রাগবির ভিলিওন ক্রিকেটার

বার্নি মোহাম্মদ দলের যাঁদের মধ্যে সম্ভাবনার আলো দেখতে পাচ্ছেন, সেখানে এক নম্বরে আছেন হার্ডাস ভিলিওন। যেমন তাঁর বলের গতি, তেমন খেলার প্রতি একাগ্রতা। দক্ষিণ আফ্রিকা একাডেমি দলের কোচ প্রত্যয়ন করলেন, ‘জাতীয় দলে যাওয়ার আগে উদীয়মান দল এবং “এ” দলে ভালো খেলতে হবে। আমার বিশ্বাস, সবগুলো ধাপই ও পেরিয়ে যাবে দ্রুত। হার্ডাসকে (ভিলিওন) জোর করেও বিশ্রাম দেওয়া যায় না।’
যদি কখনো বড় তারকা হন, হার্ডাস ভিলিওন হয়ে উঠতে পারেন রূপকথার চরিত্র। হওয়ার কথা ছিল রাগবি খেলোয়াড়, হলেন কিনা ক্রিকেটার! দিনে দিনে যত ভালো ক্রিকেটার হবেন ততই বিস্ময়টা বাড়বে। ভিলিওন রাগবি খেললে কী জিনিসটাই না হারাত ক্রিকেট!
প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে ৩৩ ম্যাচ খেলে ১২৪ উইকেট। সেরা বোলিং এক ইনিংসে ১০৫ রান দিয়ে ৮ উইকেট। ম্যাচে ১০ উইকেট নিয়েছেন দুবার। দক্ষিণ আফ্রিকা একাডেমি দলের হয়ে বাংলাদেশ সফরে এসেও ২২ বছর বয়সী ভিলিওন নিজেকে চেনাচ্ছেন। দুটি চারদিনের ম্যাচ ও তিনটি একদিনের ম্যাচ মিলে নিয়েছেন ২৩ উইকেট। টি-টোয়েন্টি ম্যাচ দুটি তো এখনো বাকি।
বাবা ভালো রাগবি খেলতেন। ভাই খেলেন দক্ষিণ আফ্রিকার পেশাদার রাগবি লিগের দল লায়ন্সে। আরেক ভাই খেলেন হকি। ছোটবেলায় ভিলিওনও রাগবিতেই বেশি ভালো ছিলেন। এই যখন অবস্থা, ক্যারিয়ারের পথরেখা ঠিক করতে শুরুতেই পড়ে গেলেন সমস্যায়। ‘স্কুলে পড়ার সময়ই কঠিন সিদ্ধান্তটা নিতে হয়েছে—আমি রাগবি খেলব, না ক্রিকেট? পরিবারের সবাই এটা নিয়ে আলোচনায় বসল, আমার আসলে কী খেলা উচিত’—কাল টিম হোটেলে বসে কৈশোরে ফিরে যাচ্ছিলেন ভিলিওন। রাগবিতে ইনজুরির আশঙ্কা বেশি। আর ক্রিকেটার হলে ক্যারিয়ার লম্বা করা যায়, পারিবারিক বৈঠকে এসব যুক্তিতর্কের পর সিদ্ধান্ত হলো ভিলিওন ক্রিকেটই খেলবে। সময়ের পরিক্রমায় ভিলিওনের এখন মনে হচ্ছে, সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল, ‘মনে হচ্ছে, সঠিক সিদ্ধান্তই নেওয়া হয়েছে। সামনে অনেক পথ, তবে এই পর্যন্ত আসতে পেরেও আমি সন্তুষ্ট।’
টেনিস বল কিনে আনতেন বাবা। তাতে টেপ লাগিয়ে ক্রিকেটে হাতেখড়ি বাড়ির আঙিনায়। তবে পুরোদস্তুর ক্রিকেটার হয়ে ওঠার পেছনে কিছু মানুষের কাছে বিশেষ কৃতজ্ঞ ভিলিওন, ‘সামনে এগোনোর জন্য সঠিক লোক পেয়েছিলাম আমি। ফ্যানি ডি ভিলিয়ার্স বোলিংয়ের টেকনিক থেকে শুরু করে ক্রিকেটীয় সবকিছুতেই আমাকে সাহায্য করেছেন। এরপর রিচার্ড পাইবাসের সান্নিধ্যেও অনেক কিছু শিখেছি।’
চলতি একাডেমি সিরিজে বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ভয় ধরানো নাম হার্ডাস ভিলিওন। জিপি-বিসিবি একাডেমি দলের অধিনায়ক মোহাম্মদ মিঠুনের অনুমান, বলের গতি ঘণ্টায় ১৪০-এর কম না। কিন্তু ক্রিকইনফোর প্রোফাইলে যে বলা আছে, তিনি ডানহাতি মিডিয়াম ফাস্ট বোলার! প্রসঙ্গটা তুলতেই মৃদু হেসে প্রতিবাদ জানালেন ভিলিওন, ‘প্রোফাইলে ভুল আছে। ১৪০-১৪৫ কিমি গতিতে যেহেতু বল করি, নিজেকে ফাস্ট বোলারই ভাবি। অন্যরাও বলে মাঠে নাকি আমি খুবই আক্রমণাত্মক। তবে মাঠের বাইরে আমি নিপাট ভদ্রলোক।’
পুমালাঙ্গার উইটব্যাঙ্কে জন্ম হলেও দুই বছর বয়সে পরিবারের সঙ্গে চলে আসেন জোহানেসবার্গে। এই শহরেরই আলবাটসনে বেড়ে ওঠা ভিলিওনের। তবে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ক্রিকেটের জন্য তৈরি হতে স্কুলে পড়ার শেষ বছরে চলে যান জোহানেসবার্গের প্রতিবেশী শহর প্রিটোরিয়ায়, ফ্যানি ডি ভিলিয়ার্সের কাছে। ঠিক যে উদ্দেশ্য নিয়ে প্রিটোরিয়ায় আসা, সেটা পূরণ হয়নি। তবে ভিলিওন ক্রিকেটার হওয়ার দরজাটা খুঁজে পান এখানেই, ‘মূল উদ্দেশ্য ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার স্কুল ক্রিকেটে খেলা। সেটা পারিনি এবং তাতে কিছুটা হতাশও হয়ে পড়ি। তবে সবকিছুর পেছনেই বোধহয় কোনো না-কোনো কারণ থাকে। আমি ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে সুযোগ পেলাম এবং সেখান থেকেই একাডেমি দলে এলাম।’ সিঁড়িটা যখন পায়ের তলায়, ছাদে ওঠার স্বপ্ন দেখাই যায়। ভিলিওনের দৃষ্টি এখন তাই উদীয়মান বা ‘এ’ দল ছাপিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা জাতীয় দলে।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কিংবা আইপিএলের মতো অ্যাকুয়ারিয়াম ক্রিকেট, অলরাউন্ডারদের জয়জয়কার সবখানেই। ভিলিওনও শুনতে পাচ্ছেন এই জয়ধ্বনি, ‘আমি এমন একজন ক্রিকেটার হতে চাই, যে বোলিংয়ের পাশাপাশি ভালো ব্যাটিংও করতে পারে। তাতে দক্ষিণ আফ্রিকা দলই বলুন অথবা আইপিএল—সবখানেই সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।’
একসময় ম্যালকম মার্শালের বোলিং ভালো লাগলেও আদর্শ মানেন অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফকে। কিছুটা বোলিং অ্যাকশনে মিল থাকার কারণে, বাকিটা হয়তো ফ্লিনটফ অলরাউন্ডার বলেই।

No comments

Powered by Blogger.