কিরগিজস্তানে সমাবেশে গুলি পালিয়ে বাঁচলেন বাকিয়েভ

কিরগিজস্তানের প্রেসিডেন্ট কুরমানবেক বাকিয়েভ গতকাল বৃহস্পতিবার দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগর ওশে সমাবেশ করতে গিয়ে হামলার মুখে পড়েন। সেখান থেকে কোনো রকমে প্রাণ নিয়ে পালিয়ে যেতে সমর্থ হয়েছেন। বাকিয়েভের সমর্থক অধ্যুষিত এলাকা জালালাবাদের নিকটবর্তী ওশ শহরে প্রায় দুই হাজার সমর্থকের মধ্যে তিনি বক্তৃতা করতে মঞ্চে উঠেছিলেন। এ সময় আচমকা গোলাগুলি শুরু হলে তাঁর দেহরক্ষীরা তাঁকে আড়াল করে নিরাপদে সরিয়ে নেন। খবর এএফপি ও বিবিসি অনলাইনের।
প্রেসিডেন্ট বাকিয়েভের এক ভাই বিবিসিকে জানান, তাঁরা যেখানে সমাবেশের আয়োজন করেছিলেন, তার কয়েক শ গজ দূরেই অন্তর্বর্তী বর্তমান সরকারের সমর্থকেরা সমাবেশ করে। সমাবেশে বাকিয়েভ বক্তৃতা দিতে উঠলে হঠাৎ স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র থেকে গুলিবর্ষণের আওয়াজ শোনা যায়। বাকিয়েভের দেহরক্ষীরা তাঁকে ঘিরে ফেলেন এবং রাইফেল উঁচিয়ে একটানা ফাঁকা গুলি করতে থাকেন। উপস্থিত সমর্থকেরা ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলে বাকিয়েভকে একটি গাড়িতে তুলে জালালাবাদে নিয়ে যাওয়া হয়। এ ঘটনায় কেউ হতাহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া যায়নি।
বাকিয়েভের ঘনিষ্ঠ সহচর রাভসান ডিঝামগিরচিয়েভ বলেছেন, এ ঘটনায় স্থানীয় কর্তৃপক্ষের উসকানি রয়েছে। তিনি জানান, বাকিয়েভ যখন বক্তব্য দিতে যাচ্ছিলেন, তখন কয়েকজন দুর্বৃত্ত দূর থেকে তাঁর ওপর পাথর নিক্ষেপ শুরু করে এবং গুলি চালানোর চেষ্টা করে।
অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বোলোত্ শেরনিয়াজোভ বলেছেন, বাকিয়েভ ওই ঘটনায় আহত হননি। সেখানকার জনগণ তাঁকে বক্তব্যদান থেকে বিরত রাখতে চেয়েছে। তারা কারও ওপর গুলি চালায়নি। বাকিয়েভের লোকজনই গুলি ছুড়ে তাদের মধ্যে ভীতি ছড়িয়েছে।
এদিকে রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ভ্লাদিমির পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকোভ বলেছেন, বুধবার রাতে প্রধানমন্ত্রী পুতিন বাকিয়েভকে টেলিফোন করেছিলেন। তবে তাঁদের মধ্যে কী কথা হয়েছে, সে বিষয়ে তিনি বিস্তারিত কিছু জানাননি। রাশিয়া দৃশ্যত অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন করছে। নতুন সরকারকে ইতিমধ্যে তারা আর্থিক সহযোগিতা দেওয়ারও আশ্বাস দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী রবার্ট ব্লেক বিশকেক সফর করেছেন। তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্র অন্তর্বর্তী সরকারকে সাহায্যে করতে প্রস্তুত। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ বলেছেন, তিনি কিরগিজস্তানে গৃহযুদ্ধের আশঙ্কা করছেন।
কিরগিজস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বোলোত্ শেরনিয়াজোভ তাঁর ওই হুঁশিয়ারি আমলে নিয়ে বলেছেন, গৃহযুদ্ধ এড়াতে তাঁরা শিগগিরই দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে বিপুলসংখ্যক সেনা মোতায়েন করার পরিকল্পনা করেছেন।
এদিকে প্রেসিডেন্ট বাকিয়েভ গত মঙ্গলবার সরকারকে জানান, তাঁর ও তাঁর পরিবারের নিরাপত্তা দিলে তিনি পদত্যাগ করতে রাজি আছেন।
তবে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান রোজা ওতুনবায়েভা তাঁর সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, এক সপ্তাহ আগে বিক্ষোভকারীদের ওপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণের কারণে বাকিয়েভ ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের গ্রেপ্তার করে তাদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে। তবে এখনই বাকিয়েভকে গ্রেপ্তারে তাঁরা কোনো বিশেষ অভিযান পরিচালনা করবেন না বলেও তিনি জানিয়েছেন।

No comments

Powered by Blogger.