ঝরে পড়া নক্ষত্ররা by আহমেদ বাসার

আবুল হোসেন (১৫ আগস্ট ১৯২২-২৯ জুন ২০১৪) : চল্লিশের দশকের বাংলাদেশের একজন শক্তিমান কবি আবুল হোসেন ২৯ জুন ইহলোক ত্যাগ করেন। তাকে বাংলাদেশের প্রথম আধুনিক কবি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আবুল হোসেন দৈনন্দিন জীবনের ব্যবহার্য ভাষাকে কাব্যিক মহিমা দিয়েছেন। আবেগকে যথাসম্ভব সংযত করে স্ফটিকধর্মী এক অভিনব ভাষায় তিনি বাঙালির দৈনন্দিন জীবন ও পরিপার্শ্বকে চিত্রিত করেছেন। প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘নব-বসন্তে’ (১৯৪০) তার স্বকীয়তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। এরপর অনেকটা নীরবে নিভৃতেই তিনি সাহিত্য সাধনা চালিয়ে যান। তার কবিতায় দিনযাপনের গ্লানি যেমন আছে, তেমনি আছে পরিবার ও সমাজের অসঙ্গতির চিত্র। প্রেমের প্রসঙ্গও তার কবিতায় ঘুরেফিরে এসেছে। তবে এ ক্ষেত্রেও তার স্বভাবসুলভ বাকসংযম লক্ষ করার মতো। আত্মা অন্বেষা ও স্মৃতিকাতরতা তার কবিতায় নতুন আবহে রূপায়িত হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে তিনি পৌঁছে যান আত্মোপলব্ধির অনন্য দিগন্তে। ফলে তার আত্মজাগরণ অনিবার্য হয়ে ওঠে। এই আত্মজাগরণই তাকে জীবন সম্পর্কে আশাবাদী হতে উৎসাহিত করে। আবুল হোসেনের কবিতা ব্যক্তিগত অনুভবের ক্ষেত্র অতিক্রম করে সামষ্টিক চৈতন্যে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। দেশকাল সমাজের নির্মম বাস্তবতা প্রতীকী তাৎপর্য পায় তার শিল্পবিশ্বে।
সরদার ফজলুল করিম (১ মে ১৯২৫-১৫ জুন ২০১৪) : বাংলাদেশের প্রখ্যাত দার্শনিক, শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিক সরদার ফজলুল করিম গত ১৫ জুন পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নেন। তিনি বরিশাল জেলার একটি নিু মধ্যবিত্ত পরিবারে ১৯২৫ সালের ১ মে জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগ থেকে তিনি বিএ (অনার্স) ও এমএ উভয় পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণী লাভ করেন। ১৯৪৬ সালে তিনি একুশ বছর বয়সে প্রভাষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। কিন্তু প্রগতিশীল রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকায় পাকিস্তান সরকারের বিরাগভাজন হয়ে ওঠেন। ফলে তাকে পাকিস্তান শাসনামলের প্রায় পুরোটা সময়ই জেলে কাটাতে হয়েছে। জেলে বসে তিনি বিভিন্ন দাবিতে আটান্ন দিন অনশন করেছিলেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে আসেন। সরদার ফজলুল করিম ‘দর্শনকোষ’ নামে দর্শনশাস্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ রচনা করেছেন। এছাড়াও তার গুরুত্বপূর্ণ অনুবাদ কর্মগুলো হল- ‘প্লেটোর রিপাবলিক’, ‘প্লেটোর সংলাপ’, ‘এরিস্টোটলের পলিটিক্স’, ‘এঙ্গেলসের অ্যান্টি ডুরিং’, ‘রুশোর- সোশ্যাল কন্ট্রাক্ট’, ‘রুশোর - দি কনফেশনস’। তার মৌলিক সৃষ্টিকর্ম- ‘ চল্লিশের দশকের ঢাকা’, ‘নানা কথা’, ‘নানা কথার পরের কথা’, নূহের কিস্তি ও অন্যান্য প্রবন্ধ’, ‘রুমীর আম্মা ও অন্যান্য প্রবন্ধ’, ‘গল্পের গল্প’, ‘পাঠ প্রসঙ্গ’ প্রভৃতি।
মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান (৩ ডিসেম্বর ১৯২৮-১১ জানুয়ারি ২০১৪) : তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও প্রধান বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান গত ১১ জানুয়ারি ৮৬ বছর বয়সে মারা যান। তিনি সাহিত্যিক হিসেবেও বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছেন। তিনি একাধারে গবেষক, শিক্ষাবিদ, আইনজীবী ও অভিধান প্রণেতা। ভাষা আন্দোলনেও তিনি প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তার জন্ম ১৯২৮ সালের ৩ ডিসেম্বর ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলার দরিরামপুর গ্রামে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে বিএ (সম্মান) ও এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। পরে তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৮ সালে আধুনিক ইতিহাসের ওপর বিএ সম্মান ও স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। তার উল্লেখযোগ্য সৃষ্টিকর্ম- ‘রবীন্দ্র রচনার রবীন্দ্র ব্যাখ্যা’, রবীন্দ্র কাব্যে আর্ট, সঙ্গীত ও সাহিত্য’, ‘যথাশব্দ’, কোরআন সূত্র’, ‘গঙ্গাঋদ্ধি থেকে বাংলাদেশ’, ‘বচন ও প্রবচন’, মিত্রাক্ষর’, ‘স্বপ্ন, দুঃস্বপ্ন ও বোবার স্বপ্ন’, ‘রবীন্দ্রনাথ ও সভ্যতার সংকট’, ‘উন্নত মম শির’, ‘উদয়ের পথে আমাদের ভাবনা’, ‘রাজার চিঠির প্রতিক্ষায়’ প্রভৃতি। তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, একুশে পদকসহ অসংখ্য পুরস্কার লাভ করেন।
এছাড়াও এ-বছর বাংলাদেশের যেসব গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন তাদের মধ্যে আছেন বাংলাদেশের স্বনামধন্য লেখক ও শিক্ষাবিদ জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী। তিনি গত ১১ নভেম্বর ৮৬ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। বাংলা ও ইংরেজি মিলিয়ে তার গ্রন্থের সংখ্যা চল্লিশটি। বাংলাদেশের প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী গত ৩০ নভেম্বর আকস্মিকভাবে মারা যান। ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মিশেলে তিনি বাংলাদেশের চিত্রশিল্পে নতুন মাত্রা যোগ করেছিলেন। বাংলাদেশের অগণিত লেখকের বইয়ের অসাধারণ কিছু প্রচ্ছদও তিনি করেছিলেন। এছাড়াও বাংলাদেশের একজন গুরুত্বপূর্ণ লেখক ও অনুবাদক আবু শাহরিয়ার গত ৫ অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেন। তিনি শেক্সপিয়রের নাটক অনুবাদ করে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। ‘হেমলেট’ নাটকটি অনুবাদের জন্য তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। তিনি বেশ কিছু উপন্যাস ও গল্পগ্রন্থও রচনা করেছেন।
গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ (৬ মার্চ ১৯২৭-১৭ এপ্রিল ২০১৪) : বিশ্বসাহিত্যের একজন সর্বোচ্চ পঠিত ও সম্মানিত লেখক গার্ব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ গত এপ্রিলের ১৭ তারিখে ৮৭ বছর বয়সে পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নেন। তিনি ‘গাবো’ নামেও সমধিক পরিচিত। কলম্বিয়ান এ সাহিত্যিক ওয়ান হানড্রেড ইয়ারস অব সলিস্যুড (১৯৬৭), লাভ ইন দ্য টাইম অব কলেরা (১৯৮৫), নো ওয়ান রাইটস টু দ্য কর্নেল (১৯৬১) প্রভৃতি গ্রন্থের জন্য বিশ্বব্যাপী সমাদৃত ও স্বীকৃত। সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি ১৯৮২ সালে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। লাতিন আমেরিকার ইতিহাস ও জনজীবনকে রূপায়িত করতে গিয়ে তিনি একটি বিশেষ প্রকাশভঙ্গির আশ্রয় নিয়েছিলেন; যা ম্যাজিক রিয়েলিজম বা জাদুবাস্তবতা নামে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি লাভ করেছে। ষোড়শ শতকের ডন কুইক্সোটের লেখক সার্ভেন্তেজের সময় থেকে স্পেনিশ ভাষার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লেখক হিসেবে মার্কেজকে বিবেচনা করা হয়। পাশ্চাত্য সাহিত্যের ইতিহাসেও তার স্থান প্রথম সারিতে। চিলির কবি পাবলো নেরুদা বলেছিলেন - ‘ওয়ান হানড্রেড ইয়ারস অব সলিস্যুড’ সার্ভেন্তেজের ডন কুইক্সোটের সময় থেকে স্পেনিশ ভাষার সবচেয়ে বিস্ময়কর সৃষ্টি। মার্কেজকে অর্ধ-ম্যাক্সিকান ও অর্ধ-কলম্বিয়ান হিসেবে ধরা হয়। তার জন্ম উত্তর কলম্বিয়ার শহর আরাকাতকায়, যার আদলে তার মাস্টারপিস ‘ওয়ান হানড্রেড ইয়ারস অব সলিস্যুড’ এর মাকোন্দো শহরের দৃশ্যকল্প তৈরি হয়েছে। এমনকি তার নভেলা ‘লিফ স্টর্ম’ ও ‘ইন ইভিল আওয়ার’ উপন্যাসেও এ শহরের ছায়া দেখা যায়। মার্কেজের শৈশবকাল পারিবারিক ও রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়েছে। তার দাদা একজন কর্নেল হিসেবে সর্বত্র সম্মানিত ছিলেন। একজন লিবারেল মিলিটারি হওয়ায় তিনি ছেলের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করতেন। মার্কেজের পিতা একজন টেলিগ্রাফ অপারেটর থেকে ফার্মাসিস্ট হয়ে উঠেছিলেন। মার্কেজের মায়ের জন্য তার পিতার তীব্র ব্যাকুলতা ‘লাভ ইন দ্য টাইম অব কলেরা’ উপন্যাসের অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে। হাইস্কুলের গণ্ডি অতিক্রম করে কলেজে পা দেয়ার পর মার্কেজের মধ্যে লেখক হওয়ার বাসনা তৈরি হয়। যদিও তার পিতা-মাতা ছেলেকে একজন আইনজীবী হিসেবেই দেখতে চেয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত লেখক হওয়াই তার নিয়তি হয়ে ওঠে।
মায়া অ্যাঞ্জেলো (৪ এপ্রিল ১৯২৮-২৮ মে ২০১৪) :
ইংরেজি সাহিত্যের ইতিহাসে মায়া অ্যাঞ্জেলো একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম। বহুমাত্রিক প্রতিভায় ভাস্বর কৃষ্ণাঙ্গ এ লেখিকার জন্ম ১৯২৮ সালের ৪ এপ্রিল আরাকানসাসে। তিনি একাধারে কবি, নাট্যকার, গায়িকা, মঞ্চাভিনেত্রী, পরিচালক ও জীবনীকার। তিনি মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র, প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার ও জেরাল্ড ফোর্ডের আমন্ত্রণে বিভিন্ন সামাজিক সংস্থার দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি আমেরিকান ফিল্ম ইন্সটিটিউটের বোর্ড অব ট্রাস্টিস ও ডিরেক্টরস গিল্ডের সদস্য। তার প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য- জাস্ট গিভ মি অ্যা কুল ডিঙ্ক অব ওয়াটার, ফর আই ডাই, ওহ প্রে মাই উইংস আর গনা ফিট মি ওয়েল, স্টিল আই রাইজ, শ্যাকার হোয়াই ডোন্ট ইউ সিংগ, আই শেল নট বি মোনিড প্রভৃতি। মায়া অ্যাঞ্জেলো সর্বাধিক পরিচিতি লাভ করেছেন ১৯৭০ সালে প্রকাশিত তার আত্মজীবনীমূলক রচনা আই নো হোয়াই দ্য কেজেড বার্ড সিংগস গ্রন্থের জন্য। চারখণ্ডে প্রকাশিত তার এই আত্মজীবনীমূলক রচনাটি বেস্ট সেলারের মর্যাদা লাভ করেছে। ক্ষুধা, দারিদ্র্য এবং তীব্র যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে বেড়ে ওঠা এ লেখিকার কবিতার প্রধান বিষয় কৃষ্ণাঙ্গ সচেতনতা, হতাশা ও প্রেম। আত্মজীবনীমূলক রচনায় তিনি শ্বেতাঙ্গদের দ্বারা দীর্ঘদিন অবদমিত কৃষ্ণাঙ্গ জাতির যন্ত্রণাকে তুলে ধরেছেন নিজস্ব অভিজ্ঞতার আলোকে। ছোটবেলা থেকে তিনি জাতিগত বৈষম্যের অভিশাপকে প্রত্যক্ষ করেছেন নগ্নভাবে। সমগ্র জীবনব্যাপী অ্যাঞ্জেলো অসাধারণ কিছু কবিতা লিখে গেছেন। ২০১০ সালে প্রেসিডেন্টের অভিষেক অনুষ্ঠানে তিনি কবিতা পাঠ করেছিলেন। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তাকে দেশের সর্বোচ্চ সম্মানজনক পদক ‘প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম’ প্রদান করেছিলেন।
নাদিন গার্ডিমার (২০ নভেম্বর ১৯২৩-১৩ জুলাই ২০১৪) :
নোবেল পুরস্কারে সম্মানিত দক্ষিণ আফ্রিকার লেখক ও বর্ণবাদবিরোধী কর্মী নাডিন গার্ডিমার ১৩ জুলাই ২০১৪ তারিখে ৯০ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যু সংবাদ প্রচারিত হওয়ার পর ‘দ্য নেলসন ম্যান্ডেলা ফাউন্ডেশন’ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে- গার্ডিমার সাউথ আফ্রিকার সাহিত্যের সবচেয়ে সম্মানিত নারী লেখক। ফাউন্ডেশনের সভাপতি জাবুলো ডিবেলি বলেন- বিশ্বের একজন বড় লেখক, দেশপ্রেমিক এবং গণতন্ত্র ও সাম্যবাদের এক বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর আমরা হারিয়েছি। উল্লেখ্য, দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট নেলসন ম্যান্ডেলা ছিলেন গার্ডিমারের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। উপন্যাস, প্রবন্ধ ও অন্যান্য রচনায় তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদ প্রথার কঠোর সমালোচনা করেছেন। বার্গারস’স ডটার’সহ (১৯৭৯) তার তিনটি উপন্যাস সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছিল। বার্গারস ডটারের কাহিনী আবর্তিত হয়েছে একজন সাদা চামড়ার বর্ণবাদবিরোধী কর্মীর সন্তানকে ঘিরে; যিনি সরকার উৎখাতের আন্দোলনে শামিল হয়ে জেলে মৃত্যুবরণ করেন। এ উপন্যাসে ১৯৭৬ সালের সোয়াটো অভ্যুত্থানের বিবরণ উঠে এসেছে। তবে গার্ডিমার দাবি করেন - তার লেখা রাজনীতি নিয়ে নয়, বরং মানুষকে নিয়ে। নাডিন গার্ডিমার বিষয়ভিত্তিক সাহিত্যিক সৃষ্টির জন্য দারুণভাবে প্রশংসিত। তার সাহিত্যিক কণ্ঠস্বর জেন অস্টিনের মতোই স্পষ্ট। তার দৃষ্টি আফ্রিকার হৃদয় ও মৃত্তিকায় নিবদ্ধ; যা মার্ক টোয়েনের মিসিসিপি কিংবা মার্কেজের মাকোন্দো শহরের মতোই স্থানিক প্রতিনিধিত্বশীল। সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি ১৯৯১ সালে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়াও তিনি বুকার পুরস্কারসহ অগণিত পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেছেন। তার উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্ম- দ্য লাইং ডেজ, (৯৫৩), অ্যা ওয়ার্ল্ড অব স্ট্র্যান্জারস (১৯৫৮), অকেশন অব লাভিং (১৯৬৩), কনজারভেশনিস্ট (১৯৭৪), মাই সনস স্টোরি (১৯৯০), গেট অ্যা লাইফ (২০০৫), ফেস টু ফেস (১৯৪৯), সিক্স ফিট অব দ্য কান্ট্রি (১৯৫৩) প্রভৃতি।
আমিরি বারাকা (৭ অক্টোবর ১৯৩৪-৯ জানুয়ানি ২০১৪) : আমেরিকান কবি আমিরি বারাকা- যিনি ৯/১১ এর সন্ত্রাসী হামলা নিয়ে একটি বিতর্কিত কবিতা লেখার দায়ে নিউ জারসির ‘পোয়েট লরিয়েট’ পদবি হারিয়েছিলেন- গত ৯ জানুয়ারি ঊনআশি বছর বয়সে মারা যান। তাকে ১৯৬০ সালের ‘ব্ল্যাক আর্ট মুভমেন্টে’র কেন্দ্রীয় ব্যক্তি হিসেবে মূল্যায়ন করা হয়। বারাকা তার কবিতা, নাটক, কথাসাহিত্য ও প্রবন্ধে একটি আক্রমণাত্মক ভঙ্গির আশ্রয় নিয়েছিলেন, যা তাকে স্বকীয় করে তুলেছে। তার উল্লেখযোগ্য সৃষ্টিকর্ম- প্রিফেচ টু অ্যা টুয়েন্টি ভলিউম সুইসাইড নোট (১৯৬১), দ্য ডেড লেকচার : পোয়েমস (১৯৬৪), ব্ল্যাক ম্যাজিক (১৯৬৯), ডাচম্যান ( ১৯৬৪), দ্য স্লেভ (১৯৬৪) প্রভৃতি।
এছাড়াও বিশ্বসাহিত্যের যেসব গুরুত্বপূর্ণ লেখক এ-বছর মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের মধ্যে আছেন প্রখ্যাত ভারতীয় লেখক ও সাংবাদিক খুশবন্ত সিং। তিনি ২০ মার্চ ২০১৪ তারিখে ৯৯ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। ইংরেজ ঔপন্যাসিক, অভিনেত্রী ও মডেল এলিজাবেথ জেন হাওয়ার্ড মৃতুবরণ করেন ২ জানুয়ারি ২০১৪ তারিখে। তিনি ক্যাজালেট ক্রনিকলস গ্রন্থের জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

No comments

Powered by Blogger.