যুক্তরাষ্ট্র ও চীনকে স্নায়ুযুদ্ধের মানসিকতা ত্যাগ করতে হবে

চীনের প্রেসিডেন্ট হু জিনতাও বলেছেন, স্নায়ুযুদ্ধের মানসিকতার কারণে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র দুই দেশেরই ক্ষতি হচ্ছে। এই মানসিকতা ত্যাগ করে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করলে উভয় দেশই লাভবান হবে। চার দিনের যুক্তরাষ্ট্র সফর শুরুর প্রাক্কালে তিনি এ কথা বলেছেন।
দীর্ঘ প্রতীক্ষিত সফরে গতকাল মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে রওনা হন প্রেসিডেন্ট জিনতাও। এর আগে বেইজিংয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘দুই দেশের মধ্যে সুসম্পর্ক থাকলে আমরা লাভবান হব এবং বিরোধিতায় ক্ষতিগ্রস্ত হব। কাজেই, প্রথমত আমাদের আলোচনা-সংলাপ বাড়াতে হবে এবং এর মধ্য দিয়ে কৌশলগত পারস্পরিক আস্থা জোরদার করতে হবে। দ্বিতীয়ত, আমাদের স্নায়ুযুদ্ধের মানসিকতা ত্যাগ করতে হবে এবং একে অপরের উন্নতিকে বস্তুনিষ্ঠতা ও যৌক্তিকতার নিরিখে বিবেচনা করতে হবে।’
গতকাল রাতেই জিনতাওয়ের সম্মানে হোয়াইট হাউসে নৈশভোজের আয়োজন করার কথা প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার। ওই নৈশভোজে দুই দেশের শীর্ষ কর্মকর্তাদেরও উপস্থিত থাকার কথা।
আজ বুধবার ওবামা-জিনতাও বৈঠক হবে ওভাল অফিসে। এ ছাড়া সেখানে রাষ্ট্রীয় নৈশভোজের আয়োজন করা হয়েছে। এরপর শিকাগো যাবেন জিনতাও। সেখানে বৈঠক করবেন ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে। আগামী শুক্রবার শেষ হবে তাঁর চার দিনের যুক্তরাষ্ট্র সফর।
যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে জিনতাওয়ের বেইজিং ত্যাগের পর চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হং লেই বলেন, ‘এটা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটা সফর। এ সফরের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে ইতিবাচক ও সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্কের বিকাশ ঘটবে। নতুন যুগে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নতুন পথে মোড় নেবে এবং সহযোগিতার নতুন মাত্রা বৃদ্ধি পাবে।’
অপ্রকাশিত সূত্রের বরাত দিয়ে চীনা গণমাধ্যম গতকাল জানিয়েছে, জিনতাওয়ের যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় চীনের কাছে বোয়িং কোম্পানির বিমান বিক্রিসহ দুই দেশের মধ্যে অনেকগুলো চুক্তি স্বাক্ষরিত হতে পারে। এ ছাড়া দ্রুত গতির রেলপথ তৈরিতে যুক্তরাষ্ট্রকে চীনের সহযোগিতার বিষয়েও একটি চুক্তি হতে পারে বলে জানিয়েছে চায়না ডেইলি। গত সেপ্টেম্বরে চীন সফরের সময় যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের গভর্নর আর্নল্ড শোয়ার্জেনেগার জানান, তাঁর রাজ্যে ভবিষ্যতে দ্রুতগতির রেলের অবকাঠামো তৈরিতে চীন বিনিয়োগ করবে বলে তিনি আশা করছেন।
জিনতাওয়ের সফর শুরুর এক দিন আগে গত সোমবার কয়েকটি মার্কিন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রায় ৬০ কোটি মার্কিন ডলারের চুক্তি করেছে চীন। এ ছাড়া গতকাল সরকারিভাবে জানানো হয়, আরও চুক্তির চেষ্টা চলছে। চীনের কোনো শীর্ষ নেতার বিদেশ সফরের আগে ওই দেশের সঙ্গে কিছু চুক্তি করে চীন। তারা আশা করে, এর মাধ্যমে সফরের সময় আলোচনায় একটি ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
চায়না ডেইলি জানিয়েছে, ওবামা ক্ষমতা নেওয়ার পর গত দুই বছরে যুক্তরাষ্ট্রে এটাই জিনতাওয়ের প্রথম রাষ্ট্রীয় সফর। যদিও দুই বছরে দুই নেতার মধ্যে এটা অষ্টম বৈঠক। এই বৈঠকে দুই নেতার আলোচনা তাইওয়ানের কাছে মার্কিন অস্ত্র বিক্রি, চীন-মার্কিন বাণিজ্যিক বৈষম্য, কোরিয়া উপদ্বীপসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক সমস্যা এবং বিশ্ব আর্থিক মন্দাবস্থা ও জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বিষয়গুলো গুরুত্ব পাবে।

No comments

Powered by Blogger.