তাই বলে ১০ উইকেটে হার!

পাকিস্তানি মেয়েদের সামনে বাংলাদেশের মেয়েরা। সার বেঁধে দুই দলের খেলোয়াড়দের নিয়ে যাওয়া হলো পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে। পাকিস্তানি মেয়েরা গলায় পরল সোনার পদক। বাংলাদেশের মেয়েদের গলায় রুপা। এত দিন দেখে আসা স্বপ্নের ঠিক বিপরীত দৃশ্য।
এশিয়ান গেমসে এবারই অন্তর্ভুক্ত ক্রিকেটে ভারত ও শ্রীলঙ্কা দল পাঠায়নি। বাংলাদেশ সোনার স্বপ্ন নিয়েই প্রতিযোগিতায় নেমেছে। এর আগে পাকিস্তানকে একবার হারানোর সুবাদে স্বপ্ন দেখাটা অমূলকও ছিল না। কিন্তু গুয়াংজুতে বাংলাদেশ মহিলা ক্রিকেট দলকে হতাশায় মুড়ে দিল কালকের ফাইনাল।
এশিয়াডে রুপা জেতা বাংলাদেশের জন্য বড় অর্জন। কিন্তু মহিলা ক্রিকেট দল ‘বিশাল অর্জনের’ তৃপ্তিতে কি আচ্ছন্ন হতে পারছে? সোনা জেতার সুযোগ এটিই প্রথম এবং এটিই শেষ! আগামী এশিয়ান গেমসে ভারত ও শ্রীলঙ্কার উপস্থিতিতে সোনার স্বপ্ন দেখতেই তো অনেক সাহস লাগবে। আজকের শিক্ষানবিশ চীন-জাপানও যে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেবে না, কে বলতে পারে!
ভবিষ্যতের কথা তোলা থাক, চোখ ফেরানো যাক কালকের ফাইনালে। পাকিস্তানের বিপক্ষে ২০ ওভারে মাত্র ৯২ রান তুলেই বাংলাদেশকে পেছনের পায়ে চলে যেতে হয়েছে। তাই বলে ১০ উইকেটের বিশাল পরাজয় আসবে এরপর? লজ্জা বলা ঠিক না হলেও পরাজয়টা বিব্রতকর তো বটেই। টুর্নামেন্টের অন্যতম ফেবারিটের মর্যাদা পাওয়া দল ফাইনালে এমন বেহাল হলো কেন? অধিনায়ক সালমা খাতুন তো বলেছেনই, সহ-অধিনায়ক পান্না ঘোষও একই কারণ দাঁড় করালেন, ‘ব্যাটিংটা ভালো হয়নি। ওখানেই আমরা হেরে গেছি।’
একটি সূত্রের খবর, ফাইনালের দল নির্বাচন নিয়ে ঠান্ডা লড়াই ছিল কোচ-কর্তাদের মধ্যে। নিজেদের পছন্দের খেলোয়াড় খেলানোর জন্য কর্তাদের চাপ ছিল বলে ওই সূত্রের দাবি। এ কারণেই কিনা আগের তিন ম্যাচে দলের বাইরে থাকা উদ্বোধনী ব্যাটার আয়েশা এদিন একাদশে। এসব নিয়ে মহিলা ক্রিকেট দলের ম্যানেজার নাকি কান্নাকাটিও করেছেন।
পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের প্রস্তুতিকালে মাঠের এক পাশে বাংলাদেশ শিবিরে জটলার মধ্যে রেদোয়ান আহমেদের কথাটা কানে বাজল। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক ও মহিলা শাখার প্রধান পেছনে তাকিয়ে মোহাম্মদ আশরাফুলকে দেখিয়ে হাসতে হাসতে বললেন, ‘অসুবিধা নেই। অ্যাশ সোনা এনে দেবে।’ মেয়েদের দলের কোচ দীপু রায় চৌধুরীও একই কথা বলছিলেন বারবার, ‘মেয়েরা পারল না। অ্যাশরা পারবে। কী অ্যাশ, পারবে না?’
অ্যাশ মানে আশরাফুল মনের কথা হয়তো গোপনই রেখেছেন। তবে মুখে ছিল প্রত্যয়, ‘ইনশাআল্লাহ, আমরা চেষ্টা করব।’ ২৩ নভেম্বর প্রথম খেলবে আশরাফুলের দল, কাল সকালে গুয়াংজু এসে দুপুরে আশরাফুল একাই এলেন মহিলা ক্রিকেটে বাংলাদেশ-পাকিস্তান ম্যাচ দেখতে। কেমন দেখলেন? কেন ১০ উইকেটে উড়ে গেল বাংলাদেশ দল? আশরাফুল সালমার দলের ব্যর্থতার চেয়ে পাকিস্তানের মেয়েদের কৃতিত্বকেই দেখছেন বড় করে, ‘ওরা অনেক বেটার। ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং সব বিভাগেই বাংলাদেশের মেয়েদের পেছনে ফেলেছে।’
তাহলে এত দিনের দেখা স্বপ্ন ও সামর্থ্যের মধ্যে বিস্তর ফারাক ছিল! বাংলাদেশ কোচ দীপু রায় চৌধুরী কিন্তু রুপা জিতেই তাঁর সন্তুষ্টি জানান দিয়ে যাচ্ছিলেন বারবার, ‘টেস্ট খেলুড়ে দেশ হিসেবে টেস্ট না খেলা দেশের সঙ্গে ব্যবধান তো রাখতে পেরেছি আমরা। আমাদের মেয়েদের অভিজ্ঞতা কম। আমি বলব, এত কম অভিজ্ঞতা নিয়ে আমরা খারাপ করিনি।’
এশিয়াডে রুপা জেতা অবশ্যই সুসংবাদ বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের জন্য। কিন্তু ভারত, শ্রীলঙ্কা না থাকায় বাংলাদেশ ছাড়া আর কারও পক্ষে রুপা জেতা অসম্ভবই ছিল। চীন, হংকং, জাপানের মেয়েরা এখনো ব্যাটই ধরতে পারে না ঠিকমতো। বল ধরে কই মাছের মতো। একরকম ফাঁকা মঞ্চেই বাংলাদেশ সোনার সুযোগ হারাল। নানা সমস্যায় জর্জরিত পাকিস্তানি মেয়েরা ক্রিকেটীয় চর্চায় বাংলাদেশের চেয়ে খুব একটা এগিয়ে নেই।
অধিনায়ক সানা মীরের কথা, ‘আমাদের দেশে অনেক সমস্যা। ছেলেদের ক্রিকেটই ঠিকমতো চলছে না, আর তো মেয়েদের ক্রিকেট। তবে এই সোনা জয় আমাদের মানসিকভাবে অনেক উদ্বুদ্ধ করবে।’
পাকিস্তান অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জেনারেল আরিফ হাসান গ্যালারিতে বসে কিছুক্ষণ পরপরই গোটা স্টেডিয়াম কাঁপিয়ে তুলেছেন ‘পাকিস্তান, পাকিস্তান’ আওয়াজ তুলে। বাংলাদেশ শিবিরে কোনো পতাকা দেখা যায়নি। মাঠের বাইরেও বাংলাদেশ হেরে ছিল!

No comments

Powered by Blogger.