ব্রাদার্সে বিদেশি ফুটবলারের হাট

দুটি আফ্রিকান দল প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ম্যাচ খেলছে মনে করে ভুল করতে পারতেন অনেকে। আসলে ব্যাপারটা তা ছিল না। দুটি দল আফ্রিকান হলেও ম্যাচ খেলার উদ্দেশ্যটা ভিন্ন। মাঠের পাশে বসে থাকা কর্মকর্তাদের নোট বুকে নাম তোলার প্রতিযোগিতায় দারুণ ব্যস্ত তাঁরা!
গোপীবাগে ব্রাদার্স মাঠে কাল বিকেলের ছবি। ২১ জন বিদেশি ফুটবলার দুই ভাগে ভাগ হয়ে খেলছেন। ১৯ জনই আফ্রিকান, দুজন ব্রাজিলিয়ান। বাঁশি হাতে রেফারির ভূমিকায় ব্রাদার্স কোচ খন্দকার ওয়াসিম ইকবাল। টিপটিপ বৃষ্টির মধ্যে খেলা চলছে, এখান থেকেই ব্রাদার্স বেছে নেবে এ মৌসুমে তাদের বিদেশি খেলোয়াড়—ব্রাদার্সের গোটা টেন্ট বেশ উত্তেজিত।
আর্থিক সংকটে জেরবার ব্রাদার্স গত মৌসুমে উন্মুক্ত ট্রায়াল ডেকে স্থানীয় খেলোয়াড় বাছাই করেছিল। এবার বিদেশি ফুটবলাদের ট্রায়াল—ব্রাদার্স এখন ‘ট্রায়াল ক্লাব’ হিসেবে পরিচিতি পেতে পারে। একসঙ্গে একই দিনে এত বিদেশি ফুটবলারের ট্রায়াল নেওয়ার দৃষ্টান্ত বাংলাদেশে এই প্রথম। কর্মকর্তারা তো এর জন্য ‘কৃতিত্ব’ই দাবি করেছেন।
সব দলের অনুশীলনেই ৪-৫ জন করে বিদেশি (মূলত আফ্রিকান) ফুটবলার পরীক্ষা দিচ্ছেন। তারকায় ঠাসা নবাগত দল শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবে ২৯ সেপ্টেম্বর যোগ দিচ্ছেন চার সার্বিয়ান। কিন্তু ব্রাদার্সের ‘রেকর্ড’ ভাঙার প্রতিযোগিতায় আর কোনো ক্লাব নামবে বলে মনে হচ্ছে না।
শুধু ২১ জন নন, আরও আট বিদেশি আসার কথার জানালেন এক কর্মকর্তা। ম্যানেজার আমের খান অবশ্য বললেন, ‘ওই আটজনকে আনার প্রক্রিয়া শেষ হলেও সম্ভবত তাদের আনার প্রয়োজন হবে না। এই ২১ জনের মধ্যেই পছন্দ হয়ে যাবে আশা করি।’
২১ জনের ৭ জন করে ক্যামেরুন ও ঘানার। ৫ জন নাইজেরিয়ার, ২ জন ব্রাজিলের। এবার ৫ জন বিদেশি নেওয়ার সুযোগ আছে প্রতি দলের। পছন্দ হওয়া খেলোয়াড়দের চুক্তিবদ্ধ করবে ক্লাব এবং শুধু তাঁদেরই বিমান খরচ দেওয়া হবে। অন্যদের জন্য আসার খরচটা খেলোয়াড়দের নিজস্ব বিনিয়োগই। থাকা-খাওয়ার খরচ আমন্ত্রিত ক্লাবের।
ট্রায়াল দেখে বিদেশি ফুটবলার নেওয়ার রীতি চালু হয়েছে কয়েক বছর আগে। একসময় বিদেশে গিয়ে খেলোয়াড় পছন্দ করতেন ক্লাব কর্মকর্তারা। এখন ফিফা এজেন্ট আছে, তারাই খেলোয়াড় সরবরাহ করে। কিন্তু ট্রায়াল দিতে আসা খেলোয়াড়েরা ভালোমানের হলে তো ট্রায়াল দিতেন না—এমন অভিমত আছে ফুটবল অঙ্গনে।
ব্রাদার্সের বিদেশি খেলোয়াড় বাছাইয়ে তিন নির্বাচকের অন্যতম জাতীয় দলের সাবেক কোচ হাসানুজ্জান খান (বাবলু) গোটা ব্যাপারটাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন, ‘এত খেলোয়াড় থেকে আমরা পছন্দ করে নিচ্ছি, এটা ক্লাবের জন্য বড় সুবিধা। প্রথম দিনে একজন ব্রাজিলিয়ানসহ তিনজনকে ভালোই মনে হয়েছে আমার।’
এই প্রক্রিয়াকে সমর্থন করলেন আরেক নির্বাচক শহিদউদ্দিন আহমেদ সেলিম। তাঁর কথা, ‘এটা অভিনব পদ্ধতি। ঝাঁকে ঝাঁকে বিদেশি ফুটবলার আসছে, ট্রায়াল দিচ্ছে—বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবলের জন্য খুবই ভালো খবর এটা। এতে লিগে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়বে।’ আরও দু-এক দিন ট্রায়াল দেখে তবেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানালেন আরেক নির্বাচক আবু নোমান (নান্নু)। কোচ ওয়াসিম ইকবালও আরও ট্রায়াল দেখার কথা বললেন, তবে প্রথম দিনে তাঁরও পছন্দ হয়েছে তিন-চারজনকে।
নতুন ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সোজা হয়ে উঠে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছে ব্রাদার্স। ক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক সৈয়দ মাসুম আলী বলছিলেন, ‘এবার আমরা ভালো করার আশা রাখি।’ সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমেদের (মহি) দাবি, ‘ব্রাদার্স এবার ব্রাদার্সের মতোই মাঠে থাকবে। এ জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছুই করছি আমরা।’ বিদেশি খেলোয়াড়দের অভিনব ট্রায়ালটা তো তারই অংশ।

No comments

Powered by Blogger.