সীতাকুণ্ডে গাছ কাটা -এই অপকর্মের পেছনের শক্তিকে শাস্তি দিতে হবে

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যখন উপকূলীয় অঞ্চলে ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ হানা দিচ্ছে, তখন সীতাকুণ্ডের সমুদ্রতীরে উপর্যুপরি গাছ কাটার ঘটনা কেবল দুঃখজনক নয়, উদ্বেগজনকও। পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত রোববার রাতের আঁধারে উপজেলার পাক্কা মসজিদ ও জোড় আমতলের মধ্যবর্তী স্থানের দুই হাজার গাছ কেটে নিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এর আগে গত ৩ জুলাইও সোনাইছড়িতে ২০ হাজার গাছ কেটে নেওয়া হয়েছিল। ওই সময় এ নিয়ে যথেষ্ট হইচই হওয়ার পরও যখন আবার একই ঘটনা ঘটল তখন বুঝতে অসুবিধা হয় না যে এর পেছনে যাঁরা রয়েছেন তাঁরা কতটা শক্তিশালী।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে উপকূলকে রক্ষার জন্যই সবুজ বেষ্টনী গড়ে তোলা হয়েছিল। এর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব বন বিভাগের। কিন্তু রাতের আঁধারে তিন-চার শ লোকের হামলা বন বিভাগের গুটিকয়েক কর্মীর পক্ষে প্রতিহত করা সম্ভব নয়। তাঁরা পুলিশের কাছে সহায়তা চেয়েও পাননি। অবশেষে বন ও পরিবেশ প্রতিমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে পুলিশ সেখানে গিয়ে দেখতে পায় বৃক্ষহীন বিরান প্রান্তর। আমাদের কর্তব্যপরায়ণ পুলিশ সদস্যরা বরাবর এভাবেই তাঁদের দায়িত্ব সমাধা করেন। আরও অবাক করা বিষয় হলো, পত্রিকার খবর অনুযায়ী, এসব গাছ কাটার সঙ্গে ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের স্থানীয় নেতা থেকে শুরু করে সাংসদেরাও ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সারা দেশে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যকার সম্পর্ক অহিনকুল হলেও বৃক্ষ কর্তন কিংবা ব্যবসায়িক স্বার্থে জাহাজভাঙা শিল্প গড়ার ক্ষেত্রে তারা হরিহর আত্মা। সীতাকুণ্ডের বৃক্ষ কর্তনে স্থানীয় সাংসদ ও বিএনপি নেতার জড়িত থাকার বিষয়টিও অস্বাভাবিক নয়।
গত রোববারের বৃক্ষ কর্তনের দায়ে কয়েকজন শ্রমিকের আটক হওয়ার খবর মোটেই আশা জাগায় না। তাঁরা শক্তিশালী ও স্বার্থান্বেষী মহলের ইচ্ছার বাস্তবায়ন ঘটিয়েছেন মাত্র। যে ব্যবসায়ী-রাজনীতিকদের স্বার্থ হাসিলের জন্য তাঁরা গাছ কাটতে বাধ্য হয়েছেন, তাঁদেরও আইনের আওতায় আনতে হবে। জাহাজশিল্প গড়ার নামে সমুদ্র উপকূলে বৃক্ষ উজাড় কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। অবিলম্বে এঁদের দৌরাত্ম্য বন্ধ না করতে পারলে প্রকৃতি ও পরিবেশ কোনোটাই রক্ষা করা যাবে না।

No comments

Powered by Blogger.