জার্মানি জুড়ে আনন্দের লহর

রোববারের পর শনিবার—ক্যালেন্ডারের পাতার পরপর দুটি দিন অমর হয়ে থাকল জার্মান ফুটবলের ইতিহাসে। গত রোববার তারা ৪৪ বছর পর ইংল্যান্ডকে বিশ্বকাপে হারিয়ে মধুর প্রতিশোধ নিল। আর গতকাল শনিবার তাদের সামনে উড়ে গেল ‘ফুটবল-ঈশ্বর’ ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনা। এই জয়ের আনন্দে ভাসছে গোটা জার্মানি। সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হয়েছে উৎসব, চলবে সারা রাত। আজকের রাতটা অন্তত কেউ ঘরে কাটাতে রাজি নয়।
এবারের বিশ্বকাপে জার্মানিকে কেউ গণনার মধ্যে আনেননি। কিন্তু দলের কোচ জোয়াকিম লো ছিলেন, আছেন নিজের লক্ষ্যে অবিচল। জার্মান ভাষায় ‘লো’ শব্দটির অর্থ সিংহ হলেও আপাদমস্তক ভদ্রলোক জোয়াকিম লো এখন জার্মানির অন্যতম নায়ক। সুদূর দক্ষিণ আফ্রিকায় বসে তিনি তা অনুভব করছেন। তাঁকে ও তাঁর দলকে উৎসাহিত করতে মাঠে উড়ে গেছেন জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মেরকেল।
গতকাল সকাল থেকেই জার্মানি জুড়ে আট কোটি মানুষ বসেছিল প্রার্থনায়, বসেছিল দলের জয় কামনায়। স্থানীয় সময় বিকেল চারটা থেকে পথঘাট, স্টেশন, দোকানপাট—সবই সুনসান হয়ে পড়ে। আসলে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে বিশাল জয় জার্মানদের প্রত্যাশাকে বাড়িয়ে দিয়েছিল বহু গুণে। তার পরও ভয় ছিল, কারণ প্রতিদ্বন্দ্বীর নাম আর্জেন্টিনা। যে দলে আবার মেসির মতো বিশ্বসেরা তারকা আছেন। কিন্তু জার্মানির এই তরুণ দলটি তাদের সাফল্যের পতাকা এভাবে উঁচিয়ে রাখবে, তা কেউ ভাবেননি। সে জন্য বোধহয় জার্মানি জুড়ে আনন্দের মাত্রাটা তীব্রতর।
গতকালকের রৌদ্রোজ্জ্বল বিরল দিনটি কেউ ঘরে বসে নষ্ট করতে রাজি ছিল না। অসংখ্য মানুষ দলে দলে বেরিয়ে ছিল রাস্তার ধারে, খোলা মাঠে একসঙ্গে বসে প্রিয় দলের খেলা দেখতে। বিফলে যায়নি তাদের সে উদ্যোগ। প্রত্যাশার সঙ্গে প্রাপ্তির এমন যোগ বোধহয় খুব কম ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে। হ্যানোভারের বড় পর্দায় খেলা দেখতে দেখতে বারবার মনে হয়েছে, ঈশ্বর বোধহয় জার্মানদের প্রার্থনা শুনেছেন। তাই তাদের বিমুখ করেননি। খেলার ৯০ মিনিটই তারা আনন্দে মেতে থাকতে পেরেছে।
খেলার খেলা শুরুর এক ঘণ্টা আগেই জার্মানির সবচেয়ে বড় পাবলিক ভিউ বার্লিনের বার্লিন গেট প্রাঙ্গণে জড়ো হয়েছিল সাড়ে তিন থেকে চার লাখ মানুষ। একই অবস্থা হামবুর্গ, হ্যানোভার, ফ্রাঙ্কফুর্ট, মিউনিখ, স্টুটগার্ড, কোলন, হাইডেলবার্গ আর ছোট-বড় সব শহরে। গতকাল দিনে যথেষ্ট গরম থাকায় ছিল ঠান্ডা পানীয়র ব্যবস্থা। বিভিন্ন শহর কর্তৃপক্ষ পাবলিক প্লেসে পানি ছিটানোর ব্যবস্থা করেছিল।
খেলা শেষ হওয়ার এক ঘণ্টা পর যখন এই লেখা লিখছি, তখন জার্মানি জুড়ে রাস্তাঘাট, ফাঁকা প্রাঙ্গণে ভাসছে কালো-লাল-সোনালি রঙের জার্মানির জাতীয় পতাকা। বিজয়ের আনন্দে আত্মহারা মানুষ রৌদ্রোজ্জ্বল দিনের মতো আনন্দের রাতটাও ঘরের বাইরেই কাটাবে। কারণ, ঈশ্বর যে গতকাল ‘ফুটবল-ঈশ্বর’ নন, তাদের প্রার্থনাই শুনেছেন।

No comments

Powered by Blogger.