সালাউদ্দিন-টিপু দুজনই অবাক



‘আর্জেন্টিনাকে কোনো দলই মনে হয়নি জার্মানির বিপক্ষে।’
‘আর্জেন্টিনার এমন পরাজয় কল্পনা করিনি।’
প্রথম কথাটি কাজী সালাউদ্দিনের। দ্বিতীয়টি গোলাম সারোয়ার টিপুর। প্রথম আলোর পাঠকদের জন্য বিশ্বকাপের ম্যাচ বিশ্লেষণ করে আসছেন তাঁরা দুজন। বাংলাদেশের সেরা দুই ফুটবল-বিশ্লেষক বিশ্বকাপ থেকে এভাবে আর্জেন্টিনার বিদায় দেখার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না।
জার্মানির বিপক্ষে সম্ভাব্য জয়ী হিসেবে আর্জেন্টিনাকেই এগিয়ে রেখেছিলেন দুজন। জার্মানির কাছে আর্জেন্টিনা হারতেই পারে। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। তবে ম্যারাডোনা-মেসির আর্জেন্টিনার চার গোলে বিধ্বস্ত হওয়াটা আর সবার মতো বিস্মিত করেছে দুজনকেই।
সালাউদ্দিন বলছেন, ‘আর্জেন্টিনার এত বড় পরাজয় ভাবতে পারিনি। এক-দুই গোলে হারলে বলার কিছু ছিল না। তাই বলে চার গোল!’ গোলাম সারোয়ার টিপুর কথাও প্রায় একই, ‘চার গোল বেশি হয়ে গেছে। ভাবা যায়, এই সময়ে এসে আর্জেন্টিনার মতো দল চার গোল খাবে!’
কেন এভাবে উড়ে গেল ম্যারাডোনার দল? সালাউদ্দিনের চোখে এই ম্যাচই ছিল আর্জেন্টিনার আসল পরীক্ষা, ‘আগের চারটি ম্যাচে তো আর্জেন্টিনাকে সে অর্থে তেমন কোনো পরীক্ষাই দিতে হয়নি। জার্মানির মতো পেশাদার দলের সামনে পড়লেই দিতে হয় স্নায়ুর পরীক্ষা।’ গোলাম সারোয়ার টিপু পুরো কৃতিত্ব দিলেন জার্মানিকে, ‘এটাই হচ্ছে জার্মান ফুটবলের আসল সৌন্দর্য। পরিপূর্ণ পেশাদার পারফরম্যান্স দেখাল প্রয়োজনের সময়।’
যত যাই হোক, চার গোল হজম করা তো একটু অপ্রত্যাশিত ব্যাপারই। আর্জেন্টিনার সমস্যা ছিল কেথায়? ‘ম্যাচের প্রথম থেকে শেষ মিনিট পর্যন্ত আর্জেন্টিনাকে খুঁজেই পাওয়া যায়নি। তারা কোনো ফুটবলই খেলেনি। প্রতিটি বিভাগেই আর্জেন্টিনাকে পরিষ্কার ব্যবধানে হারিয়েছে জার্মানি’—বলছেন সালাউদ্দিন। তাঁর পর্যবেক্ষণ, ‘মেসি-তেভেজদের জোকারের মতো লাগল। দিগ্ভ্রান্ত দৌড়াদৌড়িই করে গেল শুধু।’
গোলাম সারোয়ার টিপুর সার কথা প্রায় একই। তিনি একটু অন্যভাবে ব্যাখ্যা করলেন, ‘আর্জেন্টিনা ম্যাচে আছে, সেভাবে বোঝাই যায়নি। মাঝমাঠ থেকে তাদের ভেতরে ঢুকতে দেয়নি জার্মানরা। জায়গাগুলো বন্ধ করে দিয়েছে। মাঝমাঠে আর্জেন্টিনা গুছিয়েই উঠতে পারল না। বলা ভালো, আর্জেন্টিনাকে মাঝমাঠে কাজ করতে দেয়নি জার্মানরা। মেসির পায়ে বল গেলে তাকে ঘিরে ধরেছে চার-পাঁচজন। তেভেজকে ফাঁদে ফেলে অকার্যকর করে রেখেছে।’
এই জার্মানিতে মুগ্ধ সালাউদ্দিন, ‘আমি আগেও বলেছি, ১১ জন জার্মান একসঙ্গে দাঁড় করালে একটা ফুটবল দল হয়ে যায়। এই দেশের ফুটবল দল তো ভয়ংকরই হবে। ওদের শারীরিক সামর্থ্য অনেক বেশি। অবিরাম পরিশ্রম করে যেতে পারে। সেটারই প্রামাণ্য ছবি হয়ে থাকল এই ম্যাচ। এদিন যা ইচ্ছা, তা-ই করেছে জার্মানি।’
টিপুর চোখে জার্মানির রক্ষণের কাজ ছিল অসাধারণ, ‘ওরা সবাই মিলে রক্ষণ সামলেছে। আর আর্জেন্টিনার রক্ষণ দেখুন। পুরো উল্টো। ক্লোসা গোল করল, আবার রক্ষণকাজে এসে সাহায্য করল। কী বলব, অসাধারণ।’
সালাউদ্দিন বলছেন, ‘গোলরক্ষকের ভুল থেকে শুরু করে এমন ভুল নেই, যেটা করেনি আর্জেন্টিনা।’ ভুলগুলো কী? সেই ব্যাখ্যাতেই যেতে রাজি নন সালাউদ্দিন, ‘আর্জেন্টিনা একটা দল হয়ে খেললেই তো ভুল ধরার প্রশ্ন আছে। এই আর্জেন্টিনা তো আদতে একটা দলই ছিল না। কাজেই আলাদাভাবে ভুল বের করার দরকার মনে করছি না।’
আর্জেন্টিনার এই পরাজয়ের পর সালাউদ্দিনের মনে হচ্ছে, ‘ফুটবলে ইউরোপের আধিপত্যই প্রতিষ্ঠিত হলো। আগের বার ইউরোপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এবারও ইউরোপেই শিরোপা থাকার সম্ভাবনা বেশি। লাতিন আধিপত্যের দিক শেষ হয়ে গেল কি না, এ নিয়ে তর্ক শুরু হতে পারে।’
টিপুর কথা, ‘আর্জেন্টিনাকে গুঁড়িয়ে দিয়ে জার্মানরা প্রমাণ করল, তারা সত্যিই আলাদা এক দল। তা ছাড়া এদিন ফিনিশিং ভালো হয়ে যাওয়ায় জার্মানরা উজ্জীবিত হয়ে খেলেছে আরও। ফিনিশিং বাজে হলে, গোল না পেলে এই বিশ্লেষণটাই অন্যরকম হতে পারত।’
সবশেষে সালাউদ্দিন একটা কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘এর আগে আমি সব সময়ই বলেছি, আর্জেন্টিনা ভালো করবে। তবে বেশিদূর যেতে পারবে না। এই দলের শিরোপা জেতার মতো ধার নেই। আমার কথায় অনেক আর্জেন্টাইন সমর্থকই মন খারাপ করেছেন। জানি, তাঁদের এখন মন খারাপ। আর্জেন্টিনার এই বিদায় আমি চাইনি। তবে সত্যিটা হলো এই, আর্জেন্টিনা পারল না।’

No comments

Powered by Blogger.