হাওরে দুর্যোগে বিপাকে মধ্যবিত্তরা

হাওরাঞ্চলে ৯০ ভাগ ফসল তলিয়ে যাওয়ায় প্রান্তিক কৃষকদের পাশাপাশি বেকায়দায় পড়েছেন মধ্যবিত্ত কৃষকরাও। তারা না পারছেন ভিজিএফ পাওয়ার চেষ্টা করতে, না পারছেন ওএমএসের লাইনে দাঁড়াতে। বিপন্ন মধ্যবিত্ত কৃষকদের কেউ কেউ আপাতত গরু বিক্রি করে পরিবারের খরচ চালাচ্ছেন। আবার গরু বিক্রির টাকায় কেউ মহাজনি ঋণও পরিশোধ করছেন। কিন্তু নিজের এবং পরিবারপরিজনের সামনের দিনগুলো কিভাবে কাটবে এই দুশ্চিন্তায় ঘুমোতে পারছেন না তারা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক জানান, জেলায় কার্ডধারী কৃষকদের মধ্যে প্রান্তিক কৃষক রয়েছেন- ৯১ হাজার ৬০৯ জন, ক্ষুদ্র কৃষক আছেন এক লাখ ৩২ হাজার ১৯৮ জন, মধ্যবিত্ত কৃষক ৬৩ হাজার ১৮৮ জন এবং বড় কৃষক ১৩ লাখ ১৪৮ জন। সব ক্ষতিগ্রস্ত কৃষককেই প্রয়োজনীয় সহায়তা দেয়ার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। সোনালী ব্যাংকের সুনামগঞ্জ অঞ্চলের অ্যাসিটেন্ট জেনারেল ম্যানেজার দোলন চক্রবর্তী বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ঋণ আদায় আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে। কৃষকেরা বকেয়া কৃষি ঋণের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করে নতুন করে কৃষি ঋণ নিতে পারবেন। সুনামগঞ্জ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস সূত্রে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার থেকে সুনামগঞ্জের ৪২ জন ডিলার ১ টন চালের পরিবর্তে ২ টন করে চাল বিক্রি করবেন।
আগামী ৩১ মে পর্যন্ত ওএমএসের চাল বিক্রির এই কার্যক্রম চালু থাকবে। সুনামগঞ্জ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস সূত্র জানায়, এখন জেলার ৪৫ জন ওএমএস ডিলার এক টনের স্থলে দুই টন করে চাল বিক্রয় করবেন। চালের পরিমাণ বৃদ্ধি হওয়ায় এখন পাঁচ কেজি করে ২০০ জনের স্থলে ৪০০ জন মানুষ একজন ডিলারের কাছ থেকে প্রতিদিন চাল ক্রয় করতে পারবেন। সুনামগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় ওএমএসের চাল না পেয়ে প্রতিদিনই শত শত মানুষ খালি হাতে বাড়ি ফিরছিল বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। এ দিকে ক্ষতিগ্রস্ত হাওর এলাকা পরিদর্শন করতে শুক্রবার সুনামগঞ্জে আসেন পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। শুক্রবার দুপুরে তিনি স্পিডবোটে সুনামগঞ্জের শনির হাওর, হালির হাওর ও গুরমার হাওর পরিদর্শন করেছেন। এরপর সন্ধ্যা ৭টায় সার্কিট হাউজে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিক এবং জেলা প্রশাসনের সাথে মতবিনিময় সভা করেন। উল্লেখ্য, সুনামগঞ্জের হাওরে এবার আবাদকৃত ধানের ৯০ ভাগেরও বেশি তলিয়ে গেছে। জেলায় প্রায় সোয়া দুই লাখ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ হয়েছিল। ফসল তলিয়ে যাওয়ার কারণে প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতির শিকার হয়েছে তিন লাখেরও বেশি কৃষক পরিবার।

No comments

Powered by Blogger.