প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফরে বাংলাদেশের কি লাভ হল

ভারতের সঙ্গে যখনই কোনো চুক্তি বা সমঝোতা স্বাক্ষরের বিষয় আলোচনায় আসে তখন বাংলাদেশের অনেকের মাঝে বিষয়টি নিয়ে নানা প্রশ্ন, সন্দেহ এবং বিতর্ক তৈরি হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এবারের ভারত সফরও তার ব্যতিক্রম নয়। ভারত সফরে যাওয়ার আগেই সরকারবিরোধীরা সম্ভাব্য চুক্তি নিয়ে নানা আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। শেখ হাসিনার এ সফরে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ২২টি সমঝোতা স্মারক এবং ৬টি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। দুটো দেশের মধ্যে যখন চুক্তি সম্পাদিত হয়, তখন সেটি মেনে চলার বাধ্যবাধকতা থাকে। কিন্তু সমঝোতা স্মারকের ক্ষেত্রে বিষয়টি সেরকম নয়। তবে ভবিষ্যতে কোনো চুক্তি সম্পাদনের জন্য সমঝোতা স্মারক একটি বড় ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। বাংলাদেশে এখন বিশ্লেষণ চলছে এসব চুক্তি এবং সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে বাংলাদেশ কতটা লাভবান হয়েছে। যেসব ক্ষেত্রে চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে সেগুলো হল- শান্তিপূর্ণ উপায়ে পারমাণবিক শক্তির ব্যবহার, পরমাণু বিদ্যুৎ, সাইবার সিকিউরিটি, অডিও ভিজুয়াল প্রডাকশন এবং খুলনা-কলকাতা রুট ব্যবহার। তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তি যে এবার হচ্ছে না সেটি আগেই বোঝা গিয়েছিল। এর বাইরে যে বিষয়টি নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে সেটি হল, দু’দেশের মধ্যে সম্ভাব্য প্রতিরক্ষা চুক্তি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চুক্তি না হলেও প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে চারটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল বাংলাদেশকে ৫০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ দিতে চায় ভারত। এ সমঝোতা স্মারকের বিস্তারিত জানা না গেলেও এ নিয়ে বিভিন্ন বিশ্লেষণ আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক এসএম আলী আশরাফ মনে করেন, ভারত তাদের অস্ত্র তৈরির শিল্প গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ তাদের জন্য একটি সম্ভাব্য বাজার হতে পারে। গত বছর চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বাংলাদেশ সফরের পর চীনের কাছে থেকে দুটি সাবমেরিন ক্রয় করে বাংলাদেশ। তখন ভারতের বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছিল যে ভারত সামরিক কূটনীতিতে পিছিয়ে যাচ্ছে কিনা। অধ্যাপক আশরাফ বলেন, ‘সামরিক সহযোগিতা সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারকের যে এজেন্ডা এটা খুব সম্ভবত বাংলাদেশের কাছ থেকে আসেনি। এটা এসেছে ভারতের কাছ থেকে। সমঝোতা স্মারকের ধারা-উপধারা না দেখে বলতে পারছি না বাংলাদেশের ডিফেন্স মার্কেটে ভারতের প্রবেশের যে ইচ্ছাটা সেটা কতটুকু বাংলাদেশ সম্মত হয়েছে। তবে ভারত যে বাংলাদেশের বাজারে ঢুকতে চায় সে বিষয়টি পরিষ্কার।’
প্রতিরক্ষা খাত ছাড়াও বাংলাদেশকে আরও চার বিলিয়ন ডলার ঋণ দিতে চায় ভারত। এ বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে দু’দেশের মধ্যে। এর আগেও দু’দফা বাংলাদেশকে ঋণ দিয়েছিল ভারত। কিন্তু এবারের অংকটি অন্যবারের তুলনায় বেশি। সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘আমরা চাচ্ছিলাম যে তিস্তা চুক্তিটা হয়ে যাক। এটা হলে দেখা যেত যে বাংলাদেশ লাভবান হয়েছে। তবে ঋণের শর্তাবলী যদি সহজ হয় তাহলে সেটা বাংলাদেশের জন্য লাভজনক হতে পারে। এছাড়া অন্য চুক্তি বা সমঝোতা স্মারকগুলোর ক্ষেত্রে আপাতদৃষ্টিতে বাংলাদেশের জন্য তেমন কোনো লাভ দেখা যাচ্ছে না। তবে এসব চুক্তি এবং সমঝোতা স্মারকের বিস্তারিত দেখলে কে কতটুকু লাভবান হয়েছে সেটি বোঝা যেত।’ সামরিক খাতে ঋণ সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারকের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘অস্ত্র ক্রয়ের জন্য যে এমওইউ (সমঝোতা স্মারক) সেটা চুক্তির পর্যায়ে না পড়লেও এটা আমরা কিনব ধরে নেয়া হবে। একটু হয়তো এদিক-সেদিক হতে পারে। কেনার সিদ্ধান্ত নেয়ার পরেই তো এমওইউ হবে। না হলে কেন সই হবে এটা?’” ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এসএম আলী আশরাফ মনে করেন, ‘পারমাণবিক বিদ্যুৎ সংক্রান্ত যেসব চুক্তি হয়েছে সেগুলো বাংলাদেশের জন্য লাভজনক হতে পারে। পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে ভারতের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা আছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য ভারতের সঙ্গে সহযোগিতা ভালো হতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘সার্বিকভাবে এ সফরে স্বাক্ষরিত চুক্তি এবং সমঝোতা স্মারকগুলো বাংলাদেশ ও ভারত উভয়ের জন্য ইতিবাচক হয়েছে।’

No comments

Powered by Blogger.