বিসিক শিল্পনগরী-প্লট আছে, শিল্প নেই
মানিকগঞ্জে বিসিক (বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন) শিল্পনগরী সম্প্রসারণের যে উদ্যোগ শিল্প মন্ত্রণালয় গ্রহণ করেছে, তা নিঃসন্দেহে সাধুবাদযোগ্য। ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলায় এ ধরনের বিশেষায়িত প্লটের চাহিদা থাকাও স্বাভাবিক। কিন্তু একই সঙ্গে এটাও মনে রাখা জরুরি, দেশের অন্যান্য শিল্পনগরীর চিত্র আশাব্যঞ্জক নয়। বৃহস্পতিবার সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদন সূত্রে জানা যাচ্ছে, সারাদেশের ৭৪টি শিল্পনগরীতে যে ১০ হাজারের বেশি
প্লট রয়েছে, তার মধ্যে কমবেশি সাড়ে তিন হাজার কলকারখানা স্থাপিত হয়েছে। বিপুল অবশিষ্ট প্লট 'গোচারণ ভূমি' হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার খবর মাঝে-মধ্যেই সংবাদমাধ্যমে উঠে আসতে দেখি আমরা। আবার উল্টো চিত্রও আছে। কিছুদিন আগে সমকালেই প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছিল, বগুড়া, রংপুর, পাবনা, নীলফামারীর সৈয়দপুর, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী ও দিনাজপুরে সব শিল্প প্লট বরাদ্দ হয়ে গেছে। নতুন উদ্যোক্তাদের জায়গা দিতে মানিকগঞ্জের মতো সেসব শিল্পনগরীরও সম্প্রসারণের দাবি উঠেছিল বেশ কয়েক বছর আগে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেই দাবি মাথা কুটে মরেছে শিল্প মন্ত্রণালয় ও পরিকল্পনা কমিশনে। এটা আশা করা স্বাভাবিক যে, মানিকগঞ্জের পর সেগুলোর সম্প্রসারণেও সরকার উদ্যোগী হবে। কিন্তু অলস পড়ে থাকা সংখ্যাগরিষ্ঠ শিল্পনগরীগুলোর কী হবে? বছরের পর বছর কৌতূহল উদ্দীপক সংবাদ আইটেম হিসেবে থেকে যাবে? আমরা মনে করি, বিসিক শিল্পনগরীগুলো ঢেলে সাজানো এখন সময়ের প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে। অব্যবহৃত শিল্প প্লটগুলোতে শিল্প স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। শিল্পের স্থানান্তর হলেও বা ক্ষতি কী? মানিকগঞ্জে যদি প্লট স্বল্পতা দেখা দেয়, কিছু শিল্প রাজধানী থেকে দূরের শিল্পনগরীগুলোতে নিলে ক্ষতি কী? তাতে করে একদিকে যেমন শিল্পায়নের সুষম বণ্টনের পথে এক ধাপ অগ্রগতি হবে, ঢাকামুখী জনস্রোতের চাপও কমবে। শিল্পায়নে বৈচিত্র্যও থাকা দরকার। সব শিল্পনগরীতেই আমরা দেখছি, প্রায় একই ধরনের শিল্প কারখানা গড়ে উঠতে। কাঁচামালের প্রাপ্যতা বিবেচনায় বিভিন্ন শিল্পনগরী ভিন্ন ভিন্ন শিল্পের জন্য নির্ধারিত করে দিলে ক্ষতি কী? আসলে প্রয়োজন ষাটের দশক থেকে বিভিন্ন পর্যায়ে গড়ে ওঠা শিল্পনগরীগুলো নিয়ে নীতিনির্ধারকদের উদ্ভাবনী চিন্তা ও তৎপরতা। মানিকগঞ্জ শিল্পনগরী সম্প্রসারণের পাশাপাশি সেটাও শুরু হোক।
No comments