পথ রাঙাতে রাতভর রংতুলির কর্মযজ্ঞ

শত বাধা, প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে বাংলাদেশ যে এগিয়ে যাচ্ছে, তার প্রতীকী প্রমাণ হয়েই যেন প্রতিবছর দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে জাতীয় সংসদ ভবনের সামনের রাজপথে প্রথম আলো-এয়ারটেলের বাংলা নববর্ষ বরণের আলপনা।

রাত জেগে আলপনা আঁকতে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে সমবেত হাজার হাজার উৎসাহী নগরবাসীর সামনে গতকাল রোববার এমন মন্তব্য করেন জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। কালো পিচঢালা পথের বুক রাঙিয়ে তুলতে রংতুলির টানে আলপনা আঁকার এই বিপুল কর্মযজ্ঞের উদ্বোধন করেন তিনি। এর আগে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্পিকার কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘রাঙিয়ে দিয়ে যাও, যাও যাও গো এবার যাবার আগে’ গানটি উদ্ধৃত করে ১৪২০ বঙ্গাব্দকে বিদায় জানান। তিনি বলেন, ‘প্রাণের স্পর্শে, মনের রঙে রাজপথকে রাঙিয়ে তোলার পাশাপাশি নতুন বছরটিও যেন সুন্দর হয়ে আসে আমাদের জীবনে।’
প্রথম আলো ও এয়ারটেলের যৌথ আয়োজনে এবং বার্জার পেইন্টস, এশিয়াটিক ৩৬০ মার্কেটিং কমিউনিকেশন ও প্রথম আলো বন্ধুসভার বন্ধুদের সহযোগিতায় গতকাল রাতভর তৃতীয়বারের মতো মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে আলপনা আঁকা হলো। আলপনা আঁকার এই উদ্যোগ শুরু হয়েছিল ১৪১৮ বঙ্গাব্দের ৩০ চৈত্র রাতে। সেবার ১৪১৯-কে স্বাগত জানিয়ে ‘আঁকব আমরা, দেখবে বিশ্ব’ শীর্ষক আলপনা আঁকা হয়েছিল দুই লাখ ৬০ হাজার বর্গফুটজুড়ে। গত বছর ‘আলপনায় বৈশাখ’ শীর্ষক আলপনা আঁকা হয়েছিল তিন লাখ বর্গফুটজুড়ে। নগরবাসী বিপুল সাড়া দিয়েছিলেন গত দুই বছর। এবার ‘আলপনায় বৈশাখ-১৪২১’ নামের এই অঙ্কনকর্মে আগের চেয়েও বেশি সাড়া মিলেছে। সন্ধ্যার পর থেকেই উৎসাহী আঁকিয়েরা জাতীয় সংসদের দক্ষিণ পাশে সমবেত হতে থাকেন। এবার আঁকা হয় তিন লাখ ২৬ হাজার বর্গফুটে।
জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজাসংলগ্ন অংশে স্থাপন করা হয় বড় বড় এলইডি পর্দা। মাঝে মাঝে স্টলের সারি। মাঝখানে মঞ্চ। এক পাশে গত দুবারের আলপনার ছবির প্রদর্শনী। পথে রঙিন আলপনা অঙ্কন, তার সঙ্গে মঞ্চে গান, নৃত্য ও নাটকের আয়োজন। সব মিলিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশ।
আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের আগে মঞ্চের লাল কার্পেটে এসে আলপনা নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানান শিল্পী ও উদ্যোক্তারা। বরেণ্য শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী, সমরজিৎ রায়চৌধুরী, মনিরুজ্জামান ও অশোক কর্মকারের নেতৃত্বে তিন শতাধিক নবীন শিল্পী অংশ নেন আলপনা আঁকায়। এ পর্ব সঞ্চালনা করেন পূজা সেনগুপ্ত। মূল অনুষ্ঠান শুরু হয় শিল্পী হিমাদ্রী শেখর ও শিমু দে’র গাওয়া বর্ষবিদায় জানাতে—‘ব্যর্থ প্রাণের আবর্জনা পুড়িয়ে ফেলে আগুন জ্বালো’ এবং নতুন বছরকে স্বাগত জানিয়ে ‘এসো হে বৈশাখ’ গান দুটি দিয়ে। এ পর্ব সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আনিসুল হক।
গানের পর গত বছরের আলপনা আঁকার ওপর নির্মিত একটি প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়। শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী, সমরজিৎ রায়চৌধুরী, বার্জার পেইন্টস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রূপালী চৌধুরী, এয়ারটেল বাংলাদেশ লিমিটেডের চিফ মার্কেটিং অফিসার রাজনিশ কওল, হেড অব মার্কেটিং মীর নওবত আলী, এশিয়াটিক ৩৬০ মার্কেটিং কমিউনিকেশনের চেয়ারম্যান আলী যাকের ও প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন। তাঁরা বলেন, ‘পয়লা বৈশাখ আমাদের প্রধান অসাম্প্রদায়িক চেতনার উৎসব। এই উৎসব জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছে। নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে এই উৎসবে সংযোজিত হয়েছে দেশের ঐতিহ্যবাহী লোকচিত্রকলার উপাদান আলপনা। এই আলপনার মধ্যে দিয়ে বাংলার প্রকৃতি, সংস্কৃতিকে তুলে ধরা হচ্ছে।’
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর পথে যখন শিল্পী ও আঁকতে আসা উৎসাহী নগরবাসী রংতুলি নিয়ে ব্যস্ত, তখন মঞ্চে শুরু হয় গান ও নৃত্যের পরিবেশনা। নৃত্য পরিবেশন করেন নৃত্যাঞ্চলের শিল্পীরা। সংগীত পরিবেশনায় ছিলেন কিরণ চন্দ্র রায়, চন্দনা মজুমদার, বাপ্পা মজুমদার, বালাম, দিনাত জাহান মুন্নী, কোনাল ও গানের দল ‘জলের গান’। নাটক পরিবেশন করে টাঙ্গাইলের দল ‘ভাদাইম্যা নাট্যগোষ্ঠী’।

No comments

Powered by Blogger.