সৌদি আরবে শিক্ষিত বেকারদেও নজিরবিহীন বিক্ষোভ

সৌদি আরবে প্রায় ২০০ স্নাতক ডিগ্রিধারী বেকার যুবক চাকরির দাবিতে রাজধানী রিয়াদে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন। গত শনিবার তাঁরা সে দেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেন। রাজতন্ত্রের শাসনাধীন সৌদি আরবে কোনো ধরনের বিক্ষোভ সাধারণত বরদাশত করা হয় না। এ কারণে তাঁদের এ বিক্ষোভকে নজিরবিহীন ঘটনা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সৌদি কর্মকর্তাদের সরবরাহ করা তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী, গত বছর সে দেশে বেকারত্বের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাড়ে ১০ শতাংশ। এ অবস্থায় সে দেশের দ্রুত বর্ধনশীল এক কোটি ৮০ লাখ সৌদি নাগরিকের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা সে দেশের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে।
গতকাল রোববার সৌদি পত্রপত্রিকায় বিক্ষোভকারীদের যে ছবি ছাপা হয়েছে, তাতে তাঁদের বিভিন্ন স্লোগান লেখা প্লাকার্ড বহন করতে দেখা গেছে। এগুলোর মধ্যে একটি স্লোগান ছিল, ‘যথেষ্ট অবিচার হয়েছে! আর না!’
বিভিন্ন তথ্যে জানা গেছে, সৌদি আরবে স্থানীয় ও বিদেশি মিলে বর্তমানে দুই কোটি ৭১ লাখ লোক রয়েছে। সে দেশের সরকার সেখানকার বাসিন্দাদের যে সামাজিক সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকে, তার মান পার্শ্ববর্তী দেশ কুয়েত ও কাতার থেকে অনেক নিম্নস্তরের। সেখানে বহু শিক্ষিত লোককে বর্তমানে চাকরি না পেয়ে ট্যাক্সি ড্রাইভার ও বেসরকারি নিরাপত্তারক্ষীর মতো ছোট ছোট কাজ করতে হচ্ছে।
তবে বিশ্বে ধনী দেশগুলোর একটি বলে পরিচিত সৌদি আরব কখনোই তার বেকারত্বের হিসাব প্রকাশ করে না। সর্ববৃহৎ তেল উৎপাদনকারী দেশ হওয়া সত্ত্বেও সৌদি আরব তার স্থানীয় সব শিক্ষিত ব্যক্তির চাকরি নিশ্চিত করতে না পারার মূল কারণ হিসেবে বিশ্লেষকেরা তাদের পশ্চাৎপদ শিক্ষাব্যবস্থাকে দায়ী করেছেন। তাঁরা বলেছেন, সেখানকার শিক্ষাক্রমে ব্যবহারিক দক্ষতার চেয়ে ধর্মীয় বিষয়াবলিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। ফলে একটি বিশাল তেল উৎপাদক দেশের জন্য যে দক্ষতাসম্পন্ন লোক দরকার, সেখানকার প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা সে অনুযায়ী মানসম্পন্ন মানবসম্পদ সরবরাহ করতে পারছে না।
সৌদি দৈনিক আল হায়াতকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে গত শনিবারের বিক্ষোভকারীদের মুখপাত্র নাঈফ আল তামিমি বলেছেন, তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জন করার পরও কাজ পাচ্ছেন না।
তিনি বলেন, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগ প্রয়োজন হলেও মন্ত্রণালয় তাঁদের চাকরি দিতে আগ্রহী হচ্ছে না। তাঁরা অবিলম্বে তাঁদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার জন্য মন্ত্রণালয়ের কাছে দাবি তোলেন। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, তারা শিক্ষক নিয়োগের ব্যাপারে সরকারের কাছে সুপারিশ করেছে। কিন্তু নিয়োগদানের ক্ষমতা তাদের হাতে নেই।
২০০৫ সাল থেকেই সৌদি বাদশাহ আবদুল্লাহ সে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ও শরিয়া আইনে সংস্কার আনার চেষ্টা করছেন। তবে ধর্মীয় নেতারা তাঁর সেসব উদ্যোগে সমর্থন দিতে চাইছেন না। সৌদি কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন, ভবিষ্যতে শিক্ষিত বেকারেরা সংঘাতমূলক পথ বেছে নিতে পারেন।

No comments

Powered by Blogger.