তুষারপাতের হিম আমেজে ইউরোপে বড়দিন

ইউরোপজুড়ে আজ ২৫ ডিসেম্বর খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব বড়দিন উদ্যাপিত হচ্ছে। তবে প্রচণ্ড তুষারপাতের কারণে সড়ক, রেল ও আকাশপথে যাতায়াত বিঘ্নিত হওয়ায় ইউরোপে উৎসবের ঔজ্জ্বল্য যেন অনেকটাই ম্লান হয়ে গেছে।
এ মাসের শুরু থেকে ইউরোপের বিভিন্ন শহরে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। শহরগুলোর কেন্দ্রে ক্রিসমাস ট্রি বসানো হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে বসেছে বড়দিনের বাজার। বাড়িতে বাড়িতে কাচের জানালায় শোভা পাচ্ছে বর্ণিল আলোকসজ্জা। গির্জাগুলো ধুয়ে-মুছে বিশেষভাবে সাজানো হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মগুরু পোপ ষোড়শ বেনেডিক্ট রোমের সেন্ট পিটার্স গির্জা থেকে বিশেষ প্রার্থনায় পৃথিবীজুড়ে যুদ্ধবিগ্রহ এড়িয়ে শান্তির কথা বলেছেন। একই কথা বলেছেন ইউরোপের প্রোটেস্ট্যান্ট সম্প্রদায় এবং ইউরোপের নানা দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানেরা।
এদিকে তীব্র তুষারপাতের কারণে ফ্রান্সের প্রধান বিমানবন্দরের প্রায় ৪০০টি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। এ কারণে সেখানে গতকাল শুক্রবার কমপক্ষে দুই হাজার যাত্রী আটকা পড়ে ছিল। ডেনমার্কে রাস্তা থেকে তুষার সরানোর কাজে নিয়োজিত জরুরি সেবা সংস্থাকে সহায়তা করতে সেখানে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। আয়ারল্যান্ডের ডাবলিন বিমানবন্দর গত বৃহস্পতিবার কিছুক্ষণের জন্য অচল ছিল। জার্মানিতে তুষারপাতের কারণে রাস্তাঘাট প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। দূরপাল্লার গাড়ি ও ট্রেন চলাচলে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ব্রিটেনের একটি বড় অংশ জুড়ে গাড়ি চলাচলে খুব অসুবিধা হচ্ছে। স্কটল্যান্ড, ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের রেল চলাচলের সময়সূচি পরিবর্তন করা হয়েছে। অনেক ট্রেন ছাড়তে দেরি হয়। কিছু ট্রেনের যাত্রা বাতিল করা হয়। গত সপ্তাহে তুষারপাতের কারণে লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে বিমান ওঠানামা কয়েক ঘণ্টার জন্য বন্ধ ছিল। ওই সময় সেখানে হাজার হাজার যাত্রী আটকা পড়েছিল। তবে গতকাল সেখানে বিমানের ওঠানামা প্রায় স্বাভাবিক ছিল।
আবহাওয়া কর্মকর্তারা বলেছেন, গতকাল শুক্রবার রাতে মধ্য স্কটল্যান্ডে তাপমাত্রা ছিল হিমাঙ্কের নিচে ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
ইংল্যান্ডের রেল সংস্থা ফার্স্ট ক্যাপিটাল কানেক্ট, চিলটার্ন ও মার্সিরেইল বড়দিনে (আজ) তাদের যাত্রীসেবা ২৫ শতাংশ কমাতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইংল্যান্ডের অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রেন অপারেটিং কোম্পানিজের (অ্যাটোক) একজন মুখপাত্র বলেন, বড়দিনের কারণে ভিড় বেশি থাকায় অনেক যাত্রী সময়মতো বাড়ি যেতে পারছেন না বলে তাঁরা দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
ইউরোপের সর্ববৃহৎ শপিং মল বার্মিংহামের বুলরিং শপিং সেন্টার থেকে বড়দিনের উপহার সামগ্রী কিনতে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় দুই লাখ লোক ইংল্যান্ড এসেছেন। একই উদ্দেশ্যে শেফিল্ডের মিডোহলে এসেছেন আরও প্রায় দেড় লাখ লোক। বিমান ও রেলপথে অচলাবস্থার কারণে তাঁদের অনেকেই বাড়ি ফিরে স্বজনদের সঙ্গে বড়দিনের উৎসব উদ্যাপন করতে পারবেন না।
গতকাল ডেনমার্কের অধিকাংশ এলাকা প্রায় ছয় ইঞ্চি তুষারের নিচে ঢাকা পড়ে যায়। সে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে জরুরি সেবাকর্মীদের সাহায্য করতে সেনাবাহিনী মাঠে নেমেছে। ফ্রান্সের উত্তরাঞ্চলে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। জার্মান রেলের বার্লিন হ্যানোডার রেলপথে দ্রুতগামী ইন্টারসিটি এক্সপ্রেসের তিনটি ট্রেন মাঝপথে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এই পথে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
বেথেলহেমে মহা আয়োজন: খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের বিশ্বাসমতে, যিশুখ্রিষ্টের জন্মস্থান পশ্চিম তীরের বেথেলহেমে অন্য বছরগুলোর মতো এ বছরও জাঁকজমকভাবে বড়দিন উৎসব উদ্যাপিত হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, এশিয়া, ল্যাটিন আমেরিকা এবং আফ্রিকা থেকে লক্ষাধিক পর্যটক বেথেলহেমে এসেছেন। মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে শ্রদ্ধাভাজন ক্যাথলিক বিশপ ফুয়াদ তাওয়াল বেথেলহেমে বিশ্বশান্তি কামনা করে বিশেষ প্রার্থনা করবেন বলে জানা গেছে।
মুম্বাইয়ে সতর্কতা: বড়দিন সামনে রেখে ভারতের মুম্বাইয়ে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। কর্মকর্তারা বলেছেন, ২০০৮ সালে মুম্বাইয়ে যে গ্রুপটি হামলা চালিয়েছিল, সেই গ্রুপের চার সদস্যকে ধরতে তাঁরা বিশেষ অভিযান চালাচ্ছেন। তাঁরা বলেছেন, বড়দিনে তারা হামলা চালাতে পারে বলে তাঁদের কাছে খবর এসেছে।
আফগানিস্তানে পশ্চিমা সেনাদের বড়দিন: আফগানিস্তানে যুদ্ধরত যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশের সেনাসদস্যরা নিজ নিজ ঘাঁটিতে বড়দিন উৎসব উদ্যাপন করছেন। মার্কিন নৌবাহিনীর একজন কর্মকর্তা বলেছেন, ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য বজায় রেখে তাঁরা আফগানিস্তানে এ উৎসব পালন করবেন।

No comments

Powered by Blogger.