রাজশাহীতে মুক্তিপণ না পেয়ে শিশুকে গলা কেটে হত্যা

অপহরণের পর ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ না পেয়ে ১০ বছরের এক শিশুকে গলা কেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। অপহরণের ৭ দিন পর শুক্রবার সকালে তার লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। রাজশাহীর মোহনপুরে এ ঘটনা ঘটেছে। ঘটনায় জড়িত অভিযোগে এক নারীসহ আটজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শিশুটি উদ্ধারে পুলিশের চরম গাফিলতি ছিল বলে অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী। তারা বলছেন, পুলিশ বিষয়টিকে প্রথমে তেমন গুরুত্ব দেয়নি। ঘটনার পরপরই গুরুত্ব দিয়ে উদ্ধার চেষ্টা করলে হয় তো তাকে জীবিতই উদ্ধার করা সম্ভব হতো। রাজশাহী সদর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আবদুর রশিদ যুগান্তরকে জানান, ২০ ডিসেম্বর সন্ধ্যার পর থেকে রাব্বী নিখোঁজ ছিল। পরদিন তার বাবা থানায় জিডি করেন। ২২ ডিসেম্বর দুপুরে একব্যক্তি মোবাইল ফোনে রাব্বীকে অপহরণের বিষয়টি স্বীকার করে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। এ ঘটনা রাব্বীর বাবা পুলিশকে জানালে ওই ফোনের সূত্র ধরে ২৪ ডিসেম্বর বিকালে বেড়াবাড়ী গ্রামের আবদুল হাকিমের ছেলে শাহাবুদ্দিন ও আলাউদ্দিনের ছেলে আমিনুল ইসলামকে আটক করে পুলিশ। তাদের তথ্যের ভিত্তিতে মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে বৃহস্পতিবার ভোরে বেড়াবাড়ী গ্রামের নাজমুল হক, আবুল কাশেম, আছিনুর বেগম, মাজেদুর রহমান সাগর, রিপন সরকার লিটন, আলাউদ্দিন ও পবা উপজেলার বাগধানি গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেনকে আটক করে পুলিশ।
মোহনপুর থানার ওসি আবদুল হামিদ জানান, জিজ্ঞাসাবাদে সাগর রাব্বীকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে। তিনি বলেন, ২০ ডিসেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে পাশের বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে রাব্বীকে কৌশলে ডেকে নেয় একই এলাকার সাগর। এ সময় সাগরের সঙ্গে রিপন ও নাজমুলও ছিল। পরে তারা রাব্বীকে ডাইংপাড়া মাঠে নিয়ে যায়। সেখানে পেছন থেকে প্রথমে রাব্বীর মাথায় চাপাতির কোপ দেয়া হয়। এতে সে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে সাগর তার দুই পা চেপে ধরে আর রিপন ও নাজমুল জবাই করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। পরে তারা তাকে সেচের কাজে ব্যবহৃত নালায় পুঁতে রেখে চলে যায়। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাপাতিটি পাশেই বারনই নদীতে ফেলে দেয় তারা।
ওসি আবদুল হামিদ আরও বলেন, সাগরের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী রাব্বীর লাশ উদ্ধার করা হয়। লাশের মাথা শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন রয়েছে। একটি হাত পাওয়া যায়নি। তিনি জানান, লাশ উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে লাশ উদ্ধারের খবরে শত শত মানুষ ঘটনাস্থলে ভিড় জমায়। এ সময় নিহতের স্বজনদের আহাজারিতে বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। রাব্বীর বাবা আলী হোসেন ও মা আরজিয়া বেগম জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।
স্থানীয়রা পুলিশের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ এনে বলেন, অপহরণের পরপরই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে খুনিরা কেন মুক্তিপণ দাবি করবে? ২১ ডিসেম্বর থানায় জিডি করা হয়, এরপর ২৪ ডিসেম্বর মামলা হয়। এরপরও পুলিশ রাব্বীকে উদ্ধারে তেমন কোনো তৎপরতা দেখায়নি। প্রথম থেকে পুলিশ তৎপর
হলে রাব্বীকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হতো।
তবে সহকারী পুলিশ সুপার আবদুর রশিদ এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, পুলিশ শুরু থেকে গুরুত্ব দিয়েই শিশুটিকে উদ্ধারের চেষ্টা করে।

No comments

Powered by Blogger.