ইশান্ত-স্যামুয়েলসের প্রত্যাবর্তন

বয়সের ব্যবধান ৮ বছর। খেলার ধরন বা ক্যারিয়ারের গতিপথেও মিল খুব একটা খুঁজে পাওয়া যাবে না। তবে একটা জায়গায় দুজনের দারুণ মিল। দুজনই প্রতিভাবান, সেই প্রতিভার ঝলক দেখিয়ে ক্রিকেটবিশ্বকে চমকে দিয়ে দুজনেরই শুরু এবং একসময় দুজনেরই পথ হারিয়ে ফেলা। তবে বারবাডোজ টেস্টের তৃতীয় দিনে দুঃসময়কে পেছনে ফেলার ইঙ্গিত দিয়েছেন দুজনই। আরেকটি বৃষ্টিবিঘ্নিত দিনে আলো ছড়িয়েছেন ইশান্ত শর্মা ও মারলন স্যামুয়েলস।
২০১ রানের পুঁজি নিয়েও ভারত লিড পেয়েছে ইশান্তের আগুনে-বোলিংয়ে। ইতিহাসের পঞ্চম সর্বকনিষ্ঠ বোলার হিসেবে শততম উইকেট ছোঁয়ার দিনে করেছেন ক্যারিয়ার সেরা বোলিংও। ঝড়ের মুখে শক্ত হাতে উইন্ডিজ ইনিংসের হাল ধরেছিলেন স্যামুয়েলস। দলকে লিড এনে দিতে পারেননি, পারেননি তিন অঙ্ক ছুঁতেও। তবে হার মানেননি লড়াইয়ে, অপরাজিত থেকেই মাঠ ছেড়েছেন।
আগের দুই দিনের মতো বৃষ্টিতে কালও খেলা শুরু হয়েছে দেরিতে। দিনের শুরুতেই মুরালি বিজয়কে ফিরিয়ে দেন রবি রামপল। দ্বিতীয় উইকেটে দ্রাবিড়ের সঙ্গে ৬৩ রানের জুটির পর ফিরে গেছেন অভিনব মুকুন্দ। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ভারতের রান ২ উইকেটে ১৩৭। প্রথম ইনিংসের ১১ রান মিলিয়ে মোট লিড ১৪৮।
২০০৮ সালের অস্ট্রেলিয়া সফর, রিকি পন্টিংকে নাকানি-চুবানি খাওয়ানো। শুরুর সেই প্রতিশ্রুতি পরে খুব কমই পাওয়া গেছে ইশান্তের বোলিংয়ে। মাঝেমধ্যে বিচ্ছিন্ন দু-একটি স্পেলে সেসব মনে করিয়ে দিয়েছেন, কিন্তু ধারাবাহিকতা ছিল না। অনেকে মনে করেন, রাতারাতি তারকা হয়ে যাওয়া, প্রথম আইপিএলে প্রায় মিলিয়ন ডলার পেয়ে যাওয়া—এসবের সঙ্গে তাল মেলাতে না পারাই এ জন্য দায়ী। ১০০ উইকেট পেতে তাই লেগে গেল ৩৩ টেস্ট, সেই দ্বিতীয় টেস্টের (২০০৭ সালে) পর আরেকবার ৫ উইকেট পেলেন পরশু।
কারণ যা-ই হোক, দুঃসময়কে আপাতত পেছনে ফেলতে পেরে ইশান্তের কণ্ঠে ধরা পড়ল স্বস্তি। সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়ল তাঁর, ‘সবাই আমাকে বলত, সব খেলোয়াড়ের জীবনেই উত্থান-পতন আসে। বয়সটা আমার পক্ষে আছে। শুধু বোলিং আর ফিটনেসটা নিয়ে কাজ করতে হবে। সেটাই আমি করেছি। সে সময়টা সবচেয়ে কঠিন ছিল, কেউ কিছু জিজ্ঞেস করত না, কোনো খোঁজখবর রাখত না। পরিবারের সমর্থনটাই সে সময় গুরুত্বপূর্ণ ছিল।’
পরশু স্যামিকে নিয়ে উইন্ডিজকে লিড এনে দেওয়ার পথেই এগোচ্ছিলেন স্যামুয়েলস। কিন্তু ৬ বলের মধ্যে স্যামি, রামপল ও এডওয়ার্ডসকে ফিরিয়ে ইনিংস শেষ করে দিয়েছেন ইশান্ত। শেষ উইকেট দুটি নিয়েছেন টানা দুই বলে, পরের ইনিংসে সুযোগ আছে হ্যাটট্রিকের।
সঙ্গীর অভাবে তিন অঙ্ক ছোঁয়া হয়নি। তবে নির্বাচকদের মুখ রক্ষা আর নিজের জন্য আত্মবিশ্বাসের জোগান—দুটোই করতে পেরেছেন স্যামুয়েলস। ম্যাচ পাতানোর অভিযোগে দুই বছর বাইরে থাকার পর আস্তে আস্তে যেন ফিরে পাচ্ছেন নিজেকে। পাকিস্তানের বিপক্ষে শেষ টেস্টে রান পেয়েও এই সিরিজের প্রথম টেস্টে বাইরে বসে থাকতে হয়েছিল। এটাই তাতিয়ে দিয়েছিল তাঁকে, ‘দুই বছর পর প্রথম টেস্ট খেলে ৫৫ করার পরও জ্যামাইকায় পরের ম্যাচে বাদ দেওয়া হয়েছিল। আমার ভেতরের আগুনে এটা আরও ঘি ঢেলেছে। এখন সুযোগ পেয়েছি, দুই হাতে লুফে নিতে চাই। পথের প্রতিবন্ধকতাগুলোকে এখন আমি গ্রহণ করে নিই। ওই বাধাগুলো পেরোতেই করি পরিকল্পনা।’

No comments

Powered by Blogger.