তিন ব্যাংক সাত মাসে এক টাকাও কৃষিঋণ দেয়নি

চলতি ২০১০-১১ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) তিনটি ব্যাংক এক টাকাও কৃষিঋণ বিতরণ করেনি। আর নয়টি ব্যাংক এ সময়কালে খুব সামান্য কৃষিঋণ বিতরণ করেছে।
এ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে গতকাল সোমবার ব্যাংকগুলোকে কৃষি খাতে ঋণ বিতরণে উৎসাহিত করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর মুরশিদ কুলি খান বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।
সূত্র জানায়, কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলোন, ইস্টার্ন ব্যাংক ও আইসিবি ইসলামী ব্যাংক চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে কোনো কৃষিঋণ দেয়নি।
অথচ এই ব্যাংকগুলোর এ বছর কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা যথাক্রমে ২৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা, ৩০ কোটি টাকা ও ১০ কোটি টাকা।
অন্যদিকে নয়টি ব্যাংক এই সময়ে সামান্য কৃষিঋণ বিতরণ করেছে। এর মধ্যে দি সিটি ব্যাংকের ঋণ বিতরণের বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১১১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। কিন্তু ব্যাংকটি সাত মাসে মাত্র এক কোটি দুই লাখ টাকা বিতরণ করে। পূবালী ব্যাংক বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা ২২৭ কোটি টাকার বিপরীতে বিতরণ করেছে মাত্র আট কোটি ৭২ লাখ টাকা।
প্রতিরক্ষা বাহিনীর ট্রাস্ট ব্যাংক ১৫০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে সাত মাসে আট কোটি ৬৬ লাখ টাকা; মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ২০০ কোটি টাকার বিপরীতে ১৭ কোটি ২৯ লাখ টাকা; মার্কেন্টাইল ব্যাংক ৪৭ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ছয় কোটি চার লাখ টাকা; শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক ৬৫ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ছয় কোটি ৮৬ লাখ টাকা; সাউথইস্ট ব্যাংক ৪০ কোটি টাকা বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে চার কোটি দুই লাখ টাকা; বেসিক ব্যাংক ৬৩ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ১৪ কোটি আট লাখ টাকা এবং বিদেশি উরি ব্যাংকের এক কোটি টাকা বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে সাত মাসে ব্যাংকটি ২৪ লাখ টাকার ঋণ বিতরণ করেছে।
চলতি অর্থবছরে দেশের ব্যাংকগুলোর কৃষি খাতে মোট ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১২ হাজার ৬১৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে এই ১২ ব্যাংক বাদে বাকি ব্যাংকগুলোতে কৃষিঋণ বিতরণের হার অত্যন্ত সাফল্যজনক। জানা গেছে, অর্থবছরের আট মাসে এখাতে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় বিতরণ করা ঋণের হার ৬৩ শতাংশের বেশি।
কৃষি ও পল্লি এলাকায় ঋণ বিতরণে সব ব্যাংকের দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও সম্পৃক্ততা নেই। যে কারণে ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অংশীদারের ভিত্তিতে এই ঋণ বিতরণের সুযোগ তৈরি করা হয়। কিন্তু সাত মাসে ঋণ বিতরণে উল্লিখিত ব্যাংকগুলোর অনগ্রসরতায় বাংলাদেশ ব্যাংক অসন্তুষ্ট। এ ঋণ বিতরণ কার্যক্রম পর্যালোচনায় দুই মাস অন্তর বৈঠকও করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাতেও তেমন অগ্রগতি হয়নি এই ১২ ব্যাংকের।
সূত্র জানায়, গতকালের বৈঠকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে ব্যাংকগুলোকে বাকি সময়ে সাফল্যজনক পর্যায়ে ঋণ বিতরণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, অগ্রাধিকার ও উৎপাদন খাত হিসেবে এখাতে ঋণ বিতরণ করতে হবে সব ব্যাংককে।
বৈঠকে ব্যাংকগুলোর শীর্ষ নির্বাহীরা ছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক সুধীর চন্দ্র দাস, কৃষিঋণ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক এস এম মনিরুজ্জামান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.