ব্রাজিলের কাছে চাওয়াটা আরও বেশি

শেষ পর্যন্ত আমার আশঙ্কাই সত্যি হয়েছে। ইতালির প্রথম ম্যাচের আগে লিখেছিলাম, ম্যাচটা ১-১ ড্র হবে। যুক্তিবোধ তা-ই বলছিল। কিন্তু ইতালি ড্র দিয়ে শুরু করুক, সেটি আমি মন থেকে অবশ্যই চাইনি।
প্যারাগুয়ে ম্যাচে ড্রয়ের পরও কিন্তু ইতালির খেলা আমার ভালোই লেগেছে। তবে মুষলধারে বৃষ্টি স্বাভাবিক খেলা খেলতে দেয়নি। প্রথমার্ধে আলকারাজের গোলও ইতালিকে ঝামেলায় ফেলেছিল। ম্যাচে একটা সুযোগ পেয়ে সেটিই কাজে লাগিয়েছে ওরা।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আজও লিপ্পি আগের ম্যাচের ছকেই খেলাবেন বলে আমার ধারণা। বুফনের জায়গায় থাকবে কেবল ক্যালিয়ারির তরুণ গোলরক্ষক মার্চেত্তি। জামব্রোত্তা, ক্যানাভারো, চিয়েলিনি আর ক্রিসিতোরা গত ম্যাচে ভালো খেলেছে। গত ম্যাচে গোল করে সমতা ফেরানো ডি রসি আমার চোখে সেরা খেলোয়াড়। ডান উইংয়ে পেপের খেলা ছিল মুগ্ধতা ছড়ানো। তবে ইয়াকুইন্তা আর জিলার্দিনোর পেছনে খেলা মন্টোলিভো আর মারচিসিওকে খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছে না। ইতালিয়ান ফরোয়ার্ডদেরও অবশ্য জাল খুঁজে পেতে কষ্ট করতে হচ্ছে। আজও একই ঘটনা ঘটলে লিপ্পি হয়তো বাধ্যই হবেন পাৎজিনি আর ডি নাতালেকে আগে নামাতে।
ইতালির বিপক্ষে এক পয়েন্ট পেলেও বর্তে যাবে নিউজিল্যান্ড। ফলে ওরা আজ রক্ষণাত্মক ফুটবলই খেলবে। লেসেন, স্মিথ, বার্টস আর ভিচেলিচ কিউইদের রক্ষণ সামলায়। গত ম্যাচে অতিরিক্ত সময়ে গোল করা রিড ডিফেন্ডারদের নেতৃত্বে থাকছে। গত বছর একটি প্রীতি ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের স্ট্রাইকার কিলেন ইতালিকে রীতিমতো তুলির নাচন নাচিয়েছিল। ওই ম্যাচে জোড়া গোলও করেছিল। বাতাসে স্মেল্টজও ভয়ংকর। আমার ধারণা, আজ এরা সেটপিস থেকে গোল বানানোর চেষ্টায় মত্ত থাকবে। অবশ্য সামগ্রিকভাবে বিবেচনা করলে ইতালির খেলোয়াড়েরাই মানের দিক থেকে অনেক এগিয়ে। আজ চ্যাম্পিয়নদের সহজ একটা জয়ই আশা করছি। আশা করছি, আগের পূর্বানুমানের মতো আজও আমার পূর্বানুমান লেগে যাবে।
উত্তর কোরিয়ার বিপক্ষে বিশ্বকাপের ফেবারিট যে খেলাটা খেলেছে সেটিকে নিখুঁত বলা চলে, মনোমুগ্ধকর নয়। কাকা আর ফ্যাবিয়ানো এখনো নিজেদের সেই ছন্দটা খুঁজে পায়নি। কেবল রবিনহোকেই দেখে মনে হয়েছে নিজের সেরা ফর্মের কাছাকাছি আছে। মাইকনের গোলের পর শীতের কোট পরে সাইডলাইনে দাঁড়িয়ে থাকা কোচ কার্লোস দুঙ্গাকে দেখে মনে হয়েছে, যেন তাঁর বুক থেকে পাথরবোঝা নেমে গেছে। ওদের দ্বিতীয় গোলটি ছিল নান্দনিক উদাহরণ। রবিনহো-এলানোর যৌথ প্রচেষ্টার ফসল। দুঙ্গা নিশ্চয়ই এ রকম গোলই আরও বেশি করে পেতে চাইবেন।
আইভরিকোস্টের কোচ সভেন গোরান এরিকসন ৪-৪-২ ছক নিয়েই খেলতে চাইবেন। রক্ষণে থাকবে দেমেল, তোরে, জোকোরা আর তিয়েনে। মাঝমাঠে এবু, ইয়া তোরে, তিয়োতে আর কালু। এদের কাজ হবে বিশ্বমানের স্ট্রাইকার দ্রগবা আর জারভিনহোকে সমর্থন জুগিয়ে যাওয়া। ব্রাজিলকে ওরা বেশি জায়গা দিতে চাইবে না। রক্ষণাত্মক খেলাটাই খেলবে এবং পাল্টা-আক্রমণ হবে ওদের মূল লক্ষ্য। ব্রাজিল তাদের মতো করে ৪-৩-১-২ ছকেই খেলবে। ইস্পাতকঠিন রক্ষণভাগে আছে মাইকনের মতো খেলোয়াড়, যে কিনা ডান দিক দিয়ে উঠে গিয়ে আক্রমণে শরিক হয়। যেখানে আছে এলানো, কাকা, মেলো, ফ্যাবিয়ানো আর রবিনহো। আইভরিকোস্টের গোলমুখের তালা খোলার চাবি থাকবে এদেরই হাতে।
ব্রাজিলই এই ম্যাচে ফেবারিট। তবে উত্তর কোরিয়ার বিপক্ষে যে খেলাটি ওরা খেলেছে, তার চেয়ে অনেক ভালো খেলতে হবে আজ।
স্লোভাকিয়া আগের ম্যাচেই বিশ্বকাপে তাদের প্রথম জয়টি পেতে পারত। কিন্তু নিউজিল্যান্ড ম্যাচে একেবারে শেষ বাঁশি বাজার আগেই মারাত্মক ভুলটা করে বসল। ইতালিয়ান লিগে নাপোলির হয়ে খেলার সময় মারেক হামসেকের খেলা আমি দেখেছি। আমার মনে হয়, স্লোভাকিয়ার জয়ের নায়ক হয়ে ওঠার সামর্থ্য আছে ওর। মাঝমাঠে ভেইস আর সেসটাকের আরও ভালো খেলা আশা করছি। কোচ ভ্লাদিমির ভেইস ৪-৩-১-২ ছকে খেলাতে পছন্দ করেন। রক্ষণ থেকেই খেলাটা বানানোর প্রক্রিয়া ওরা শুরু করে। কিন্তু সেই গতিটা না থাকায় আখেরে শেষ ফলটা ওরা পাচ্ছে না।
স্লোভাকিয়ার প্রতিপক্ষ আজ প্যারাগুয়ে। ওদের আক্রমণভাগ তো দুর্দান্ত। ব্যারিয়স আছে, সান্তা ক্রুজ আর বেনফিকার গোলমেশিন অস্কার কার্দোজো। আমার ধারণা, কোচ জেরার্দো মার্টিনো শুরু থেকেই স্লোভাকিয়ার রক্ষণে হামলা চালাতে চাইবেন।

No comments

Powered by Blogger.