ক্রুইফ সেই সুন্দরের পূজারি

রাইনাস মিশেল আর ইয়োহান ক্রুইফের যৌথ প্রযোজনার ফসল ছিল ‘টোটাল ফুটবল’। আক্রমণই ছিল যে ফুটবলের শেষ কথা। মিশেল পাঁচ বছর আগে গত হয়েছেন। মারা গিয়েই বরং বেঁচে গেছেন! বেঁচে থাকা ক্রুইফকেও যে দেখতে হচ্ছে, তাঁর ফুটবল-দর্শনকে কীভাবে মেরে ফেলা হচ্ছে গলা টিপে! কীভাবে ফল আর শিরোপার পেছনে অন্ধ হয়ে ছুটতে থাকা দলগুলো সরে আসছে আক্রমণাত্মক ফুটবল থেকে। খোদ তাঁর ফেলে আসা দল হল্যান্ডও সগর্বেই ঘোষণা করল, এখন আর আক্রমণাত্মক ফুটবল নয়, লক্ষ্য তাদের কেবলই জয়!
না, ক্রুইফ হতাশ নন। তাঁকে হতাশ হতে দিচ্ছে না স্পেন আর লিওনেল মেসি। ‘প্রথম রাউন্ডের খেলাগুলো দেখে আমার মনে হয়েছে, ফুটবলের ওপর নির্যাতন চলছে। “কোনোমতেই হারব না” নীতির কারণে ফ্রান্স, ইতালি আর ব্রাজিলকে ধুঁকতে দেখার পর আমার খুব খারাপ লেগেছে। মাত্র দুটো ক্ষেত্রে ক্ষুধা আর অবিচল মানসিকতা খুঁজে পেয়েছি। স্পেনের খেলায়, যদিও ওরা হেরে গেছে। আর দেখেছি মেসির মধ্যে।’
সুন্দর ফুটবলের আজন্ম পূজারি ক্রুইফের কাছে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জার্মানি আর ডেনমার্কের বিপক্ষে নিজ দেশ হল্যান্ডের বড় জয়েরও কোনো মূল্য নেই। ‘জার্মানির ৪-০ কিংবা হল্যান্ডের ২-০ গোলের জয় নিয়ে আমার কাছে কোনো কথাই বলবেন না। জয়টাই শেষ কথা নয়। আমরা ফুটবল ইতিহাসের এক ক্রান্তিলগ্নে চলে এসেছি। গত কয়েকটি বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের খেলা তো মনে বেদনার জন্ম দেয়। খেলায় কোনো স্টাইল নেই, কোনো নির্দিষ্ট দর্শন নেই। লক্ষ্য যেন একটাই—কোনোমতেই ম্যাচ না হারা। স্পেন আর মেসিই কেবল ব্যতিক্রম।’
খেলোয়াড়-কোচ দুই ভূমিকাতেই শিরোপার সাফল্য-বিধৌত ক্যারিয়ার আছে তাঁর। সাফল্যের জন্য নিজের ফুটবল-দর্শনের কাছে কখনোই আপস করেননি। আয়াক্স-বার্সেলোনার এই সাবেক কিংবদন্তি খেলোয়াড় জানেন, এখন তাঁর দর্শন অনেকের কাছেই অচল, ‘জানি, নিন্দুকেরা বলবে, আমি স্রোতের বিপক্ষে চলি। ওরা মনে করে, আমি স্রেফ একটা বিতর্ক চালু করে দেওয়ার জন্য এসব বলছি। কিন্তু এমনটা ভাবা স্রেফ মূর্খামি।’
বড় আশা নিয়ে তাই স্পেন আর মেসিদের জয় দেখার অপেক্ষায় আছেন ক্রুইফ। তাতে জয় যে তাঁরও হবে!

No comments

Powered by Blogger.