আবাহনীর তামিম যেভাবে মোহামেডানে

আবাহনীর টেনশন যা ছিল সাকিব আল হাসান আর মাশরাফি বিন মুর্তজাকে নিয়েই। এই দুজনকে ঘটা করে চুক্তি স্বাক্ষর করানোর পর কোথায় আবাহনীর কর্মকর্তারা একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবেন তা না, ‘বুকে ছুরি চালিয়ে’ চলে গেলেন তামিম ইকবাল! যাঁকে ধরে রাখা নিয়ে বিন্দুমাত্র উদ্বেগ ছিল না আকাশি নীল শিবিরের, সেই তামিমই পরশু রাতে জানিয়ে দিলেন আবাহনী নয়, এবার খেলবেন মোহামেডানে।
চমকটা তামিম ‘উপহার’ দিলেন সপরিবারে মালয়েশিয়ায় ঘুরে আসার পরদিনই। মালয়েশিয়ায় যাওয়ার আগে ১৫ লাখ টাকায় পুরোনো ক্লাব আবাহনীর সঙ্গে কথা পাকা করে গেলেও সে সিদ্ধান্ত বদলেছেন তিনি। ধানমন্ডি থেকে গাড়ি ঘুরিয়ে তামিম এখন মতিঝিলের সাদাকালো শিবিরে। তামিমকে জায়গা দিতে পুলের ক্রিকেটারদের মধ্য থেকে সম্ভবত ডলার মাহমুদকে ছেড়ে দেবে মোহামেডান।
তামিমের ‘ইউ টার্নের’ দুই রকম কারণ শোনা যাচ্ছে। আবাহনীর বক্তব্য, তাদের সঙ্গে কথা পাকাপাকি হওয়ার পরও মাত্র তিন লাখ টাকা বেশি পেতে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছেন তামিম। মোহামেডান থেকে নাকি ১৮ লাখ টাকা দেওয়া হবে তাঁকে। তবে তামিমের দাবি, অঙ্কটা ২০ লাখ এবং কেবল টাকার জন্যই মত বদলাননি, “কাল (পরশু) আবাহনীর এক কর্মকর্তাকে আমি শুধু জানিয়েছিলাম, একটা ক্লাব আমাকে ২০ লাখ টাকার প্রস্তাব দিয়েছে। বাকিটা আবাহনীর ওপরই ছেড়ে দিয়েছিলাম। তিনি আমাকে বললেন, ‘ক্লাবের অন্যদের সঙ্গে কথা বলে আমি তোমাকে জানাচ্ছি।’ সেটা তিনি জানালেন দুর্ব্যবহার করে। আবাহনীর একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা ফোন করে আমার সঙ্গে খুব বাজে ভাষায় কথা বলেছেন। তাঁর আচরণে অসন্তুষ্ট হয়েই আমি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি।” তামিম ইকবালের বিকল্প হিসেবে আবাহনী এখন জাতীয় দলের আরেক ওপেনার ইমরুল কায়েসকে দলে নিয়েছে। এর আগে সূর্যতরুণের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা হলেও ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের প্রস্তাব পাওয়ার পর এ ক্লাবেই খেলবেন বলে প্রথম আলোকে জানিয়েছেন ইমরুল।
মোহামেডানের প্রস্তাবের কথা জানিয়ে পরশু রাতে তামিম ফোন করেন আবাহনীর টিম কো-অর্ডিনেটর আই এইচ মল্লিককে। মল্লিক তাতে ইতিবাচক সাড়া দিতে পারেননি, ‘কাল (পরশু) বিকেলেও অগ্রিম টাকা দেওয়ার ব্যাপারে তামিমের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। কিন্তু রাতে ও ফোন করে বলে মোহামেডান নাকি তাকে ১৮ লাখ টাকার প্রস্তাব দিয়েছে । আমি তামিমকে তখনই বলে দিই, আমাদের পক্ষে ১৫ লাখের ওপরে ওঠা সম্ভব নয়। তামিমের দাবি মেনেই তাঁর সঙ্গে ১৫ লাখ টাকায় চুক্তি করতে রাজি হয়েছিল আবাহনী। তখন তামিম আরও বেশি টাকা দাবি করলে সেটাও ভেবে দেখা যেত। কিন্তু পাকা কথা হয়ে যাওয়ার পর তামিমের ‘বাজারদর’ বাড়ানোর চেষ্টা আবাহনীর কাছে রুচিকর মনে হয়নি।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আবাহনীর শীর্ষস্থানীয় এক কর্মকর্তা তামিমের কমিটমেন্ট নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, ‘তামিম একটা ভালো পরিবারের ছেলে, শিক্ষিত ছেলে। তার কাছ থেকে এমন আচরণ দুঃখজনক। মোহামেডান ওকে বেশি টাকা দিচ্ছে বলে সে আমাদের ব্ল্যাকমেইল করতে চেয়েছে। জাতীয় দলের একজন ক্রিকেটারের মানসিকতা এমন হলে অন্যরা কী করবে?’ আবাহনীর সূত্র জানিয়েছে, মালয়েশিয়ায় যাওয়ার আগে চাচা ও সাবেক অধিনায়ক আকরাম খানকে সঙ্গে নিয়ে তামিম আবাহনীর ক্রিকেট কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান নাজমুল হাসানকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এ বছরও আবাহনীতে খেলার।
আবাহনীর ক্রিকেট সম্পাদক জি এস হাসান দলবদল নিয়ে তামিমের আচরণকে বলেছেন দুঃখজনক, ‘বাংলাদেশ দলের একজন সিনিয়র ক্রিকেটারের এ রকম নির্লজ্জ আচরণ অনাকাঙ্ক্ষিত। সে যেটা করেছে সেটা আবাহনী ও আবাহনীর অসংখ্য সমর্থককে হতভম্ব করেছে। আবাহনী দলের ভারসাম্য নষ্ট করে দিয়েছে তামিম। ও আছে বলেই আমরা তখন আফতাবকে ছেড়ে দিয়েছিলাম। এই বিশ্বাসঘাতকতা করে আবাহনীর দরজা তামিম চিরতরে বন্ধ করে দিল।’ তামিমের ঘটনায় সরাসরি মন্তব্য করতে না চাইলেও আবাহনীর কর্মকর্তা ও জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক গাজী আশরাফ হোসেন বলেছেন, ‘এত দিন ক্রিকেটারদের সঙ্গে ক্লাবগুলোর কথাবার্তা মৌখিকভাবেই হয়ে আসছিল। তবে ক্রিকেটে এখন টাকা-পয়সা, দায়িত্ব—সবই বাড়ছে। আমার মনে হয়, ভবিষ্যতে পেশাদারির কথা চিন্তা করে এবং খেলোয়াড়দের সামর্থ্য আর ফিটনেসের কথা মাথায় রেখে কাগজে-কলমেই সব হওয়া উচিত।’
তামিমকে আবাহনী থেকে ছিনিয়ে নেওয়াটা মোহামেডানের একটা সাফল্যও বলতে পারেন। তবে ক্লাবের শীর্ষস্থানীয় এক কর্মকর্তা ‘তামিম মোহামেডানে খেলবে’ জানালেও ক্রিকেট সম্পাদক হানিফ ভূঁইয়া নিশ্চিত করে বলতে চাইলেন না কিছুই, ‘তামিমের সঙ্গে একটা কথাবার্তা চলছে। কিন্তু চুক্তি স্বাক্ষরেরও তো ব্যাপার আছে। সব ক্রিকেটারকে নিয়ে আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে একটা চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান করব।’ সতর্কতা তাঁরা অবলম্বন করতেই পারেন। ক্লাবসূত্রেরই তথ্য, আবাহনীর সঙ্গে এবার যা করলেন, গতবার মোহামেডানের সঙ্গেও নাকি একই কাজ করেছিলেন তামিম! আট লাখ টাকায় মোহামেডানে খেলার কথা দিয়েও শেষ পর্যন্ত ১০ লাখে চলে গিয়েছিলেন আবাহনীতে।
এবার লিগ শুরুর আগে আবাহনীকে কি সেটারই জবাব দিল মোহামেডান?

No comments

Powered by Blogger.