উত্ত্যক্তকারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ- প্রতিকার চেয়ে পুলিশকে ১০২টি খুদে বার্তা

বখাটেদের ঠেকাতে চট্টগ্রামের দুটি বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের দেওয়া পুলিশের একটি মুঠোফোন নম্বরে ১০২টি খুদে বার্তা এসেছে। সব বার্তার ভাষা এক। পথে-ঘাটে উত্ত্যক্তের শিকার হচ্ছেন তাঁরা। পোশাককর্মী থেকে শুরু করে বিভিন্ন পেশার নারীরাও খুদে বার্তায় অভিযোগ জানিয়েছেন। গত ৬ মে থেকে ২১ মে পর্যন্ত এসব অভিযোগ এসেছে।
নম্বরটি পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার চট্টগ্রামের বাইরের বিভিন্ন এলাকা থেকেও অভিযোগ করেছেন নারীরা।
খুদে বার্তা পাওয়ার পর পুলিশ কী ব্যবস্থা নেয়, জানতে চাইলে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের কোতোয়ালি অঞ্চলের সহকারী কমিশনার শাহ মো. আবদুর রউফ গতকাল শুক্রবার রাতে প্রথম আলোকে জানান, উত্ত্যক্তের অভিযোগ পাওয়ার পর এ পর্যন্ত ৫০ থেকে ৬০ জন তরুণকে কোতোয়ালি, চকবাজার, খুলশী ও পাঁচলাইশ থানায় ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এসব তরুণের অভিভাবকদেরও থানায় ডেকে নিয়ে কথা বলেছে পুলিশ। সংশোধন না হলেও তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা অভিভাবকদেরও জানানো হয়। কয়েকজন তরুণকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে।
সহকারী কমিশনার জানান, ক্লাস শুরু হওয়ার আগে এবং ছুটির আগে নগরের বালিকা উচ্চবিদ্যালয়গুলোর সামনের রাস্তায় ও আশপাশের এলাকায় পুলিশের টহল দল কাজ করছে। সাদাপোশাকেও পুলিশের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
উত্ত্যক্তকারীদের প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়াতে ৬ মে থেকে ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও ১০ মে বাংলাদেশ মহিলা সমিতি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা সমাবেশ করেন। সেখানে ০১৮৪১৩৭৩২৩৭ মুঠোফোন নম্বর দিয়ে পুলিশ আহ্বান জানিয়েছিল, কেউ উত্ত্যক্তের শিকার হলে ‘৩৭৩’ লিখে খুদে বার্তা পাঠানোর জন্য। যে অভিযোগ পাঠাবে, তার পরিচয় বিদ্যালয়ের শিক্ষক, এমনকি অভিভাবকের কাছেও গোপন রাখা হবে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ আবদুল জলিল মণ্ডল জানান, খুদে বার্তা পাওয়ার পর পুলিশ সেই নম্বরে ফোন করে বিস্তারিত তথ্য নেওয়ার পর উত্ত্যক্তকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়। নগরের বাইরে থেকে আসা খুদে বার্তার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট থানার ওসিকে অবহিত করা হয়। তিনি জানান, খুদে বার্তা পাওয়ার পর প্রাথমিক তদন্তে বেশ কিছু মিথ্যা অভিযোগও পাওয়া যায়। পূর্বশত্রুতার জের ধরে কাউকে ফাঁসানোর জন্য মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছেন কেউ কেউ।
উত্ত্যক্তকারীদের ঠেকাতে পুলিশের উদ্যোগ সম্পর্কে ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাসমত জাহান বলেন, ‘আগে মেয়েরা ভয়ে পুলিশ, অভিভাবক ও শিক্ষকদের কাউকে বলত না। এখন মেয়েরা অনেক সাহসী। তারা সাহস করে পুলিশকে জানাচ্ছে। এ কারণে স্কুলের আশপাশে বখাটেদের আনাগোনা এখন নেই বললেই চলে।’
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে দামপাড়ার বাংলাদেশ মহিলা সমিতি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের নিরাপত্তাকর্মী আনু মিয়ার সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, পুলিশ স্কুলে এসে উত্ত্যক্তকারীদের প্রতিরোধে করতে বলায় ছাত্রীদের সাহস বেড়েছে। আগে অনেক ছাত্রীই অভিযোগ করত, বাসা থেকে বের হওয়ার পর কিছু বখাটে তাদের পিছু নিয়েছে। অনেক সময় স্কুলের গেট পর্যন্তও চলে আসত। এখন স্কুলের আশপাশে কোনো বখাটে ঘোরাঘুরি করছে না।
মহিলা সমিতি বিদ্যালয়ে দুই মেয়েকে নিয়ে প্রতিদিন স্কুলে যান ইয়াসমিন আক্তার। তিনি জানান, তাঁর মেয়েরা তাঁকে বলেছে, বখাটেরা পিছু নিলে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে জানাবে।
তবে পুলিশের এ উদ্যোগের পাশাপাশি উল্টো চিত্রও রয়েছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী গত ১৯ এপ্রিল হালিশহর থানায় উত্ত্যক্তকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জিডি করেও কোনো প্রতিকার পাননি বলে অভিযোগ উঠেছে। ওই ছাত্রী জানান, জিডির পর পুলিশ একবার বাসায় এসেছিল। কিন্তু বখাটেকে ধরছে না। উল্টো মুঠোফোনে হুমকি দিয়ে আসছে। ভয়ে বাসার বাইরে বের হন না তিনি।
এ বিষয়ে পুলিশ কমিশনার আবদুল জলিল মণ্ডল জানান, খোঁজ নিয়ে তিনি এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন।

No comments

Powered by Blogger.