ট্যাংকারডুবি মানবসৃষ্ট, ক্ষতি ৫০০ কোটি টাকা -সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির তদন্ত দল

সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে তেলবাহী ট্যাংকারডুবির ঘটনায় সরকারের উদাসীনতাকে দায়ী করেছে বিএনপির তদন্ত দল। দলটির সদস্যদের ধারণা, এ ঘটনায় ক্ষতির পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। তাঁরা মনে করেন, এটি মানবসৃষ্ট দুর্যোগ। দেশে সুশাসন না থাকলে এ ধরনের দুর্যোগ হয়। দুঃশাসনের অবসান না হলে ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্যোগ আরও ঘটতে পারে। সুন্দরবন ঘুরে এসে আজ শুক্রবার সকালে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তদন্ত দলের প্রধান ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমদ এসব কথা বলেন। তদন্ত দল বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন রক্ষায় সুন্দরবনের ২৫ কিলোমিটারের মধ্যে কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, জাহাজভাঙা শিল্প বা কোনো লাল শ্রেণীর শিল্প স্থাপন না করাসহ ছয়টি সুপারিশ করেছে। উল্লেখযোগ্য অন্য সুপারিশগুলোর মধ্যে আছে শ্যালা নদী ও সুন্দরবনের মাঝ দিয়ে সব ধরনের নৌচলাচল স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে হবে। অবিলম্বে ঘষিয়াখালী-মংলা চ্যানেল চালু করতে হবে। ট্যাংকারডুবির জন্য দায়ীদের বিচারের আওতায় আনতে ও ক্ষতিপূরণ আদায় করতে হবে। সুন্দবরন-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ এবং সেখানকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ কর্তৃপক্ষ গঠন করা। হাফিজ উদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত দল ২২ ডিসেম্বর শ্যালা নদীসহ সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করে। আজ সংবাদ সম্মেলনে তদন্ত প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়।
হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, ট্যাংকারডুবির ৪৮ ঘণ্টা পরও সরকার কোনো উদ্ধারকার্যক্রম ও জরুরিভিত্তিতে তেল অপসারণের কোনো উদ্যোগ নেয়নি। এতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় শ্বাসমূলীয় বন ও রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আবাসস্থল সুন্দরবনের ওপর মহাবিপর্যয় নেমে আসে। ঘটনার তিন দিন পর নৌমন্ত্রী শাজাহান খান তেল নিঃসরণে সুন্দরবনের তেমন ক্ষতি হবে না বলে দাবি করেন। আর ঘটনার ছয় দিন পর প্রধানমন্ত্রী সুন্দরবনের তেলের দূষণ কমাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।
হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, ডুবে যাওয়া ‘ওটি সাউদার্ন স্টার-৭’-এর কোনো ফিটনেস সার্টিফিকেট ছিল না। এটি অবৈধ রুটে বেআইনিভাবে তেল পরিবহন করছিল। সাউদার্ন স্টার ছিল বালু ও পাথরবাহী কার্গো। এর মালিক সরকারের একজন মন্ত্রীর শ্যালক। তিনি বলেন, তদন্তকালে সুন্দরবন এলাকায় তাঁরা কোনো প্রাণের স্পন্দন পাননি। সেখানে থাকা ইরাবতি ডলফিন দেখা যায়নি। মাছ নেই। শ্বাসমূলীয় বন তেলে কালো হয়ে গেছে। তেলের সংস্পর্শে সেখানকার পাখিরাও প্রজননক্ষমতা হারাতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এক প্রশ্নের জবাবে হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, সুন্দরবনে কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পশ্চিমবঙ্গে হতে পারত। কিন্তু ভারত সেখানে না করে বাংলাদেশের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে। সেখানে বিদ্যুৎ কেন্দ্র হলে বাংলাদেশ নিজেই জলবায়ু দূষণকারী দেশ হিসেবে চিহ্নিত হবে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল গ্রিন ফান্ডের জন্য আবেদন করার যোগ্যতা হরাবে।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ তদন্ত দলের সদস্য নজরুল ইসলাম, শফিকুল ইসলাম, মনিরুজ্জামান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.