খাদ্যে ভেজাল উদ্বেগজনক-আইন তৈরি ও প্রয়োগ জরুরি

সরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের দীর্ঘ দেড় যুগের অব্যাহত গবেষণার ফল থেকে জানা গেছে, ৫৪ শতাংশ খাদ্যের মধ্যে ভেজাল রয়েছে। এটি নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক তথ্য।
অর্ধেকের বেশি খাদ্যে ভেজাল থাকার অর্থ দাঁড়ায়, ভেজালের প্রবণতা বাড়ছে। আর কোনো না কোনো খাদ্য থেকে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কেমিক্যাল কম-বেশি সব মানুষের শরীর ক্ষতিগ্রস্ত করছে। অর্ধেকের বেশি খাদ্যদ্রব্য ভেজাল বলে কারোরই তা থেকে রক্ষা পাওয়ার কথা নয়, উচ্চ থেকে নিম্ন শ্রেণী- সব পর্যায়ে তা পৌঁছে যাচ্ছে অবলীলায়। ফলমূল, সবজি, মাছ-মাংস ইত্যাদি তাজা রাখার জন্য ক্যালসিয়াম কার্বাইড, ইথোফেন ব্যবহৃত হয়। সংরক্ষণের ক্ষেত্রে ব্যবহার তো করাই হয়, তার ওপর ফরমালিনযুক্ত গুঁড়া দুধ দিয়ে মিষ্টি দ্রব্যও তৈরি করা হয়। টমেটো, পেঁপে, কলা প্রভৃতি পাকানো হয় কেমিক্যালের সাহায্যে কৃত্রিম উপায়ে। তেল, ঘি, তরল দুধ, জুস- এসবের মধ্যেও ক্ষতিকর বস্তু ও রং মেশানো হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব খাদ্য থেকে যে বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্য শরীরে প্রবেশ করছে, তাতে কিডনি, পাকস্থলী, মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ছাড়াও ক্যান্সারের ঝুঁকি রয়েছে। গর্ভবতী মা ও সন্তানের জন্য এসব দূষিত খাদ্য সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর, যা আমাদের অনাগত শিশুদের মেধাহীন ও পঙ্গু করে ফেলতে পারে বলে গবেষকরা আশঙ্কা করছেন।
এ অবস্থায় সরকারের কর্তব্য এ ব্যাপারে আশু পদক্ষেপ গ্রহণ। সরকার এরই মধ্যে নিরাপদ খাদ্য আইনের খসড়া অনুমোদন করলেও এ মেয়াদের বাকি সময়ে সম্পূর্ণ হবে না বা আইন প্রয়োগ পর্যন্ত কাজ করা যাবে না। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। পরবর্তী সরকারের দ্বারা তা সমাধা হতে হলে আবার দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় তা বিলম্বিত হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। কিন্তু প্রতি মুহূর্তে জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি বেড়ে চলেছে। অবশ্যই তা প্রতিরোধ করতে হবে। এ জন্য এ বিষয়টি অত্যন্ত জনগুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করে আইন প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে তা অবিলম্বে প্রয়োগ করা হোক।

No comments

Powered by Blogger.