বাংলাদেশসহ ৩৩টি স্বল্পোন্নত দেশ চীনে ৪৭৬২ পণ্যে শুল্কমুক্ত বাজারসুবিধা পেল

বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৩৩টি স্বল্পোন্নত দেশকে চীন তাদের বাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে বড় ধরনের সুবিধা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। এর ফলে এসব দেশ থেকে আমদানিযোগ্য চার হাজার ৭৬২টি পণ্য চীনে শুল্কমুক্তভাবে প্রবেশের সুযোগ পাবে।
১ জুলাই থেকে এই সুযোগ কার্যকর করা হয়েছে। চীন সরকারের এই সিদ্ধান্তের কথা বাংলাদেশে চীনা দূতাবাসের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়েছে।
সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য (এমডিজি) অর্জনের বিষয়ে জাতিসংঘের উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে চীন সরকার এলডিসিগুলোর জন্য বাজারসুবিধা দেওয়ার যে ঘোষণা করেছিল, চার হাজার ৭৬২টি পণ্যে এই শুল্কমুক্ত বাজারসুবিধা দেওয়ার মাধ্যমে সেই ঘোষণার বাস্তবায়ন করা হলো।
এই চার হাজার ৭৬২টি পণ্য বর্তমানে চীনের আমদানিকৃত কিন্তু শুল্কারোপযোগ্য মোট পণ্যের ৬০ শতাংশ।
এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে তৈরি পোশাক, চামড়া, প্লাস্টিক, কাঠ, পোলট্রি, ওষুধসামগ্রী প্রভৃতি। আর এই চার হাজার ৭৬২টি পণ্য চীনের বাজারে এলডিসিগুলোর মোট রপ্তানির প্রায় ৯৮ দশমিক ২০ শতাংশ।
২০০৮ সালে এলডিসিগুলো সমন্বিতভাবে তাদের মোট রপ্তানির ২৩ শতাংশ প্রেরণ করেছে চীনের বাজারে। তার মানে চীন এলডিসিগুলোর সবচেয়ে বড় বাজার হয়ে উঠছে।
বস্তুত ২০০১ সাল থেকে চীন এলডিসিগুলোকে ক্রমান্বয়ে শুল্কমুক্ত বাজারসুবিধা ও বিভিন্ন পণ্যে শুল্কছাড় সুবিধা দিয়ে আসছে। এবারের এই সুবিধা দেওয়ার মাধ্যমে চীন এলডিসিগুলোকে বড় ধরনের সুবিধা দিল।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার হংকং ঘোষণা অনুসারে, উন্নত ও সামর্থ্যবান উন্নয়নশীল দেশগুলো এলডিসিগুলোকে তাদের মোট রপ্তানিযোগ্য পণ্যের ৯৭ শতাংশ পর্যন্ত শুল্কমুক্ত বাজারসুবিধা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
কিন্তু হংকং ঘোষণার পূর্ণ বাস্তবায়ন করা হয়নি। তবে বিভিন্ন উন্নত ও কিছু উন্নয়নশীল দেশ এলডিসিগুলোকে ব্যাপকভিত্তিক বাজারসুবিধা দিয়েছে, যার মধ্যে চীন অন্যতম।
যে ৩৩টি দেশ বাজারসুবিধা পাবে তার মধ্যে ২৬টি হলো আফ্রিকার এলডিসি। বাকিগুলো হলো বাংলাদেশ, ইয়েমেন, পূর্ব তিমুর, সামোয়া, ভানুয়াতু, আফগানিস্তান ও নেপাল।
বাংলাদেশ কয়েক বছর ধরে চীনের বাজারে পণ্য রপ্তানি বাড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। যদিও যে পরিমাণ পণ্য রপ্তানি করা হয়, তার চেয়ে অনেক বেশি পণ্য আমদানি করায় দ্বিপক্ষীয় পণ্য বাণিজ্যে বিরাট বড় ঘাটতি রয়েছে।
২০০৮-০৯ অর্থবছরে বাংলাদেশ চীনে নয় কোটি ৭০ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানির বিপরীতে চীন থেকে ২৬৬ কোটি ৭৩ লাখ ডলারের পণ্য আমদানি করেছে। ফলে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২৫৬ কোটি ডলার।
অবশ্য ২০০৭-০৮ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো চীনের বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি ১০ কোটি ডলারে উন্নীত হয়। বিপরীতে সে বছরই প্রথম চীন থেকে পণ্য আমদানি ৩০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যায়।
ফলে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে ঘাটতি প্রায় ৩০০ কোটি ডলারের কাছাকাছি গিয়ে ঠেকে।
তবে চীন যে এবার চার হাজার ৭৬২টি পণ্যে শুল্কমুক্ত বাজারসুবিধা দিল, তা বাংলাদেশের রপ্তানি সম্প্রসারণের নতুন সুযোগ তৈরি করে দেবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
বিশেষ করে তৈরি পোশাক, পাট, চামড়াসহ প্রধান রপ্তানি পণ্যগুলো চীনের বাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা পাবে।
৩৩টি এলডিসির মধ্যে সক্ষমতার বিচারে বাংলাদেশই সবচেয়ে এগিয়ে আছে বলেও মনে করেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাই এই সুযোগ কাজে লাগানো গেলে ভবিষ্যতে চীনে পণ্য রপ্তানি বাড়বে বলেও আশাবাদী তারা।
বাংলাদেশ নিট পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) সভাপতি ফজলুল হক মনে করেন, এতগুলো পণ্যে শুল্কমুক্ত বাজারসুবিধা একটা বড় ধরনের সম্ভাবনা তৈরি করেছে।
চীনের বাংলাদেশি পোশাকের প্রদর্শনী আয়োজনের অভিজ্ঞতা থেকে ফজলুল হক বলেন, চীনা ভোক্তারা বাংলাদেশি পোশাকের বিষয়ে আগ্রহী। কাজেই শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার কাজে লাগানো গেলে বাংলাদেশ দীর্ঘ মেয়াদে লাভবান হবে। বিশেষ করে চীনের নিম্ন ও মধ্য আয়ের ভোক্তাশ্রেণীর জন্য দামে-মানে উপযোগী পোশাক তৈরির ক্ষমতা বাংলাদেশের আছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ফজলুল হক অবশ্য পণ্য জাহাজীকরণ তথা পরিবহনকে একটা বড় বাধা বলে মনে করেন। তাঁর মতে, সাংহাই বন্দর দিয়ে চীনের ভেতরে পণ্য পাঠাতে বেশ সময় লেগে যায়।

No comments

Powered by Blogger.