বাজার তদারকি

দ্রব্যমূল্যের তদারকি প্রাথমিকভাবে একটি প্রশাসনিক বিষয় হলেও, এর কোনো বাস্তব উপস্থিতি লক্ষ করা যায় না। এই প্রেক্ষাপটে বাজার তদারকিতে হঠাৎ সাংসদদের সম্পৃক্ত করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ‘সদিচ্ছা’ নানা প্রশ্নের উদ্রেক করেছে। এ খবরে আপাতদৃষ্টিতে একটা গণমুখী ভাব থাকলেও প্রকৃতপক্ষে এর কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন না উঠে পারে না। কারণ বাজার নিয়ন্ত্রণ নির্বাহী বিভাগের কাজ। সেই কাজ যেখানে প্রায় ষোলোআনাই নৈবচ নৈবচ, সেখানে রাজনৈতিক তদারকি কী সুফল দেবে? বাজারের ওপর ন্যূনতম নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় জনপ্রশাসন তথা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কোনো উদ্যোগ ভোক্তাগোষ্ঠীর গোচরীভূত হয়নি। ভোক্তার অধিকার কথাটি এখন পর্যন্ত বলা চলে কাগজ-কলমে সীমাবদ্ধ। সংসদীয় কমিটির আগে দেখা উচিত, বাজার শাসনের প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও লোকবল আছে কি না এবং তা স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারছে কি না।
সময়ে সময়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তরফে নানাবিধ কড়াকড়ির কথা শুনি। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা অর্থহীন বাগাড়ম্বর বৈ কিছু নয়। এখন পর্যন্ত কোনো ‘অসাধু’ রুই-কাতলার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের কোনো তথ্য জানা যায় না। বিগত জোট সরকারের আমলে ‘সিন্ডিকেট’ শব্দটি ছিল বহুল উচ্চারিত শব্দ। বর্তমান আমলে সিন্ডিকেট কথাটির জোশ নেই। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে দেশের বাজার ব্যবস্থাপনা এখন সিন্ডিকেটের অভিশাপমুক্ত হয়েছে। বরং অনেকে এই ভেবে বিস্মিত যে, সেই সিন্ডিকেট গেল কোথায়? তাদের কোনো একজনকেও কি সরকার বিচারের কাঠগড়ায় সোপর্দ করতে সক্ষম হয়েছে? সংসদীয় কমিটি কি আমাদের এর কারণ জানাবে?
বহু বছরের আন্দোলনের পর ২০০৯ সালে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন পাস হলো। কিন্তু সেই আইনের বাস্তবায়ন ও প্রয়োগ নেই। ভোক্তা অধিকার প্রতিষ্ঠায় আইনকানুনের আকাল কখনো ছিল না। আকাল ছিল সরকারের সদিচ্ছার। মুক্তবাজার অর্থনীতি মানে যত ইচ্ছা তত মুনাফা করার অধিকার নয়। পরিহাস হলো, ব্যবসায়ীপ্রধান সংসদ হওয়া এবং বাজার প্রশাসনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বাণিজ্যস্বার্থ প্রকট থাকার কারণে বাজার ব্যবস্থাপনা দাঁড়াতেই পারছে না। সুতরাং সাংসদ নয়, সর্বাগ্রে চাই ভোক্তা অধিকার আইনের বাস্তবায়ন এবং সে কাজ করতে হবে প্রশাসনকেই। সংসদীয় কমিটির উচিত হবে এই বিষয়টির তদারক আগে নিশ্চিত করা।

No comments

Powered by Blogger.