্রতিম উক্তির পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে সেটাই প্রত্যাশিত। ওই হটেন্টট্ পাখির মতো চিৎ হয়ে পা দিয়ে কি মেঘের পতন ঠেকানো যায়, যদি আকাশ সত্যি সত্যিই মাথায় ভেঙে পড়ে?
=============================
ফেলানীর মৃত্যুতে পশ্চিমবঙ্গ- নিজ ভূমেই প্রশ্নবিদ্ধ ভারতের মানবিক চেহারা  বাজার চলে কার নিয়ন্ত্রণে  উঠতি বয়সের সংকট : অভিভাবকের দায়িত্ব  বিকল্প ভাবনা বিকল্প সংস্কৃতি  অন্ধত্ব ও আরোগ্য পরম্পরা  খুলে যাক সম্ভাবনার দুয়ার  কক্সবাজার সাফারি পার্কঃ প্রাণীর প্রাচুর্য আছে, নেই অর্থ, দক্ষতা  জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের গুপ্ত জীবন  ছাব্বিশটি মৃতদেহ ও একটি গ্রেপ্তার  ৩৯ বছর পরও আমরা স্বাধীনতাটাকে খুঁজছি  সাইবারযুদ্ধের দামামা  সরলতার খোঁজে  সেই আমি এই আমি  আমেরিকান অর্থনীতি ডলারের চ্যালেঞ্জ  বাংলাদেশ-ভারত যৌথ ইশতেহার- আশানুরূপ সুফল নেই এক বছরেও  ন্যায়ভিত্তিক সমাজ ও রাজনীতি  মাস্টারদা সূর্যসেন ও যুব বিদ্রোহ সাতাত্তর  রসভা নির্বাচন ২০১১: একটি পর্যালোচনা  ড. ইউনূস অর্থ আত্মসাৎ করেননি  প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির ৩৯ বছর  স্বাধীনতাযুদ্ধের 'বিস্মৃত' কূটনৈতিক মুক্তিযোদ্ধারা  আতঙ্কে শেয়ারবাজার বন্ধঃ বিক্ষোভ  আতঙ্কের রাজত্ব কায়েম হয়েছে  মানবকল্যাণ আমাদের মন্ত্র  ট্রানজিট নিয়ে সবে গবেষণা শুরু  ভারতের একতরফা সেচ প্রকল্পঃ বাংলাদেশের আপত্তিতে বিশ্বব্যাংকের সাড়া  আমলাদের যাচ্ছেতাই বিদেশ সফর  সরকারের ব্যর্থতায় হতাশাঃ বিরোধী দলের ব্যর্থতায় বিকল্পের অনুপস্থিতি  ক্ষমতা ও গণতন্ত্র  পানি সংকট পানি বাণিজ্য  ২০১০ সালের অর্থনীতি কেমন গেল  গণতান্ত্রিক বিকাশের পথে বাধা অনেক  কপাটে তালা দিয়ে কেন এই মৃতু্যর আয়োজন  বিজয়ের অর্থনীতি ও সম্ভাবনা  মুক্তিযুদ্ধের বিজয়লক্ষ্মীর মুখোমুখি  একেই কি বলে আমলাতন্ত্র?  আত্মসমর্পণের সেই বিকেল  আমরা তাঁদের ভুলতে পারি না  সংবিধানের অনেক বক্তব্য পারস্পরিক সংঘাতমূলক  পরাশক্তির বিরুদ্ধে এক ‘ভবঘুরের’ স্পর্ধা



দৈনিক কালের কন্ঠ এর সৌজন্যে
লেখকঃ আবেদ খান

এই আলোচনা'টি পড়া হয়েছে...
free counters

No comments

Powered by Blogger.