সোনিয়ার হাতের পুতুল ছিলেন মনমোহন

ড. মনমোহন সিং কেবল নামেই প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তার হাতে কোনো ক্ষমতা ছিল না। কেন্দ্র সরকারের অধিকাংশ সিদ্ধান্ত নিতেন কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট সোনিয়া গান্ধী। মনমোহন সিং ছিলেন এক রকম তার হাতের পুতুল। এক বইয়ে এমন দাবি করেছেন ড. মনমোহন সিংয়ের সাবেক মিডিয়া উপদেষ্টা এবং সাংবাদিক সঞ্জয় বারু। লোকসভা নির্বাচনের মাঝে এই বইয়ের প্রকাশ নিয়ে কংগ্রেস এখন বেশ বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছে। সঞ্জয়ের লেখা দ্য অ্যাক্সিডেন্টাল প্রাইম মিনিস্টার, মেকিং অ্যান্ড আন মেকিং অব মনমোহন সিং নামে ওই বইয়ে বলা হয়, কংগ্রেসে দ্বৈতক্ষমতা-কেন্দ্রের বিষয়টি ঘোর বাস্তব এবং তা এতটাই যে দ্বিতীয় মেয়াদে কেবল নামেই প্রধানমন্ত্রী ছিলেন মনমোহন সিং। বস্তুত কোনো ক্ষমতাই ছিল না তার।
মন্ত্রী-আমলা নিয়োগ থেকে শুরু করে সব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তই নিতেন কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী। যদিও মনমোহন এতে স্বচ্ছন্দ্য না হলেও বাধা দেননি কখনও। সঞ্জয় বারু নামে ওই লেখক সাধারণের কাছে তেমন পরিচিত না হলেও, ভারতের জাতীয় রাজনীতি এবং মিডিয়ামহলে বেশ পরিচিত। ইউপিএ সরকারের গোড়ার বছর মনমোহন সিংয়ের মিডিয়া উপদেষ্টা ছিলেন তিনি। সেই সুবাদে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাকে প্রায়ই দেখা যেত প্রধানমন্ত্রীর কাছাকাছি এবং টিভির পর্দায়। জানা যায়, সঞ্জয় বারু মূলত সাংবাদিক। মনমোহন রিজার্ভ ব্যাংকের গভর্নর পদে থাকার সময় থেকেই দুজনের আলাপ। পরবর্তীকালে সেই বন্ধুত্ব এতটাই গভীর হয় যে, প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ নিয়েই বারুকে মিডিয়া উপদেষ্টা হিসেবে বেছে নেন মনমোহন। বইয়ের যে সারসংক্ষেপ শনিবার ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের কাছে পাঠিয়েছেন সঞ্জয় তাতে বলা হয়েছে, দ্বৈতক্ষমতা-কেন্দ্র যে বিভ্রান্তি তৈরি করছে, তা মনমোহনও নিজেও বুঝতেন। কিন্তু একই সঙ্গে বলতেন, দলের সভানেত্রীই যে ক্ষমতার কেন্দ্র, তা আমাকে মেনে নিতে হবে। বারু এও লিখেছেন, ২০০৪ সালে প্রধানমন্ত্রী পদের দাবি সোনিয়া গান্ধী যেভাবে ছেড়ে দিয়েছিলেন, তা মোটেই আত্মত্যাগ ছিল না। বরং সেটা ছিল কৌশলী পদক্ষেপ। প্রধানমন্ত্রীকে পদ দিলেও কর্তৃত্ব কখনও দেননি সোনিয়া। সঞ্জয়ের দাবি, মন্ত্রিসভায় নিজের পছন্দের লোকদের ঢোকাতে পারেননি মনমোহন।
উপরন্তু তার সঙ্গে আলোচনা না করেই কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর পদে প্রণব মুখার্জিকে (ভারতের বর্তমান রাষ্ট্রপতি) বসিয়েছিলেন সোনিয়া। মনমোহন এই পদে নিজের প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা রাঙ্গরোজনকে বসাতে চেয়েছিলেন। এদিকে শনিবার প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় এক বিবৃতিতে ড. মনমোহন সিংয়ের মুখপাত্র পঙ্কজ পাচুরি সঞ্জয় বারুর এই বইটিকে আদ্যপান্ত কল্পনাপ্রসূত বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, সরকারের ভেতরের খবর জানার সুযোগ থাকার ফায়দা নিয়ে কাল্পনিক কথা লিখেছেন বারু। এই সব বক্তব্য ভিত্তিহীন। ৩০১ পৃষ্ঠার বইটি আজ থেকে ভারতের বাজারে পাওয়া যাবে। বইটিতে ভারতের এই মৃদুভাষী প্রধানমন্ত্রীর তীব্র সমালোচনা করে বলা হয়েছে যে মনমোহন সিং দুর্নীতি থেকে তার চোখ সরিয়ে রেখেছিলেন যাতে তার বিতর্কিত সরকারের টিকে থাকতে সুবিধা হয়। মনমোহন ভেবেছিলেন তিনি হয়তো তার মন্ত্রিসভার সদস্যদের নিজের মতো করে বাছাই করতে পারবেন। কিন্তু সোনিয়া গান্ধী তার বিষদাঁত ভেঙে দিয়েছিলেন এবং মনমোহনের সে স্বপ্ন অংকুরেই বিনষ্ট হয়েছিল। সঞ্জয় বারু আরও লিখেছেন, মন্ত্রিসভার ওপর প্রধানমন্ত্রী ড.মনমোহন সিংয়ের কর্তৃত্ব ছিল খুব সামান্যই এবং কোনো গুরুত্বপূর্ণ ফাইল ছাড়ার আগে সোনিয়া গান্ধীর পরামর্শ নিতে হতো। এমন অসংখ্য মন্তব্য আর দাবি করা হয়েছে বইটাতে। তাই বাজারে আসার আগেই নির্বাচনের মধ্যে রাজনৈতিকমহল এ নিয়ে একেবারে সরগরম। এছাড়া সঞ্জয় তার পদের সুযোগ নিয়ে বাণিজ্যিক ফায়দা লোটার চেষ্টা করেছেন বলেও তিনি জানান।

No comments

Powered by Blogger.