গ্লুকোমিটার ব্যবহার পদ্ধতি

গ্লুকোমিটার রক্তশর্করা পরিমাপের যন্ত্র। এ যন্ত্রের সাহায্যে রোগী নিজেই নিজের রক্তশর্করার পরিমাণ তৎক্ষণাৎ জানতে পারেন। গ্লুকোমিটারের উপযোগিতা হল-
* রোগী নিজেই নিজের রক্তশর্করা নির্ণয় করতে পারেন।
* রোগীকে ল্যাবরেটরিতে যাওয়ার দরকার নেই।
* রোগী তৎক্ষণাৎ তার রক্তশর্করার পরিমাণ জানতে পারেন। রক্তশর্করা বিপদজনকভাবে কমে বা বেড়ে গেলে মেশিন নির্ণয় করে দেয়।
* মাত্র একফোঁটা রক্তই রক্তশর্করা নির্ণয়ের জন্য পর্যাপ্ত।
* রক্তশর্করা নির্ণয় প্রায় বেদনাহীন। আধুনিক মেশিনগুলো আগের করা ব্লাডসুগার রিপোর্ট, তারিখ, সময় ও গড় পরিমাণ দেখাতে পারে। বাইরে বেড়াতে গেলে বা গ্রামে-গঞ্জে যেখানে ল্যাবরেটরি নেই, সেখানে রোগীদের একমাত্র সাহায্যকারী এই যন্ত্র। কোনো কারণে রক্তে শর্করার পরিমাণ অতিরিক্ত কমে গেলে তাকে বলে হাইপোগ্লাইসেমিয়া। সাধারণভাবে হাইপোগ্লাইসেমিয়ার লক্ষণ হল ঘাম হওয়া, দুর্বলতা, হাত কাঁপা, দ্রুত হৃদস্পন্দন, মাথাব্যাথা, অস্বাভাবিক ব্যবহার, বিভ্রান্তি ও পরিশেষে অচেতন অবস্থা। রক্তে সুগার খুবই বেশি থাকলেও (Hyperglycaemia) এসব উপসর্গের অনেকগুলো হতে পারে। অতএব, উপসর্গ অনুযায়ী অনেক সময় হাইপোগ্লাইসেমিয়া ও হাইপারগ্লাইসেমিয়ার বিভেদ করা সম্ভব হয় না। এখানে মনে রাখা দরকার এ দু’প্রকার অবস্থার চিকিৎসা সম্পূর্ণ আলাদা। হাইপোগ্লাইসেমিয়ার রোগীকে গ্লুকোজ দিতে হয় আর হাইপারগ্লাইসেমিয়ার রোগীকে সুগারের ওষুধ বা ইনসুলিনের মাত্রা বাড়ানো হয়। কিটো অ্যাসিডোসিস, হাইপোগ্লাইসেমিয়া ও শল্য চিকিৎসা, প্রভৃতি জরুরি অবস্থায় গ্লুকোমিটার ব্যবহার একান্ত প্রয়োজনীয়। উপরে বর্ণিত উপসর্গ দেখা দিলে রোগী তৎক্ষণাৎ গ্লুকোমিটারের সাহায্যে তার রক্তশর্করার পরিমাণ জেনে নিতে পারেন এবং হাইপোগ্লাইসেমিয়ার ক্ষেত্রে গ্লুকোজ গ্রহণ করে বা ডাক্তারের সঙ্গে তৎক্ষণাৎ পরামর্শ করে বিপদ এড়াতে পারেন। গ্লুকোমিটার ব্যবহার করার পদ্ধতি
* সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিতে হবে।
* গ্লুকোমিটার চালু করতে হবে।
* স্ট্রিপের কোড নাম্বারের সঙ্গে গ্লুকোমিটারের কোড নম্বর মিলিয়ে নিতে হবে।
* গ্লুকোমিটারে স্ট্রিপ প্রবেশ করাতে হবে। আঙুলের ডগাটি জীবাণুমুক্ত তুলা নর্মাল স্যালাইনে ভিজিয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। স্পিরিট ব্যবহার করা চলবে না। আঙুলের ডগার পাশের দিকটি ল্যানসেট (Lancet) দিয়ে ফুটিয়ে (Pric) নিন। আঙুলের ডগার পাশের দিকে ফোটানোর কারণ- এ স্থানে কম পরিমাণে স্নায়ুর অংশ (Nerve Ending) থাকে। রক্তের ফোঁটা (Blood Drop) তৈরি হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সময় দিতে হবে। রক্তের ফোঁটাটি স্ট্রিপের সাদা অংশে স্থাপন করতে (Put) হবে। কয়েক সেকেন্ড অপেক্ষা করতে হবে। রক্তশর্করা গ্লুকোমিটারের পর্দায় (Screen) ফুটে উঠবে। স্ট্রিপ সরিয়ে নিয়ে গ্লুকোমিটার বন্ধ করে দিতে হবে।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, হরমোন রোগ বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

No comments

Powered by Blogger.